শনিবার, ২২ জুন ২০২৪, ০৮ আষাঢ় ১৪৩১, ১৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

কাঁচা পাতা বিক্রি হচ্ছে চন্দনাইশে

| প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) থেকে এম. এ. মোহসীন: চট্টগ্রামের চন্দনাইশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে গাছের কাঁচা পাতা। বাংলার আপেল খ্যাত চন্দনাইশের পেয়ারা। আর পেয়ারা মৌসুমকে ঘিরে একমাত্র বাংলাদেশেই প্রতি বছর বিক্রি হয় গাছের কাঁচা পাতা। পেয়ারা বাজারে গরিব দুস্থ, অসহায়, দরিদ্র পরিবারের ছোট ছোট স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরাই মনের আনন্দে বিক্রি করতে বসে গাছের কাঁচা পাতা। চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চনাবাদ, হাসিমপুর ইউনিয়নের লট এলাহাবাদ ও জামিরজুরীর পাহাড়ে পাহাড়ে এসব পেয়ারার চাষ হয়। উপজেলার মহাসড়কের উপর রওশন হাট, বাদামতল ও বাগিচাহাটে জমজমাট পেয়ারা বিক্রির হাট বসে। পেয়ারা বেপারিরা বাগানের মালিকদের কাছ থেকে পেয়ারা কিনে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বস্তা ভর্তি করে। বস্তায় পেয়ারা সতেজ সজিব রাখতে ও পেয়ারার রং সৌন্দর্য নষ্ট না হওয়ার জন্য চতুর দিকে গাছের কাঁচা পাতা দিয়ে মাঝখানে পেয়ারা ভর্তি করে। ফলে গাছের কাঁচা পাতা কিনতে হয় পেয়ারা বেপারীদের। এতে বাজারে গাছের কাঁচা পাতা কদর পেয়ারা মৌসুমে। গাছের কাঁচা বিক্রির জন্য সকাল থেকে এ সব শিক্ষাথীরা কাঁচা পাতা বাজারে আনার দৌড়ঝাপ ও প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উপর চন্দনাইশের রওশনহাটে প্রতিদিন সকাল থেকে পেয়ারা বিক্রির হাট বসে। এ বাজার সংলগ্ন দক্ষিন খরনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র জিসান কাঁচা পাতা বিক্রি করতে বসে। স্কুল ড্রেস পরিহিত এ শিক্ষাথীর সাথে ইনকিলাব প্রতিবেদকের আলাপকালে সে জানান, তার পিতা একজন দিনমজুর। সে উক্ত বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর ছাত্র। সে এক মুটো কাঁচা পাতা ১০ টাকা দরে বিক্রি করে যা পায় তা দিয়ে কাগজ কলম কিনে। পেয়ারা মৌসুম তার জন্য খুশির সময়। এ ব্যাপারে শাহছুফি দরবারের শাহজাদা মওলানা মুহাম্মদ এয়ার আলী রওশনহাট পেয়ারা বাজারে পেয়ারা কিনতে এসে বলেন, চন্দনাইশ উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে দৃষ্টি নন্দন কেড়ে নেয়া পেয়ারা বাগানে প্রতিবছর ফলন হওয়া এ সব পেয়ারা আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত। পেয়ারা মৌসুমে অসংখ্যক দরিদ্র পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হয় এ সময়ে। চট্টগ্রামের চন্দনাইশে উৎপাদিত পেয়ারা অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ফলন হয়েছে তুলনামুলক কম। অপরদিকে পেয়ারা গাছে ফুল আসার মুর্হুতে দফায় দফায় অবিরাম বৃষ্টি ও বন্যার ফলে পেয়ারার অন্যান বছরের তুলনায় অনেকটা কম হয়েছে। চন্দনাইশের কাঞ্চনাবাদ, লর্ট এলাবাহাদ, হাশিমপুর, পূর্ব দোহাজারী পাহাড়ী এলাকায় পেয়ারা চাষের বাম্পার ফলন হয় প্রতি বছর। এ বছরে অন্যান্য বছরের তুলনায় ফলন কম হওয়ায় তেমন লাভের মুখ দেখছে না বলে চাষীরা জানায়। চন্দনাইশের উৎপাদিত পেয়ারা চন্দনাইশ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় ট্রাকে করে বিক্রি জন্য নিয়ে যায় ব্যাপারীরা। চন্দনাইশের এ পেয়ারা দেখতে যেমন অনন্য সুন্দর, তেমনি এর স্বাদ ও পুষ্টিগুনও অপূর্ব। বাংলার আপেল খ্যাত চন্দনাইশের এই পেয়ারার সুনাম সর্বত্র। কাকডাকা ভোরে চাষীরা তাদের বাগান থেকে পেয়ারা তুলে লাল শালু কাপড় মুড়িয়ে আঁটি বেধে কাধে করে নিয়ে আসেন বাজারে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সংলগ্ন প্রসিদ্ধ বাজার কাঞ্চনাবাদ, রৌশন, বাদামতল, বাগিচাহাট ও অন্যান্য মহাসড়ক সংলগ্ন বাজারগুলো পেয়ারা বাজার বসে। এসব হাট বাজারে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাজার জমজমাট থাকে। এক টানা ৩ মাস পেয়ারা বসে। পেয়ারা শুরুতে ও শেষে পেয়ারার দাম বৃদ্ধি থাকে। প্রতি ভার পেয়ারা শুরু ও শেষে পর্যায়ে দুই থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। মাঝামাঝি সময়ে ঐ পেয়ারার প্রতি ভার ১ হাজার, ১২শ, ১৫শ টাকায় বিক্রি হয়। পেয়ারার প্রতি ডজন আকার হিসাবে সর্বনিম্নে ৩০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। এই সময় অনেক বেকার মানুষ পেয়ারা বিক্রি করে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করেন। পেয়ারা বিক্রিকে কেন্দ্র করে ছোট ছোট শিশু-কিশোর ও শিক্ষার্থীরা গাছের কাঁচা পাতা বিক্রি করেও তাদের আয়ের একটি উৎস খুজে পান। এতে করে তাদের লেখাপড়ার খরচ ও পরিবারের ব্যয় ভার কিছুটা মেটাতে পারে। পেয়ারার রং সতেজ থাকার জন্য খাচির চর্তুর দিকে কাঁচা পাতা মুড়িয়ে দেয়। এজন্য পেয়ারা বাজারের পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারের কিশোররা কাঁচা পাতা বিক্রি বাজার বসে। কুরবানির পর থেকে পেয়ারা বিক্রি হাট বাজার প্রায় শেষের দিকে। এ নিয়ে বেকার মানুষ ও কিশোরদের মনে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। পেয়ারা চাষিরা জানান, তারা আগামি পেয়ারা মৌসুমে অধিক ফলনের জন্য ইতোমধ্যে কোমর বেধে প্রস্ততি নিচ্ছেন। তবেই সহজ শর্তের ঋণ পেলে আশা অনুরূপ পেয়ারার ফলন সম্ভব হবে বলে পেয়ারা চাষি ইলিয়াছ, শুক্কুর, আলম প্রমুখ জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন