আক্তারুজ্জামান বাচ্চু: সাতক্ষীরায় যততত্র গড়ে উঠেছে প্রাইভেট ক্লিনিক। সেবার নামে এসব ক্লিনিকে চলছে অপচিকিৎসা। ভুল চিকিৎসায় মৃত্য হচ্ছে রোগীর। বিশাল আকারের সাইনবোর্ড ও চটকদারি প্রচারের মাধ্যমে রোগীদের মন আকৃষ্ট করা হয়ে থাকে এসব ক্লিনিকে আসার জন্য। তাছাড়া’ ভ্যানওয়ালা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে লোকজনদের নির্দিষ্ট কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়েছে দালাল হিসেবে। তাদের খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে রোগী ও তার পরিবার। এছাড়া, রয়েছে সরকারি হাসপাতালের কিছু অসাধু ডাক্তার ও নার্স। এরা পরস্পর যোগসাজোসে সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে গরীব অসহায় রোগীদের জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা যা খুবই বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। মেরে ফেলা হচ্ছে প্রসূতি মা ও নবজাতককে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরায় চিকিৎসকের অবহেলা, ভুল চিকিৎসায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৯ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১৮টি নবজাতকের। দেখা গেছে বেশির ভাগ মৃত্যু হয়েছে বেসরকারি বা প্রাইভেট ক্লিনিকে। সরকারি হাসপাতালে রোগীকে সেবা দেওয়ার নামে বেশি অবহেলা করা হয় বলে রোগীরা তাদের প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে বাধ্য হয়। এছাড়া, রয়েছে দালালদের আধিপত্য।
যদিও সরকারি হাসপাতাল প্রসূতি সেবায় মোটামুটি ভালো ভূমিকা রাখলেও কিছু অসাধু ডাক্তার, নার্স ও পোষা দালালের খপ্পরে পড়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগী যেতে বাধ্য হয়। ফলে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর যে ঘটনা বেশি হচ্ছে। প্রাইভেট হাসপাতালগুলি তাদের ব্যবসার জন্য রোগীদের ভাল চিকিৎসা সেবা দেবার নাম করে ভুলিয়ে ভালিয়ে ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে অপচিকিৎসা দিয়ে, অবহেলা করে এবং ভুল চিকিৎসা দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের একজন গাইনি ডাক্তারের বিরুদ্ধে সরকারি হাসপাতালের প্রসূতি রোগীদের ভাগিয়ে নিয়ে তার নিজস্ব নার্সিং হোম এন্ড ক্লিনিকে রোগীর পরিবারকে জিম্মি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। সরকারি চিকিৎসক হয়েও তিনি বেনামে চালাচ্ছেন ব্যক্তিগত ক্লিনিক ব্যবসা। স¤প্রতি শহরের রসুলপুর এলাকার রজব আলীর স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠলে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। তাড়াহুড়ো ও অসাবধানতায় অপারেশনের এক পর্যায়ে ঐ রোগীর পেটে গজ ব্যান্ডেজ রেখে সেলাই করে দেন ওই ডক্তার। পরবর্তীতে সমস্যা দেখা দিলে আলট্রাসোনো করে দেখা যায় ঐ রোগীর পেটে গজ ব্যান্ডেজ এর কারণে পঁচন ধরেছে। অসহায় রোগীর অবস্থা খারাপ হলে শহরের একটি বে-সরকারি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হলে খুলনা মেডিকেল হাসপালে নিয়ে ভর্তি করে রোগীর পরিবার।
অপরদিকে গত ৬ সেপ্টেম্বর শহরের সুলতানপুর এলাকার তরকারি ব্যবসায়ী নূর ইসলামের স্ত্রী নাজমা বেগম সদর হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি হতে গেলে গাইনি বিভাগের কিছু নার্স ও পোষা দালাল ঐ রোগীর পরিবারের হাতে একটি কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বলে সদর হাসপাতালে সিজার হবে না, অমুক ক্লিনিকে নিয়ে যাও। সেখানে রোগী ভর্তি করলে প্রথমে ৫০০ টাকা ও পরে দালালেরা ২০০ টাকা নেয় এবং বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষার নাম করে ২ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রাইভেট ক্লিনিকে সিজারের জন্য ১২ হাজার টাকা লাগবে বলে জানিয়ে দেন ডাক্তার। ঐ গরিব অসহায় রোগীর পক্ষে ১২ হাজার টাকা দেওয়া খুবই কষ্ট সাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। এক পর্যায়ে ভিটাবাড়ির জমি বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা দিতে রাজি হয় রোগীর পরিবার। তখন গাইনি ডাক্তার সাফ জানিয়ে দেন ১২ হাজার টাকাই তাকে দিতে হবে। মূমুর্ষূ অবস্থায় রোগীকে ফিরিয়ে আনা হয় অন্যত্র। এমন অভিযোগ নিত্যদিনের। বিভিন্ন ক্লিনিকে দালালরা রোগী নিয়ে এসে পারীক্ষা-নিরিক্ষার নামে ব্যবসা হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার। সেবার নামে প্রতারিত হচ্ছেন রোগী ও ত্রা স্বজনরা।
এব্যাপারে সিভিল সার্জন ডাঃ তওহীদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালের কোন ডাক্তার নিজস্ব ক্লিনিক চালাতে পারেন না। উনি হয়তো অন্য নামে ক্লিনিকটি চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, নিয়ম অনুয়ায়ি যাতে রোগীরা ঠিকমতো সেবা পান সে বিষয়ে তিনি আরো সজাগ থাকবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন