হাসির মাস্টার
ফ জ লে রা ব্বী দ্বী ন
হাসির
গল্প
আ
মাদের মেসের ছোট ভাই তালহা। তার অদ্ভুত কীর্তি আর সবাইকে হাসিয়ে মন জয় করতে পারার জন্য আমরা তাকে হাসির মাস্টার বলে ডাকি। প্রতিদিন কোন না কোন কারণে সবাইকে হাসাবেই। একদিন যদি কাউকে না হাসাতে পারে সেদিন রাতে আর মনের দুঃখে ভাত খায় না। সারা রাত উপোস থেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠে। তাই যেদিন রাতে তার না খেয়ে ঘুমানোর কাহিনী আরম্ভ হয় সেদিন রাতেই আমরা তার জন্য পছন্দের অনেক খাবার সামনে এনে হাজির করে রাখি। হাজারো হলেও মেসের একমাত্র ছোট ভাই। তার জন্য এইটুকু করব না তা কি হয়! কিন্তু একদিন রাতে চুপিচুপি ঘুম থেকে উঠে তার খাওয়া-দাওয়ার বেশ জৌলুশ দেখে ফেলি। তারপর বুঝতে আর বাকি রইল না যে মাঝে মধ্যেই নিজের পছন্দের বাহারী খাবারগুলো বিনামূল্যে খেতে পারে বলে এভাবে না খেয়ে ঘুমানোর চালাকি করে। তারপর সবার সামনে তাকে এনে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে উত্তর দেয়, ‘আসলে বড় ভাইয়েরা কি রকম চালাক সেটাই দেখতে চাচ্ছিলাম এই আর কি!’
সেদিনকে কলেজে গিয়ে নোটিশ বোর্ডে তাকিয়ে দেখি সামনের শুক্রবারে নতুন ছাত্রদের আগমনী উপলক্ষে মজার এক শিক্ষামূলক নাটকের অনুষ্ঠান হবে। খুশির সংবাদটা মেসের সবার কানে পৌঁছে দেওয়ার আগেই যে যার মত অভিনয়ের পাঠ বেছে নেওয়া শুরু করে দিয়েছে। সবাই এ নাটকে অভিনয়ের জন্য পুরোপুরি রাজি। কিন্তু তালহার ভিন্নধর্মী রাজি হবার দৃশ্যটা দেখেতো অট্টহাসির বন্যায় সবাই ভেসে গেলাম। উঠোনে ধারে কাঁঠাল গাছটার উপরে চেয়ে দেখি এক পা গুঁটিয়ে রেখে আরেক পায়ে সটাং আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। মানেটা বুঝাচ্ছে যে, অভিনয়ের জন্য সে এক পায়ে খাড়া।
পরদিন আনন্দের সহিত কলেজে গিয়েই একটা দুঃসংবাদ কানে আসল। নাটকের জন্য একটা অভিনেতাও কলেজ থেকে সিলেক্ট করা হয়নি। সবগুলোই বাহির থেকে ভাড়া করা। মুহূর্তের মধ্যেই সবার চোখ-মুখে আঁকা স্বপ্নগুলো হাওয়া হয়ে উড়ে গেল। সবথেকে যে বেশি কষ্ট পেল সে হল তালহা। তবুও কেউই তেমনটা ভেঙে পড়লাম না।
অনুষ্ঠানের দিনটা ঠিক সময়েই এসে গেলে আমরা সবাই সবকিছু ভুলে কলেজে চলে আসলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই নাটকের সব আয়োজন শুরু হয়ে গেল। অনেক দর্শকের ভিড় ঠেলে কোনমতে এক কোণায় বসে নাটক দেখতে লাগলাম সবাই। মাঝে মাঝেই দর্শকদের উল্লাসিত করতালি আর অভিনয়ের আনন্দে মঞ্চ কেঁপে উঠছে বারবার। এভাবে চলতে চলতে নাটকের যখন একেবারে প্রায় শেষ মুহূর্তে চলে এসেছে এমন সময় অনাকাক্সিক্ষত এক ঘটনা ঘটে গেল। উত্তেজনার বশে অভিনেতারা এক এক করে স্টেজে উঠছে আর ধপাৎ করে জ্ঞানশূন্য হয়ে সেখানেই ঘুমিয়ে পড়ছে। চারদিকে তুমুল স্বরে হৈচৈ পড়ে গেল। দর্শকদের চেঁচামেচি থামাতে জনাব প্রিন্সিপ্যাল স্যার নিজে স্টেজে উঠে গলা ফাটাতে শুরু করলেন। কিন্তু সব প্রচেষ্টাই যখন ব্যর্থ হয়ে যাবার মত অবস্থা এমন সময় স্টেজের দিকে তাকিয়ে দেখি সাতটা টুপি মাথায় দিয়ে আর সাতটা শার্ট গলায় বেঁধে কে যেন একা একাই অভিনয় করতে শুরু করেছে। পরনের ছেঁড়া লুঙ্গি মাথায় বাঁধা দেখে বুঝতে আর বাকি রইল না যে এটা আমাদের হাসির মাস্টার তালহা। মস্ত একটা হিজড়া পাগলের অভিনয় শুরু করে দর্শকদের হাসাতে হাসাতে পেটে খিল দেওয়ার মত অবস্থা করে ফেলেছে। শেষমেশ হাসাহাসির কীর্তিতে অনুষ্ঠানটা শেষ হলে প্রিন্সিপ্যাল স্যার নিজে স্টেজে উঠে সবার সামনে তালহাকে নিয়ে তার কলেজের একটা গর্বের কথা তুলে ধরলেন। তারপর ভাড়া করা অভিনেতাদের জন্য বাজেট করা সমস্ত অর্থের সমপরিমাণ টাকা তালহার হাতে তুলে দিলেন। এমন আনন্দের দিনে আমরা সবাই যখন পুরো রাস্তায় আনন্দ মিছিল করে মেসে ফিরলাম তখন তালহার মুখে হঠাৎ একটা আজব খবর শুনেতো আমরা পুরোপুরি হতবাক হয়ে গেলাম।
‘তার মানে নাটকের শেষ প্রান্তে এসে সবার ঘুমিয়ে পড়ার একমাত্র কারণ হল সে। কিন্তু কিভাবে?’ জানতে চাওয়ার উত্তরে সে বলল-তাকে অভিনয়ে কোন জায়গা দেওয়া হয়নি বলে মনে মনে সে একটা প্লেন এঁকেছিল। অনুষ্ঠানের বিরতিতে ওয়েটার সেজে সকল অভিনেতাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাস করেছিল তারা কি খেতে চায়? সবাই চা নাস্তার কথা বললে নিজে চা বানিয়ে সবার কাছে হাজির করল ঠিকই কিন্তু প্রত্যেকটা চায়ের কাপেই একটা করে ঘুমের বড়ি মিশিয়ে দিয়েছিল। তারপর যা ঘটার তাই ঘটল!
স্বাদেই কি আমরা তালহাকে হাসির মাস্টার বলে ডাকি। কিন্তু হাসির মাস্টার যে এভাবে বুদ্ধির মাস্টারও বটে তাতো কোনদিন জানা ছিল না!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন