ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জের আউশকান্দি থেকে ওসমানীনগর উপজেলা- সিলেট হুমায়ুন রশিদ চত্বর পর্যন্ত ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। খানা খন্দকের কারণে রীতিমতো মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এ অঞ্চলের মহাসড়কের দু’পাশ ঘেষে ভাসমান দোকানের দখল এবং অযোগ্য চালকের কারণেও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যাচ্ছে পথযাত্রীদের। সচেতন মহল এসব ঘটনাকে সড়ক দুর্ঘটনাকে না বলে সড়ক হত্যা বলে মন্তব্য করেন। জানা যায়, মহাসড়কের নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি থেকে পানিউমদা বাজার এবং শেরপুর থেকে সিলেট হুমায়ুন রশিদ চত্বর পর্যন্ত প্রায় ৫২ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে এক বছর আট মাসে ৪৩টি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ গেছে অর্ধশতাধিক যাত্রীসহ পথচারীদের। প্রতিদিন আতঙ্ক নিয়ে যান চলাচল করছেন এ অঞ্চলের যাত্রীরা। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে খানা খন্দক আর নিষিদ্ধ অটোরিক্সা চলাচল, ভাংগা বা গর্ত অংশ ছেড়ে গাড়ি ভালো অংশ দিয়ে চলতে গিয়ে অভারটেকিং করে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন না মেনে প্রতিযোগি মনোভাব নিয়ে গাড়ি চালানো ইত্যাদি কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা। প্রতিদিনই ঝরছে তাজা প্রাণ। অনেকেই হচ্ছে পঙ্গু। যার অধিকাংশই হচ্ছেন পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বর্তমানে বাড়তে বাড়তে এটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো হচ্ছে, নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের সঈদপুর বাজার, দেবপাড়া ইউনিয়নের সদরঘাট নতুন বাজার,ওসমানীনগর উপজেলার শেরপুর, কাগজপুর ব্রীজ, বুরুঙ্গা রাস্তার মূখ, উনিশ মাইল, প্রথমপাশা, ব্রা²ণগ্রাম, গোয়ালাবাজার, ওসমানীণগর থানার সামন, তাজপুর, ব্রা²ণশাসন মোড়, দয়ামীর, নাজিরবাজার, কুরুয়া ও রশিদপুরসহ রয়েছে শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ অংশ। বিভিন্ন সূত্রে থেকে জানা যায়, এসব এলাকায় গত ২০১৬ সালের জানুয়ারী থেকে ২০১৭ সালের জুলাই পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জের আউশকান্দি, ওসমানীনগর ও সিলেট সদর পর্যন্ত প্রায় ৫২ কিলোমিটারে ৪২টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে অর্ধশতাধিক মানুষের। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, খানা-খান্দের কারণেই দিন দিন সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক গত ১০ জুন থেকে এলজিইডি কর্তৃক স্থানীয় ঠিকাদার দিয়ে শুরু হয় সংস্কার কাজ। কিন্তু সংস্কার করা হলেও কিছুদিন পর ঘুরে ফিরে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের অবস্থা হয়ে যায় আগের মতোই। এতে করে স্থানীয় লোকজন এবং যাত্রী সাধারণদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে । এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত জুন মাসের শেষের ১০ দিনে নবীগঞ্জের সৈয়দপুর থেকে দেবপাড়া পর্যন্ত তিনটি সড়ক দুঘটনায় নববধূ মা-ছেলেসহ নিহত হয়েছেন ৭জন ও আহত হয়েছেন ১৫জন । গত ৬ জুন মহাসড়কের দয়ামীরে দুটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন চালক চান মিয়া। ৭ জুন বুধবার ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজারের দত্তগ্রাম নামক স্থানে ঢাকা থেকে সিলেটগামী শ্যামলী পরিবহন অভারটেকিং করতে গিয়ে চাপা দেয় অটোরিকশাকে। ঘটনাস্থলেই মারা যান ২ জন এবং পরে মারা যান আরো ৩ জন। ৮ জুন বৃহস্পতিবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গজিয়া নামক স্থানে হবিগঞ্জগামী হবিগঞ্জ বিরতিহীন বাস চাপা দিলে শিশু নয়ন মারা যায়। ২৭ জুন ঢাকা সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জের আউশকান্দির মজলিশপুরে প্রাইভেট মাইক্রো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে রাস্তার পাশে বসে থাকা আয়ফর মিয়া নামে এক যুবক চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। ২৮ জুন সদরঘাট নতুন বাজারের নিকটে মহাসড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত সিএনজি অটো রিক্সা ও প্রাইভেট মাইক্রো মুখোমুখি সংঘর্ষে মা ছেলেসহ ৫ জন নিহত হন। এতে আহত হয় শিশুসহ অন্তত ৭ জন। পরে আরো ৫ জন মারা যায় । ২৯ জুন নবীগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাওয়া ইমা সিলেট থেকে দ্রæত গতিতে ছেড়ে আসা মাইক্রোবাস ঢাকা সিলেট মহাসড়কের সৈয়দপুর বাজারের রহমান ফিলিং স্টেশন এর নিকটে মুখোমুখি সংঘর্ষ বাধে। এঘটনায় আহত হন অন্তত ৮জন। পরে ঐদিন রাতে আহতদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হবিগঞ্জ শহরের ইটালী প্রবাসী সাথি আক্তার মারা যান। ৮ জুলাই শনিবার ওসমানীনগরের ইলাশপুর নামক স্থানে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় পথচারী মৌলভীবাজার সদর উপজেলার চরাউন খুশহালপুর গ্রামের সকিরুন বেগম নিহত হন।
বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, নিয়ম ভঙ্গ করে ওভারলোডিং ও ওভারটেকিং করার প্রবণতা, চালকদের দীর্ঘক্ষণ বিরামহীনভাবে গাড়ি চালানো, ট্রাাফিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, আনফিট গাড়ি ও থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও সড়কের বেহালদশা। এসব কারণেই মহসড়কে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। এছাড়া রয়েছে, হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, রাস্তা-ঘাটের নির্মাণ ত্রæটি, যাত্রীদের অসতর্কতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, বাসের ছাদে ও পণ্যবাহী ট্রাকের উপর যাত্রী বহন ও ফুটপাথ বেদখলে থাকায় রাস্তার মাঝপথে পথচারীদের যাতায়াত।
ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুরের ব্যবসায়ি মাওলানা কাজী আ ফ ম আব্দুল কাউয়ুম বলেন, খানা-খান্দের কারণেই দিন দিন সড়ক দূর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন