রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রচারে পিরোজপুরের সোহাগদল গ্রামে ১৫ দিন ছিলেন বঙ্গবন্ধু

| প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপকুলীয় জেলা পিরোজপুরের সোহাগদল গ্রামে টানা ১৫ দিন অবস্থান করেছিলেন। ১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ে একটি উপ নির্বাচনের প্রচারে তিনি এ গ্রামে যান। স্বরূপকাঠী উপজেলার সোহাগদল গ্রামের প্রায় শতবর্ষী প্রবীণ ব্যক্তি আবদুর রহমান যার ভাই ওই নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী ছিলেন তার স্মৃতিচারণ থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত পিরোজপুরে ৫ বার সফর করেন বঙ্গবন্ধু। তবে উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধুর ১৫ দিন পিরোজপুরে অবস্থানের খবর এতদিন ছিল অজ্ঞাত।
আব্দুর রহমান বলেন, ১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক গভর্ণর হলে তার আসনটি শুন্য হয়। এ আসনে উপ-নির্বাচনে পিরোজপুর মহাকুমা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক জয়নুল আবেদীন মোক্তার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন। স্বরূপকাঠী-বানারীপাড়া-কাউখালী এই তিনটি থানা নিয়ে পিরোজপুর উত্তর প্রাদেশিক পরিষদের আসন ছিল।
এ আসনে জয়নাল আবেদীনের প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী ছিলেন অবিভক্ত বাংলার সাবেক মন্ত্রী জাদরেল মুসলিমলীগ নেতা খান বাহাদুর হাশেম আলী খান। এই নির্বাচনী প্রচারনায় মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে একটি ছোট লঞ্চে করে স্বরুপকাঠীতে আসেন।
তিনি বলেন, ২-৩ দিন প্রচারণা চালিয়ে মাওলানা ভাসানী ঢাকা ফিরে গেলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোহাগদলের আব্দুর রব তালুকদারের ঘরে একটানা ১৫ দিন থেকে স্বরূপকাঠী-বানারীপাড়া-কাউখালী থানার অসংখ্য জনসভা ও কর্মীসভায় ভাষণ দেন এবং জয়নুল আবেদীনকে ভোট দেয়ার আহŸান জানান। এ সময় মঠবাড়িয়ার মহিউদ্দিন আহম্মেদ, বরিশালের মহিউদ্দিনসহ যুক্তফ্রন্টের শরীক দলের অনেক নেতা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন।
ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াও একদিন এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রচারনা চালান উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্থানীয়দের মধ্যে আব্দুর রহমান, মোসলেম আলী হাওলাদার, জহুরুল হক লাল মিয়া, হাবিবুর রহমান তালুকদার এবং হাফিজুর রহমানসহ শতাধিক স্থানীয় নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সার্বক্ষণিক থাকতেন। এই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা এবং ব্যক্তিত্বের কারনেই হাশেম আলী খানের মতো নেতাকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছিল এবং সমগ্র পাকিস্তানে প্রমাণ করা সহজ হয়েছিল যে, যুক্তফ্রন্টের স্বপক্ষে জন সমর্থন অক্ষুন্ন রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ২৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে গোপালগঞ্জ ও কোটালীপাড়া থানা নিয়ে গঠিত আসনে তিনি প্রার্থী হলে মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রী ওয়াহিদুজ্জামান প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থী হয়ে অনেক বড় বড় আলেম, পীর ও মাওলানা সাহেবদের হাজির করান।
শর্ষীনার পীরসহ এসব মাওলানা সাহেবরা ফতোয়া দিলেন যে, বঙ্গবন্ধুকে ভোট দিলে ইসলাম থাকবেনা, ধর্ম শেষ হয়ে যাবে। তারা যত রকম ফতোয়া দেয়া যায় তা দিতে কৃপনতা করলেন না। নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেল ওয়াহিদুজ্জামান সাহেব প্রায় ১০ হাজার ভোটে পরাজিত হয়েছেন।
আব্দুর রহমান বলেন, ১৯৫৬ সালের স্বরূপকাঠীর এই উপ-নির্বাচনে সেই শর্ষীনার পীর একইভাবে মুসলিমলীগ প্রার্থী হাশেম আলী খানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনায় নেমে আপত্তি জনক বক্তব্য রাখেন। ১৯৭১ সালের ৭ নভেম্বর পাক হানাদার বাহিনী রাজাকারদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজরিত সোহাগদলের আব্দুর রব তালুকদারের এই ঘরটিসহ অন্যান্য ঘরগুলো পুড়িয়ে ভস্মীভূত করে। স্বাধীনতার পরে অন্যান্য ঘরগুলো পুননির্মাণ করা হলেও দীর্ঘকাল ধরে ঐতিহাসিক এই ঘরের ভিটা শুন্য ছিল।
স¤প্রতি এই অজানা তথ্য আবিস্কৃত হলে প্রয়াত আব্দুর রব তালুকদারের আমেরিকা প্রবাসী স্ত্রী ও পুত্ররা বঙ্গবন্ধুর অমর স্মৃতিধন্য এই শুন্য ভিটায় একটি দালান নির্মাণ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন