কামরুল হাসান দর্পণ : আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতির মাঠ বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে। নির্বাচন কমিশন তার রোডম্যাপ অনুযায়ী সংলাপ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে সংলাপ শেষ করেছে। আগামী ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে এবং এ মাসের শেষের দিকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর তালিকার নিচের দিকের ৬টি দলের সাথে সংলাপ শুরু করবে। বড় দলগুলোর সাথে ১০ সেপ্টেম্বর থেকে সংলাপে বসবে। একদিকে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ কার্যক্রম চলছে, অন্যদিকে রাজনীতিতে দুই জোটের বাইরে ব্যক্তি নির্ভর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কয়েকটি দলের মধ্যে নতুন জোট তৈরি নিয়ে ঘরোয়া বৈঠক শুরু হয়েছে। বিশ্লেষকরা টক শো ও পত্র-পত্রিকায় এসব ইস্যু নিয়ে বিশ্লেষণ করছেন। আগামী নির্বাচন কেমন হবে, সব দল অংশগ্রহণ করবে কিনা, অংশগ্রহণ না করলে কী হবে, নির্বাচন কমিশনকে কী করতে হবে, নতুন জোট তৈরি হলে তাতে কী প্রভাব পড়বে ইত্যাদি নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। নির্বাচনের দেড় বছর বাকি থাকতেই রাজনীতির মাঠ সরব হয়ে উঠেছে। বলা বাহুল্য, একটি সরকারের মেয়াদ শেষে নতুন একটি জাতীয় নির্বাচন হবে, এটাই স্বাভাবিক। ক্ষমতাসীন দল থেকে শুরু করে বিরোধী দলগুলো তাতে অংশগ্রহণ করবে, এটাও স্বাভাবিক। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জাতীয় নির্বাচন এরকম সরল অংকের মতো হতে দেখা যায় না। নির্বাচনের আগে এক ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। কীভাবে, কার অধীনে নির্বাচন হবে, এ নিয়ে শুরু হয় বাগ-বিতন্ডা এবং আন্দোলন-সংগ্রাম। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর দেশ এক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে পড়ে। আর সামনের নির্বাচনটি তো বড়ই কঠিন ও জটিল। বিশেষ করে ৫ জানুয়ারীর ভোটারবিহীন অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কারণে আগামী জাতীয় নির্বাচনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে নানা শংকা ও সমীকরণ শুরু হয়েছে। ধরে নেয়া যায়, এ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও তার জোট যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, তাতে সন্দেহ ও সংশয়ের অবকাশ নেই। মাঠের বৃহৎ বিরোধী দল বিএনপি ও তার জোট জানিয়ে দিয়েছে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে, তবে তা হতে হবে নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনে। মূলত আগামী নির্বাচনে বিএনপি ও তার জোটের অংশগ্রহণ এই একটি শর্তের উপরই নির্ভর করছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার জোট স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছে, বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। ফলে আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে, তা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
দুই.
নির্বাচন কমিশন বেশ আঁটঘাট বেঁধে নির্বাচনী কার্যক্রমে নেমেছে। তার এ কার্যক্রম স্বাভাবিক বা রুটিন ওয়ার্ক এবং এতে নতুনত্ব বলে কিছু নেই। তার সামনে যে সবচেয়ে বড় ও জটিল কাজ, মাঠের বৃহৎ বিরোধী দলসহ অন্যান্য দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানো, তার কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়। যদিও সে বলছে, সব দলের অংশগ্রহণেই নির্বাচন হবে। মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি স্পষ্ট করেই বলছে, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। এর জবাবে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার আকারে-ইংগিতে বলে দিয়েছেন, এটা তাদের কাজ নয়। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। এটা সত্য, নির্বাচনকালীন কোন সরকার থাকবে তা দেখার দায়িত্ব যেমন নির্বাচন কমিশনের নয়, তেমনি সে সময় যে সরকারই থাকুক না কেন, সে সরকারের প্রভাবমুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে নির্বাচন করার দায়িত্বও তার। নির্বাচন কমিশন কি, এই প্রভাব বলয় থেকে বের হয়ে আসতে পারবে? সে কি পারবে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য স্বাধীন মতো কাজ করতে? নির্বাচনে যাতে সকল দল অংশগ্রহণ করে, এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে? এই হিম্মত কি তার আছে? আমরা যদি অতীতের দিকে তাকাই, তবে দেখা যাবে, কোনো নির্বাচন কমিশনই তার স্বাধীন মতো নির্বাচন করতে পারেনি। যে সরকার ক্ষমতায় ছিল, মূলত তাদের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই নির্বাচন করেছে। অর্থাৎ ক্ষমতায় যে সরকারই থাকুক না কেন, তার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি। নব্বই দশকে ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার টি এন শেসান এসে যেমন নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন এবং ক্ষমতাসীন দল বা বিরোধী দল কারোই কোনো আবদার রাখেননি, একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে যা করার প্রয়োজন ছিল তা করেছেন, আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কি শেসানের মতো এই কাজ করতে পারবেন? সে সময় সরকারি দলের কেউ কেউ টি এন শেসানকে সংসদে ইম্পিচমেন্ট করার প্রস্তাব তুলেছিল, তাতে তিনি পিছপা হননি। বরং নিজের সিদ্ধান্তে অটল থেকে যেটা ন্যায্য মনে করেছেন, তাই করেছেন। পুরো প্রশাসনকে নিজের মতো করে পরিচালনা করেছেন। আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কি সাংবিধানিকভাবে তার উপর যে ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে তা ব্যবহার করে এমন পদক্ষেপ নিতে পারবেন? বিএনপির সহায়ক সরকারের প্রস্তাবের জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যতই বলুক নির্বাচন কমিশন সহায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবে, এ কথার বাস্তবায়ন কি নির্বাচন কমিশন করতে পারবে? অতদূর না গিয়ে যদি বলা হয়, নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানোর যে প্রস্তাব বিএনপি ও নাগরিক সমাজ দিয়েছে, শুধু এই প্রস্তাবটি কি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বাস্তবায়ন করতে পারবেন? এজন্য আরপিও সংশোধন করে সেনাবাহিনীকে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন? যদি না পারেন, তবে নাগরিক সমাজের সাথে যে আলোচনা করা হয়েছে, তা যে লোক দেখানো ছিল তা সকলেই বুঝে যাবেন। এটাও বুঝবেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে কাজ করা অসম্ভব এবং সুষ্ঠু নিবার্চন করা তার পক্ষে পুলসেরাত পার হওয়ার মতোই কঠিন। এই যে আয়োজন করে বিভিন্ন পক্ষের লোকজন ও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ করা, এসবই অর্থহীন হয়ে পড়বে যদি নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি না করা যায়। অবশ্য বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মেরুদন্ড কোমল না শক্ত-এ প্রশ্ন এখনও উঠেনি। তবে এ প্রশ্নটি তার সামনে যে রয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। যতই দিন ঘনিয়ে আসবে, ততই তার মেরুদন্ডের পরীক্ষা দিতে হবে। রকিব কমিশনের মেরুদন্ড নিয়ে যে সমালোচনা হয়েছে, তিনি যদি তা মনে রেখে নিজের মেরুদন্ড মজবুত করার দিকে মনোযোগ দেন, তবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া অসম্ভব নাও হতে পারে। আর যদি সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে থাকেন বা সিগন্যালের অপেক্ষায় থাকেন, তাহলে রকিব কমিশনের বদনাম যে তার উপর বর্তাবে, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
তিন.
আগামী নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন হবে কি হবে না, এ সিদ্ধান্ত এখনো নির্বাচন কমিশন নেয়নি। তবে সেনাবাহিনী মোতায়েনের উপর নাগরিক সমাজ যে জোর দিয়েছে, তাতে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বেশ নাখোশ হয়েছেন। তারা সেনাবাহিনীকে মাঠে টহল দেয়ার পরিবর্তে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবেই দেখতে চান। যখন প্রয়োজন হবে, তখনই কেবল সেনাবাহিনীকে তলব করার পক্ষে তারা। সেনাবাহিনীকে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতো ক্ষমতা দেয়া নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতিবাচক মনোভাবের জবাবও বিভিন্নভাবে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের বক্তব্যে উঠে এসেছে। সংলাপে অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কলামিস্ট আসিফ নজরুল বলেছেন, সেনাবাহিনীকে দিয়ে যাদি হাসপাতাল, বিমা প্রতিষ্ঠান চালানো যায়, রাস্তা নির্মাণের কাজ করানো যায়, ত্রাণ দেয়ার কাজ, এমনকি ট্যাক্সি সার্ভিসের কাজ করানো যায়, তাহলে নির্বাচনের কাজ করানো যাবে না কেন? স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, সেনা মোতায়েনের প্রশ্নে কোনো রাজনৈতিক দলেরই মাথাব্যাথা থাকা উচিত নয়। কমিশন চাইলে এটা হতে দেয়া দরকার। এছাড়া সংলাপে অংশগ্রহণকারী সংখ্যাগরিষ্ঠরাই আগামী নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পক্ষে বলেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল চায় না কেন? সেনাবাহিনী মোতায়েনের মাধ্যমে যদি একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়, তবে অসুবিধা কি? পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, সেনাবাহিনী মোতায়েন হলে ক্ষমতাসীন দলের লোকজনের ভোট কেন্দ্র দখলসহ নানা অপকর্ম করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। বিগত সময়ে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও তার লোকজন কীভাবে ভোটকেন্দ্র দখল করেছে, প্রতিপক্ষকে ঝেটিয়ে বিদায় করেছে, তার নজির রয়েছে। এ নিয়ে সর্বমহলে তীব্র সমালোচনা হলেও ক্ষমতাসীন দল ও নির্বাচন কমিশন কোনো কর্ণপাত করেনি। উল্টো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে বলে দাবী করেছে। অথচ সেনাবাহিনী মাঠে মোতায়েন থাকলে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও জবরদখলের মতো ঘটনা ঘটত না। এ ধরনের অপকর্মে সেনাবাহিনী অন্তরায় হয়ে উঠবে বলেই হয়তো ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনের মাঠে সেনা মোতায়েনের পক্ষে নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, আগামী জাতীয় নির্বাচনটি ক্ষমতাসীন দলের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের বিষয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে আরেকটি ৫ জানুয়ারীর মতো নির্বাচন করা খুবই কঠিন। যেভাবেই হোক, তাকে নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য করতে হবে। এতে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যান্য দলকে অংশগ্রহণ করাতে হবে। শুধু তাই নয়, সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে। ইতোমধ্যে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও সহায়ক সরকারের দাবী ক্ষমতাসীন দলের জন্য বড় ধরনের একটি চাপ হয়ে উঠেছে। তবে এটা বোঝা যাচ্ছে, সরকারি দল বিএনপির এ দাবী কোনোভাবেই মেনে নেবে না। তার নেতারা সংবিধানে এ ধরনের সরকার নেই বলে যুক্তি দিয়ে বলেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন হবে। অন্যদিকে সহায়ক সরকারের ধরন কী হবে তা বিএনপির পক্ষ থেকে এখনও স্পষ্ট করা হয়নি। বলা হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে ফিরে সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন। তখন হয়তো বিষয়টি স্পষ্ট হবে। এটা অবধারিতভাবেই ধরে নেয়া যায়, ক্ষমতাসীন দল তা একবাক্যে নাকচ করে দেবে। এতে যে রাজনীতি আবার একটি জটিল আকার ধারণ করবে, তা আগাম ধারণা করা যায়। আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করাটা যে ক্ষমতাসীন দলের জন্য টেনশন ও নার্ভাস হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা তার নেতাদের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তার প্রতিটি বক্তৃতায় বিএনপি ও তার চেয়ারপার্সনকে তীব্রভাবে আক্রমণ করে চলেছেন। আন্দোলন এখন লন্ডনের টেমস নদীর পাড়ে, আন্দোলনে ব্যর্থ, বিএনপি এখন ক্ষমতায় যাওয়ার চোরাগলি খুঁজছে, এমন বক্তব্য অনবরত দিচ্ছেন। এসব বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের বিষয়টি ক্ষমতাসীন দলের কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের এ মাথাব্যাথা কমানোর জন্য রাজনীতিতে বিকল্প চিন্তাও চলছে। ইতোমধ্যে বিএনপির বাইরে একটি তৃতীয় জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিকল্পধারা, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জাসদ, কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের মধ্যে জোট গঠন নিয়ে আলোচনা চলছে। এ নিয়ে বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসায় বৈঠক হয়েছে। এ জোট গঠনের প্রক্রিয়াকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে সাধুবাদ জানিয়েছেন। বলেছেন, এটা ভাল। রাজনীতিতে শতফুল ফুটুক। আবার বিএনপিও এ জোটকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এ জোট যদি হয়, তবে এর সাথে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে সম্পৃক্ত করে বিএনপি জোটের বিকল্প একটি জোট সরকার দাঁড় করাতে চায়। পারলে বিএনপি থেকে কিছু লোক ভাগিয়ে আরেকটি দল করে জোটে অন্তর্ভুক্ত করে দেখাতে চাইবে, বিএনপিও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। সরকার দেখাতে পারবে, আগামী নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গণে এখন যে পোলারাইজেশন হচ্ছে তাতে এ ধরনের কূটচালেরই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এর অর্থ হচ্ছে, সরকার বিএনপিকে বাদ দিয়ে আগামী নির্বাচনের একটি পথ তৈরি করতে চায়। এতে যদি নতুন জোটকে বেশ কিছু আসনে ছাড় দিতে হয়, তবে দেয়া হবে। আবার বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, তৃতীয় জোট গঠিত হলে তারা হালে পানি পাবে না। বরং ক্ষমতাসীন জোট ও বিরোধী জোটের সাথে দর কষাকষি করে কিছু ফায়দা নিতে চাইবে। তাদের ভূমিকাটা হবে এমন, ক্ষমতায় থাকতে ও যেতে হলে তাদের লাগবেই। এ কাজ তারা কতটা করতে পারবে, তা এখন দেখার বিষয়।
চার.
আগামী জাতীয় নির্বাচনটি যে সহজ হবে না, তা এখন থেকেই টের পাওয়া যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল চাইবে যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকতে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটও মরিয়া হয়ে চাইবে ক্ষমতায় যেতে। এই দুই দল ও জোটের পাওয়ার প্লেতে দেশের রাজনীতি যে উত্তপ্ত হয়ে উঠবে, তা এখন থেকেই আঁচ করা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন দল ও মাঠের প্রধান বিরোধী দলের মধ্যে এক ধরনের স্নায়ু চাপের সৃষ্টি হয়েছে। একে অপরকে তীব্র বাক্যবাণে বিদ্ধ করছে। ক্ষমতাসীন দল ইতোমধ্যে নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে। অভিযোগ তুলেছে, বিএনপি ষড়যন্ত্রের চোরাগলি দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চাইছে। অন্যদিকে কোনঠাসা অবস্থায় থাকা বিএনপির নেতারাও বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমে সরকার পতনের আন্দোলনের হুঙ্কার দিচ্ছেন। পাশাপাশি সদস্য সংগ্রহ অভিযান ও সংগঠনিক ভিত শক্ত করার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসবে, ততই বোঝা যাবে, তারা কতটা কী করতে পারবেন। এর মধ্যে শোনা যাচ্ছে, আগামী নির্বাচনে বিদেশি শক্তিগুলো ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। তাদের ভূমিকা এবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে বিদেশিদের কোনো ধরনের ভূমিকা কাম্য না হলেও, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতাই তাদের সুযোগ করে দেয়। আগামী নির্বাচনেও যে তাদের ভূমিকা থাকবে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোও আরেকটি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হোক, তা চাইবে না। সরকার চাইবে, সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। দেশের সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে প্রায় প্রত্যেকের চাওয়াও একই। তবে এ প্রত্যাশার বাস্তবায়ন নির্ভর করছে একমাত্র সরকারের উপর। তারা কি আরেকটি একতরফা নির্বাচন করতে চায়, নাকি সব দলের অংশগ্রহণে গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়, এ সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে।
darpan.journalist@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন