আমাদের চলচ্চিত্র জগতের গৌরব কিংবদন্তী অভিনেতা নায়ক-রাজ রাজ্জাক আর নেই। গত সোমবার ২১ আগস্ট সন্ধ্যায় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না এলাইহি রাজেউন)। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ আগস্ট বিকালে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর ৫টা ২০ মিনিটে তাঁকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে ৬টা ১৫ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়। হৃদরোগ ছাড়াও অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, রক্তচাপ ও উচ্চমাত্রার ডায়াবেটিস রোগে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন তিনি।
নায়করাজ রাজ্জাকের মৃত্যুতে দেশের সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর মৃত্যুর পর পরই শোকবার্তা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টীর চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রমুখ। দেশের বাইরে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ মুখার্জীও নায়করাজ রাজ্জাকের মৃত্যুতে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
নায়করাজ রাজ্জাকের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে দেশের চলচ্চিত্র শিল্প ও সংস্কৃতি অঙ্গনের সর্বত্র নেমে আসে শোকের ছায়া। অনেকেই ছুটে যান হাসপাতালে। সেখানে শোকে পাথর হয়ে বসেছিলেন রাজ্জাকের স্ত্রী ল²ী ওরফে খায়রুন নেসা। নায়করাজের মৃত্যুতে তাঁর ৪৫ বছরের দাম্পত্য জীবনের নির্মম সমাপ্তি ঘটে গেছে। হাসপাতালে নিয়ে দেখা গেছে, যে রুমে রাজ্জাকের মরদেহ রাখা হয়েছে তার বাইরেই বসেছিলেন রাজ্জাক পত্মী। এসময় তাকে সান্তনা দেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার, আলমগীর, সুচরিতা, ওমর সানী, মৌসুমী, শাকিব খান, ফেরদৌস, সাইমন ও জায়েদ খান। রাজ্জাককে হাসপাতালে দেখতে এসে এসময়ের জনপ্রিয় নায়ক অভিনেতা শাকিব খান বলেন, বর্তমান প্রজন্ম এবং আগামীতে যারা আসবেন, তাদের কাছে রাজ্জাক একটি প্রেরণা হয়ে থাকবেন।
বাংলা চলচ্চিত্রের এই অমর অভিনেতার জন্মই হয়েছিল সিনেমা পাড়ায় কলিকাতার টালিগঞ্জে। ছোটবেলা থেকেই দেখেছেন সিনেমার শুটিং, দেখেছেন তারকা নায়ক নায়িকাদের। ফলে অল্প বয়সেই জড়িয়ে পড়েন মঞ্চনাটকে। তখন টালিগঞ্জের সিনেমা শিল্পে উত্তম কুমার, সৌমিত্র, ছবি বিশ্বাস প্রমুখ খ্যাতিমানদের যুগ। রাজ্জাকের মনে যখন সিনেমায় অভিনয়ের স্বপ্ন, তখনই কলিকাতায় শুরু হয়ে যায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। কলিকাতায় থাকা তার জন্য কষ্টকর হয়ে পড়লে এক সুহৃদের পরামর্শে চলে আসেন বাংলাদেশে, ঢাকায়। সেটা ১৯৬৪ সালের কথা। ঢাকায় আসার পর তার শুরু হয় আসল জীবন সংগ্রাম। কলিকাতা তাকে বিমুখ করলেও ঢাকা আস্তে আস্তে তাকে গ্রহণ করতে শুরু করে। এদেশের মানুষ তাকে গ্রহণ করে। তিনিও এদেশের সিনেমা শিল্পকে দিয়েছেন দু’হাত ভরে।
রাজ্জাকের প্রকৃত নাম মো. আবদুর রাজ্জাক। পিতা আকবর হোসেন ও মাতা মিনারুন্নেসার ছোট ছেলে আবদুর রাজ্জাক ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারী কলিকাতার টালিগঞ্জের মোল্লাবাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিয়ে করেন ল²ীকে। তাদের সংসারে তিন ছেলে ও দুই মেয়ে সন্তান। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দুই ছেলে বাপ্পারাজ ও সম্রাটও চলচ্চিত্রের সঙ্গে ওতপোতভাবে জড়িয়ে আছেন।
১৯৬৪ সালে কলিকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হলে রাজ্জাক স্ত্রী ও ছেলে বাপ্পাকে নিয়ে চলে আসেন ঢাকায়। যোগাযোগ করেন ঢাকায় প্রথম ছবি “মুখ ও মুখোশের” পরিচালক আবদুল জব্বার খানের সঙ্গে। তিনি ঐ সময় বিখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক সংস্থা ইকবাল ফিল্ম-এ চাকরি নিয়ে দেন পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারী হিসেবে। সহকারী পরিচালনা হিসাবে কাজের পাশাপাশি “১৩ নং-ফেকু ওস্তাগর লেন”, “আখেরী স্টেশন” ও “ডাকবাবু” ছবিতে ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। বরেণ্য চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের সিনেমায় নায়ক হবার সুযোগ পান। জহির রায়হান রাজ্জাকের প্রতিভা চিনতে ভুল করেননি। তিনি রাজ্জাককে নায়ক বানান, সুযোগ দেন তার বেহুলা চলচ্চিত্রে নায়কের ভূমিকায় অভিনয়ের। বেহুলার নাম-ভূমিকায় অভিনয় করেন সুচন্দা। ১৯৬৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “বেহুলা” সুপারহিট হয়। আর রাজ্জাক সুযোগ পান তার আজন্ম লালিত স্বপ্ন পূরনের। ঢাকার চলচ্চিত্র জগৎ পায় একজন রোমান্টিক নায়ক, যিনি বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভুত হয়ে চলচ্চিত্রমোদীদের উপহার দেন অসংখ্য কালজয়ী চলচ্চিত্র।
এখানে রাজ্জাকের এই উত্থানের পেছনে আরেকটি ঘটনা উল্লেখ না করলে সবটুকু পটভূমি বোঝা সম্ভব হবে না। কলিকাতায় যখন উত্তমকুমারদের যুগ শুরু হয়েছে, তখন ঢাকায় অনেকেই রহমানকে ঢাকার উত্তমকুমার হিসাবে কল্পনা করতে ভালবাসতেন। কিন্তু বিধি বাম। একটি দুর্ঘটনায় রহমানের পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ায় তাঁর সেই সম্ভাবনা অসম্ভব হয়ে পড়ে। সে সময় রাজ্জাক সেই শূন্যস্থান পূরণে এগিয়ে আসতে সক্ষম না হলে ঢাকার চলচ্চিত্রমোদীদের সে স্বপ্ন হয়তো কোনদিনই সফল হতে পারতো না। ফলে কালে রাজ্জাকই হয়ে উঠলেন ঢাকার উত্তমকুমার।
অভিনয়ের পাশাপাশি নায়করাজ রাজ্জাক ১৯৭৬ সালে ‘আশংকা’ নামের ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। এ পর্যন্ত ২০টি ছবি প্রযোজনা করেছেন তিনি। পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র। পরিচালক হিসাবেও তিনি সফল। সর্বশেষে তিনি ‘আয়না কাহিনী’ ছবিটি নির্মাণ করেন।
পাঁচ শতাধিক ছবিতে অভিনয় করা রাজ্জাক-অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রসমূহের মধ্যে রয়েছে ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘রংবাজ’, ‘বাবা কেন চাকর’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘পিচঢালা পথ’, ‘অশিক্ষিত’, ‘বড় ভালো লোক ছিল’, ‘আনোয়ারা’, ‘সুয়োরানী-দুয়োরানী, ‘দুই ভাই’, ‘মনের মতো বউ’, ‘ময়নামতি’, ‘ক. খ. গ. ঘ. ঙ,’ ‘বেঈমান’ ‘স্বরলিপি’, ‘কি যে করি, ‘টাকা আনা পাই’ ‘অনন্ত প্রেম’, ‘বাঁদী থেকে বেগম’, ‘আনার কলি’, ‘বাজিমাত,’ ‘লাইলি মজনু’, ‘নাতবউ’, ‘মধুমিলন’, ‘অবুঝ মন’, ‘সাধু শয়তান’, ‘মাটির ঘর’, ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘কালো গোলাপ’ প্রভৃতি বহুসংখ্যক জনপ্রিয় চলচ্চিত্র। সর্বশেষ অভিনয় করেছেন ছেলে বাপ্পারাজ পরিচালিত ‘কার্তুজ’ ছবিতে।
বাংলা চলচ্চিত্রে রাজ্জাক-কবরী জুটি পেয়েছিল তারকা-খ্যাতি। সুভাষ দপত্ত পরিচালিত ‘আবির্ভাব’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বাংলা চলচিত্রে আবির্ভাব ঘটে নতুন জুটি রাজ্জাক-কবরীর। একের পর এক ছবিতে অভিনয় করে তারা অসংখ্য সুপারহিট ছবি উপহার দেন ঢালিউডকে। সুদর্শন রাজ্জাক ববিতা, শাবানাসহ এখনকার প্রায় সব অভিনেত্রীকে নিয়েও একের পর এক ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র উপহার দেন জাতিকে।
নায়করাজ রাজ্জাক প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান ‘কি যে করি’ ছবিতে অভিনয় করে। এর পর আরও চারবার তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ২০১৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আসরে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয় রাজ্জাককে। ২০১৫ সালে তিনি পান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’। এছাড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার পান অনেক বার। এছাড়া পেয়েছেন আরও বহু পুরস্কার ও সম্মাননা। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের শুভেচ্ছা দূত হিসাবে কাজ করেন তিনি।
চলচ্চিত্র শিল্পের কিংবদন্তী পুরুষ নায়করাজ রাজ্জাকের মূল্যায়নে চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত গুণীদের বক্তব্য বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার। সারাহ বেগম কবরী এসম্পর্কে বলেছেন, ‘অভিনেতা অভিনেত্রী অনেকেই, ভাল অভিনয় করেন এমনও আছেন প্রচুর। কিন্তুু গণমানুষের প্রাণের স্পন্দনের সঙ্গে মিশে যেতে পারেন এমন অভিনেতা একটি দেশে বেশী থাকেনা। আমাদের দেশে রাজ্জাক সেই অভিনেতা যিনি গণমানুষের প্রাণের স্পন্দনে মিশে গেছেন। সেই ষাটের দশক থেকে দেশের চলচ্চিত্রের শুধু প্রধান পুরুষই তিনি নন, তিনি সকলের শ্রদ্ধেয় ও প্রিয়। তাকে ভালবাসেননা, সম্ভবত এমন একজন মানুষও এদেশে পাওয়া যাবে না। এটি একটি বিরল ঘটনা। রাজ্জাকের এই অর্জন সম্ভব হয়েছে কাজের প্রতি তার অসামান্য নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও ভালবাসার কারণেই। তিনি প্রতি নিয়ত নিজেকে আরও নিখুঁতভাবে গড়ে তুলতে চাইতেন। একজন প্রকৃতও গুণী শিল্পী হিসাবে এই নিষ্ঠা তার ছিল।
কবরী আরো বলেন, রাজ্জাক নেই-বড় আঘাত পাওয়ার মত খবর। অবিশ্বাস্য। আমি কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারছিনা। খুবই কষ্ট হচ্ছে আমার। কতদিন ধরে কাজ করেছি, যা স্মৃতিকোষে আজও জমা হয়ে আছে। চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেই দিনগুলোর দৃশ্যপট, আর অশ্রুসিক্ত করছে আমাকে। কতদিনের পরিচয় আমাদের-তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। দিন, তারিখ, মাস, বছর কোনটাই মনে নাই। শুধু মনে আছে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ‘যোগাযোগ’ ছবির মাধ্যমে রাজ্জাকের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, ছবিটি শেষ পর্যন্ত তৈরি হয়নি।
চিত্রনায়ক আলমগীর রাজ্জাক সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছেন, রাজ্জাক ভাই মারা গেছেন, আর আমার অনুভূতি শেয়ার করতে হচ্ছে, এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে? মানুষের বিচার বুদ্ধি দেখেও লজ্জা লাগে। মানুষের মধ্যে সামান্যতম মনুষ্যত্ব নেই। আমি হাসপাতালে কোথায় পরিবারটিকে সমবেদনা জানাব, তা না, একের পর এক ফোন আসছে। আর সবাই জানতে চাইছে আমার কেমন লাগছে। তার সঙ্গে কাজের স্মৃতিগুলো কী কী!
আজ বাপ্পী-বাপ্পা আর সম্রাটের বাবা হারিয়ে যেমন লাগছে, আমারও ঠিক তেমন লাগছে। বাবা হারানোর পর একজন সন্তানের কী অনুভূতি হয় তা যারা বাপ হারিয়েছেন, তারা জানেন। খবরটি শুনে পাথর হয়ে গিয়েছিলাম। প্রায়ই সম্রাটের কাছে রাজ্জাক বাইয়ের খোঁজ নিতাম। সম্রাট খুব হাস্যেজ্জলভাবে বলত আব্বু ভাল আছে। শুধু অভিনয়ে ফেরার চিন্তা। এত বারন করেছি, কিছুতেই থামাতে পারছিনা।
চিত্র নায়িকা ববিতা বলেন, তাঁর মৃত্যু সংবাদ আমি মানতে পারছিনা। কিছুদিন আগে রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। আমি তাঁকে ও ভাবীকে আমার নতুন বাসায় আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলাম। আমি তাকে বলেছিলাম, রাজ্জাক ভাই, আমি আপনাকে নিজে রেঁধে খাওয়াব। তিনি আমাকে বলেছিলেন, আমরা থাইল্যান্ড ঘুরতে যাচ্ছি। ফিরে এসে তোমার বাসায় যাব।
মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা বলেন, খবর শুনে আমি হতবিহবল হয়ে গেছি। শিল্পী হিসাবে তিনি যেমন অসাধারণ ছিলেন, মানুষ হিসাবেও তিনি বড় মাপের মানুষ ছিলেন।
সুদর্শন অভিনেতা রাজ্জাক চিত্রনায়িকা সুচন্দার সঙ্গে নায়কের অভিনয় শুরুর পর শবনম, কবরী, ববিতা, শাবানা-সহ তখনকার প্রায় সব অভিনেত্রীকে নিয়ে-ব্যবসা সফল ছবি উপহার দেন ঢালিউডকে। এর মধ্যে রাজ্জাক-কবরী জুটি ছিল ব্যাপক জনপ্রিয়। সুভাষদত্ত পরিচালিত অবির্ভাব চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অবির্ভাব ঘটে রাজ্জাক-কবরী জুটির। এরপর একের পর এক অনেক ব্যবসা-সফল ছবি করেন এই জুটি।
আগেই বলা হয়েছে অভিনেতা হিসাবে রাজ্জাক যেমন ছিলেন অসাধারণ, মানুষ হিসাবে তিনি ছিলেন আরও বড় মাপের। চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িত সকলেই তাঁকে দেখতো তাদের পিতৃতুল্য অভিভাবক হিসাবে। এই দরদী অভিভাবক হারিয়ে তারা আজ সবাই চরম শোকাহত। শুধু চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িতরাই নয়। দেশের একজন গুণী নাগরিক হিসাবেও রাজ্জাক ছিলেন সবার শ্রদ্ধার পাত্র। বিশেষ করে চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে আমৃত্যু জড়িত থেকেও তাঁর মধ্যে যে সুগভীর ধর্মীয় চেতনা ছিল, তা তাকে অনন্য মর্যাদায় অভিষিক্ত করে। চলচ্চিত্র জগতের জড়িতদের মধ্যে তিনি ছিলেন সেই স্বল্পসংখ্যক ব্যক্তিত্ব যারা পবিত্র হজ্জ পালন করতে পবিত্র মক্কা-মদীনা সফরের সৌভাগ্য অর্জন করেন।
নায়করাজ রাজ্জাককে হারিয়ে জাতি শুধু একজন গুণী চলচ্চিত্র শিল্পীকেই হারায়নি, হারিয়েছে এমন এক আদর্শবাদী ব্যক্তিত্বকে যিনি চলচ্চিত্র-শিল্পের সঙ্গে জীবনের সিংহ ভাগ জড়িত থেকেও নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসকে কখনও এতটুকু শিথিল হতে দেননি। আমরা বিশ্বাস করি পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালা তাঁর এই ধর্মীয় নিষ্ঠাকে পুরস্কৃত করবেন। আমরা পরম করুণাময়ের দরবারে তাঁর আত্মার মাগফেরাতের জন্য আন্তরিক প্রার্থনা জানাই। একই সাথে সংস্কৃতি-জগতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণের আহ্বান জানাই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন