জুমার সময় মসজিদে নজরদারি
জুমার নামাজের আগে মসজিদগুলোতে কোরআন-হাদিসের আলোকে জঙ্গিবাদবিরোধী ‘মডেল বক্তৃতা’ দেয়া হচ্ছে কিনা তা নজরদারি করবে পুলিশ। এজন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত ৭০ হাজার মসজিদের তালিকা ইতিমধ্যে পুলিশের হাতে পৌঁছেছে। ‘জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ এবং প্রতিকার’ কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ তালিকা সরবরাহ করা হয়। ওই বৈঠকে মসজিদগুলোর পরিচালনা কমিটি থেকে জামায়াত-শিবির সমর্থকদের বাদ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। ২১ আগস্ট কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন আগের বৈঠকের অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে ‘জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ এবং প্রতিকার’ কমিটির সদস্য ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মহাপরিচালক (ডিজি) সামীম মোহাম্মদ আফজাল মিডিয়াকে বলেন, ‘সর্বশেষ বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এ ধরনের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি মসজিদ কমিটি থেকে জামায়াত-শিবিরের লোকদের বাদ দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে মসজিদের তালিকা সরবরাহ করা হয়েছে। গত বছরের জুলাই মাসে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও শোলাকিয়া ঈদগাহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলার পর জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে নানা পদক্ষেপ নিতে শুরু করে সরকার। সারা দেশের মসজিদগুলোতে জুমার নামাজের খুৎবার আগে জঙ্গিবাদের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে কোরআন-হাদিসের আলোকে ‘মডেল বক্তৃতা’ দেয়ার নির্দেশ দেয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন। একটি মডেল বক্তৃতা তৈরি করে তালিকাভুক্ত মসজিদগুলোতে পাঠায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন। কিন্তু গুটিকয়েক মসজিদ ছাড়া অধিকাংশ মসজিদেই ওই মডেল বক্তৃতা পড়া হয় না বলে অভিযোগ ওঠে।
জানা গেছে, ১২ এপ্রিল জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ এবং প্রতিকার কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সম্প্রতি ঢাকার আশকোনা, সিলেট, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা ও সীতাকুন্ডসহ সারা দেশে জঙ্গি কর্মকান্ডের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত অনেকেই বলেন, সব মসজিদে মডেল বক্তৃতা হচ্ছে। এ সময় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজাল খুৎবার আগে বিষয়টি নজরদারি করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চান। জবাবে পুলিশের পক্ষ থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীন পরিচালিত ৭০ হাজার মসজিদের তালিকা সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়। ডিএমপির কমিশনার বলেন, রাজধানীসহ দেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ইমামদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করে সাধারণ জনগণকে জঙ্গিবাদের বিষয়ে সচেতন করতে হবে। জঙ্গিবাদবিরোধী মনোভাব তৈরি করতে প্রতিনিয়ত জুমার নামাজে খুৎবার আগে বয়ানের সময় জঙ্গিবাদের কুফল নিয়ে আলোচনা করতে হবে। পাশাপাশি মসজিদ কমিটি থেকে জামায়াত-শিবির ঘরানার লোকদের বাদ দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এপ্রিলে ঢাকায় জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশে সউদী আরবের মক্কা ও মদিনা শরিফ মসজিদের খতিবরা বক্তব্য দিয়েছেন। খতিবদের ওই বক্তব্যের অংশ যোগ করে আরও সমৃদ্ধ করে ‘মডেল বক্তৃতা’ তৈরি করে প্রতিটি মসজিদে সরবরাহ করতে হবে। বিষয়টি যথাযথ মনিটর করতে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সঙ্গে সমন্বয় করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কাজ করতে বলা হয়। এমনকি জুমার খুৎবার আগে কতটি মসজিদে জঙ্গিবাদবিরোধী মডেল বক্তৃতা পড়া হয়েছে তার বাস্তবসম্মত ও তথ্যভিত্তিক পরিসংখ্যান এসবিকে কমিটির পরবর্তী সভার আগেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সরবরাহ করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন