মোঃ আবু শহীদ, ফুলবাড়ি (দিনাজপুর) থেকে : নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। প্রায় ৭০০ নদ-নদী ছিল আমাদের দেশে। বর্তমানে এ সংখ্যা কমে মাত্র ২২৫ টিতে দাঁড়িয়েছে। গত ৫০ বছরে প্রায় ৫০০ নদ-নদী হারিয়ে গেছে। নদীর সংখ্যা যেমনি কমছে, তেমনি কমছে নদীর মাছ। বিশেষ করে দেশি মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। কিন্তু কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাচ্ছে কথাটি। ধীরে ধীরে দেশের পুকুর, খাল, বিল, নদী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন প্রকার মাছ। বাঙালির প্রিয় সুস্বাদু পুষ্টিকর মাছ আর আগের মত পাওয়া যাচ্ছে না।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলার সকল ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৭টি ইউনিয়নে মোট সরকারি পুকুর সংখ্যা ৮৭টি, বেসরকারি পুকুর সংখ্যা ১৭শ’ ৩৬টি, বিলের সংখ্যা ২টি ও নদী ১টি। এসব জলাশয়ে কোন এক সময় বছর জুড়ে দেশি মাছে পরিপূর্ণ ছিল। উপজেলার সব পুকুর খাল-বিল নদ-নদীকে সব সময় মাছ পাওয়া যেত। কিন্ত বর্তমানে আবহাওয়ার পরিবর্তন ও জমিতে কীটনাশক প্রয়োগের পাশাপাশি খাল-বিল, নদী-নালা, ডোবা ও বড় বড় পুকুর ভরাট করে বসত বাড়ি নির্মান করায় বিলুপ্তির পথে সুস্বাদু দেশীয় মাছ। এই এলাকায় এক দশকের ব্যবধানে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। এতে করে দেশের অর্থনীতিতে মাছের অবদান যেমন কমছে, তেমনি ব্যাপকভাবে সংকুচিত হয়ে গেছে জেলেদের আয়-রোজগার। এক সময়ের পুটি, টেংরা, ময়া, ইছলে, সাটি, কই, মাগুর, ভুরাই, চেং, বোয়ালসহ বিভিন্ন প্রকারের দেশিয় মাছের এখন আর দেখা মিলে না হাট-বাজারে। দেশিয় মাছের জায়গায় এখন সিলভারকার্প, মিনারকার্প, গ্রাসকার্প, তেলাপিয়া, বিদেশি মাগুর, থাই কৈ, বাটা, সরপুটি সর্বত্র কেনা-বেচা হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তি এবং দ্রæত বর্ধণশীল খাবার প্রয়োগ করে রুই, কাতলা, মৃগেল, পাঙ্গাশ, টেংরা, মলা, কৈ, শিং ও মাগুর জাতীয় মাছ পুকুর জলাশয়ে চাষ করা হচ্ছে। যে কারনে এই এলাকায় মাছের চাহিদা কিছুটা পূরণ হলেও দেশী প্রজাতির মাছের চাহিদার কোন কমতি নেই। বাজারে কখনও কখনও দেশীয় প্রজাতির কিছু কিছু পোনা মাছের দেখা মিললেও সচরাচর তা দেখা যায় না। আর তাই আমরা ভুলতে বসেছি দেশী মাছের চেনা সেই স্বাদ। উপজেলার পৌর এলাকার চকচকা গ্রামের আতাউর রহমান জানান, ছোটকালে নদী-নালায় মাছ ধরতে ধরতে বড় হয়েছি। কিন্তু এখন আর আগের মত মাছ চোখে পড়েনা। উপজেলার বেতদীঘি ইউনিয়নের জেলে ইসমাইল হোসেন বলেন, অধিক ফলনের আশায় জমিতে নানা ধরনের কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করায় এসব মাছ মরে যাচ্ছে। বংশ বিস্তার করতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, নদী-নালা ও খাল-বিলে এক শ্রেনীর জেলে দাড়কি, কারেন্ট জাল, ফাঁসিজাল, ঘেরজালসহ ছোট ফাঁসের বিভিন্ন ধরণের জাল ব্যবহার করে রেনুপোনা নিধন করায় মাছের বংশ বিস্তার বাধা গ্রস্থ হচ্ছে। উপজেলার ছোট বড় মাছের হাট-বাজারে ঘুরে দেখা যায় দেশীয় প্রজাতির মাছের সংখ্যা খুবই সীমিত। যা আছে তার চড়া দাম হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। যদিও কিছু সুস্বাদু মাছ হাট-বাজারে পাওয়া যায় তাও চলে যায় বিত্ত¡বানদের হাতে। ফলে সাধারণ মানুষের কপালে এসব মাছ আর জোটে না। উপজেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের জলবায়ূ পরির্বতনের প্রভাব ও নদ-নদীতে মাছের প্রজননের অন্তরায়। এছাড়াও তিনি মাছের মজুদ কমে যাওয়ায় মূল কারণ হিসেবে ওভার ফিশিংকে দায়ী করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা এনজিও ফোরামের নেতা এম, এ কাইয়ুম বলেন, ছোট যমুনা নদীর দুষন ঠেকাতে এলাকার সকলকে সচেতন হতে হবে। তিনি ছোট যমুনা নদীতে নিয়মিত ড্রেজিং এবং নদীর পাড়ে কোন কল-কারখানা স্থাপন না করার উপর জোড় দেন। উপজেলার মৎস্য অফিসার জানান, ফুলবাড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ৮৭টি সরকারি পুকুররের মধ্যে ৪টি পুকুর আমার দপ্তরের জন্য লিজের প্রস্তাব দিয়েছি। পুকুরগুলি পেলে নিজস্ব উদ্যোগে সেখানে আমরা বিলু্িপ্ত হওয়া দেশীয় মাছের পোনা তৈরী করে উপজেলার মাছ চাষিদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করে দেশি প্রজাতীর মাছ চাষের প্রতি আগ্রহী করে গড়ে তোলার চেষ্টা কবরো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন