রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

গ্রামীণ জনপদে আগের মতো চোখে পড়ে না শিমুলের হাসি

প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে

রক্তে রাঙা লাল শিমুল ফুল। সৌরভ না থাকলেও লাল টুকটুকে ফুলগুলো বিমোহিত করে দৃষ্টিকে। আবহমান গ্রামবাংলার এ শিমুল ফুলের গাছের সারির চিরন্তন এক রূপ আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। শিমুল গাছ গ্রামবাংলার মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনয়নে এক বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। সারিবদ্ধভাবে বা বিক্ষিপ্তভাবে কাঁটাযুক্ত শিমুল গাছ গ্রামবাংলার সর্বত্রই কমবেশি নজরে পড়ে। তবে লালচে তাম্র বর্ণের মাটিতে টিলা আকারের স্থানে শিমুল গাছ বেশি জন্মে থাকে। বীজ থেকে চারা ফুটে বের হবার পর থেকে ৭/৮ বছরের মধ্যেই শিমুল গাছে ফুল ফোটে ও ফল ধরে। তবে গাছের বয়োপ্রাপ্তি হয় ১০/১২ বছর পর। এসময় থেকেই শিমুল গাছ থেকে অর্থনৈতিক উপযোগিতা পাওয়া যায়। এর ফুল কিঞ্চিত লালচে বর্ণের হয়ে থাকে। এ ফুলের সৌরভ না থাকলেও পথচারীরা ক্ষণিকের জন্য হলেও এর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে পারে না। শিমুল গাছ সাধারণ ৭০/৮০ হাত লম্বা ও ৬/৭ হাত বা তদুর্ধ্ব মোটা আকারের হয়ে থাকে। বন্যার পানি বা খরায় এর কোন ক্ষতি হয় না। বাঁচেও দীর্ঘদিন। মাঘ ফাল্গুন মাসে এ গাছে ফুল ধরে এবং চৈত্র বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ফল পরিপক্ব হয়। এগুলি সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে নিলে এর ভিতর থেকে বেড়িয়ে আসে সাদা ধবধবে তুলো। একটি বড় আকারের শিমুল গাছ থেকে বছরে কমপক্ষে ৩/৪ মণ এমনকি তারও বেশি তুলা পাওয়া যায়। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি শিমুল তুলা ৩৫০ টাকা কেজি হিসাবে যার বাজার মূল্য দাঁড়ায় ৩৬ হাজার থেকে ৪৮ হাজার টাকা। এক বিঘা পরিমাণ পতিত জমিতে লাইন করে প্রায় ৩০টি শিমুল গাছ লাগানো যায়। এর সবগুলিতে ফল দেয়া শুরু করলে তা থেকে তুলা সংগ্রহ করে বিক্রি করলে বছরে প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা আয় হতে পারে। সৈয়দপুর ও তার আশেপাশে বেশকিছু পরিবার রয়েছে শিমুলের সংগৃহীত তুলা বিক্রি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালান। এছাড়া শিমুল গাছ বড় আকারের হওয়ায় এর নিচে শাক-সবজি, মরিচ, বেগুন, পিঁয়াজ- রসুন, হলুদ ইত্যাদি আবাদ করায়ও কোন অসুবিধা হয় না। তবে অত্রাঞ্চলের এক শ্রেণির অলস প্রকৃতির লোকজনের অবহেলার কারণে শিমুল গাছ থেকে যথাসময়ে ফল সংগ্রহ না করার কারণে বিপুল মূল্যের তুলা গাছে থাকা অবস্থাতেই আকাশে উড়ে যায়। শিমুল তুলা যে শুধু মাথায় দেয়া বালিশের কাজে ব্যবহৃত হয় তাই নয়, শিমুল গাছের ছালও বিষফোঁড়া নিরাময়ের মহৌষধ। কবিরাজগণ পুরনো শিমুল গাছের ছাল চূর্ণ করে তাতে পুরানো গাওয়া ঘি মিশ্রিত করে বিষফোঁড়ার উপর প্রলেপ দিয়ে থাকেন। তাছাড়া শিমুল মূলের কুচি কুচি চূর্ণ রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ঘুম থেকে উঠে গুড়সহ খালি পেটে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় হয়। এমনকি বলবর্ধকও বটে- মন্তব্য কবিরাজগণের। শিমুলের কচি কাঠ দিয়াশলাইয়ের কাঠি তৈরিতে উৎকৃষ্ট উপাদান হিসাবে বিবেচিত। শিমুলের পাতাও উৎকৃষ্ট জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শিমুল তুলার বীজ থেকে কোন ভোজ্য তেল তৈরি সম্ভব কিনা তাও পরীক্ষা- নিরীক্ষার দাবি রাখে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন