রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ইন্টারনেটের মূল্য কমিয়ে সেবা বাড়াতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার দ্রæত বেড়ে চলেছে। তবে ইন্টারনেট ব্যবহারের দ্রæত প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে গত ১০ বছরে ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথমূল্য অনেক কমে আসলেও প্রান্তিক জনসাধারণের খরচ লাঘবে কোন সুফল মিলছে না। প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ২০০৯ সালে যেখানে প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের মূল্য ছিল ২৭ হাজার টাকা তা পর্যায়ক্রমে কমতে কমতে বর্তমানে ৬২৫ টাকায় নেমে আসলেও গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট মূল্যে বা সেবার মানোন্নয়নে তার কোন ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। অথচ ব্যান্ডউইথমূল্য হ্রাস এবং গ্রাহকসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে ইন্টারনেটের মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসাই সঙ্গত ছিল। সরকারের সংশ্লিষ্টরা ব্যান্ডউইথমূল্য কমিয়ে আইএসপিদের মুনাফা বাড়িয়ে দিলেও গ্রাহকদের সুবিধা নিশ্চিত করতে পারেনি। গত জুনে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, সার্কভুক্ত দেশগুলোর জনসংখ্যা অনুপাতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারির সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ শীর্ষে অবস্থান করছে। ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়লেও সে অনুপাতে সেবার মান, আউটসোর্সিংসহ তথ্যপ্রযুক্তিখাত থেকে আয়বৃদ্ধির কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। সাধারণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারিদের দাবীর প্রেক্ষিতে সরকার ইন্টারনেটের মূল্য কমানোর কথা বললেও তার বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছেনা। গত এপ্রিলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম ৬ মাস পর মূল্য কমানোর সম্ভাবনার কথা প্রকাশ করলেও সর্বশেষ রিপোর্ট ইন্টারনেটের মূল্য কমবেনা বলে জানা যাচ্ছে।
এতদিন দেশের একমাত্র সাবমেরিণ ক্যাবল লাইন ও ল্যান্ডিং স্টেশনের চাপকে ইন্টারনেটের মন্থরগতি এবং সেবামূল্য না কমানোর অজুহাত হিসেবে দেখাতো সেবাদানকারিরা। বলা হয়েছে, দ্বিতীয় সাবমেরিণ ক্যাবল ও ল্যান্ডিং স্টেশন প্রতিষ্ঠিত হলে ইন্টারনেটের গতিবৃদ্ধির পাশাপাশি মূল্যও কমে আসবে। সরকারের যথার্থ উদ্যোগে ইতিমধ্যে দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিণ ক্যাবল ও ল্যান্ডিং স্টেশনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পটুয়াখালিতে অবস্থিত ল্যান্ডিং স্টেশন এবং দ্বিতীয় সাবমেরিণ ক্যাবল ‘সি.মি-ইউ-৫’ উদ্বোধন করেন। প্রথমটির চেয়ে আটগুন বেশী গতিসম্পন্ন এই সাবমেরিণ কেবলের যাত্রা শুরুতে দেশের ইন্টারনেট গ্রাহকদের জন্য কোন সুখবর না থাকা দু:খজনক। নতুন সাবমেরিণ ক্যাবলে ১৫০০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও উদ্বোধনের দিন থেকে ২০০জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানা যায়। তবে এই বাড়তি ব্যান্ডউইথের কারণে দেশে ইন্টারনেটের গতি বা সেবার মানবৃদ্ধির কোন বাস্তব উন্নতি লক্ষ্যনীয় হয়নি। পক্ষান্তরে ইন্টারনেটের মূল্যহ্রাসের বহু প্রত্যাশিত বিষয়টিতেও কোন ইতিবাচক সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছেনা। এখনো নানা অজুহাত দেখিয়ে ইন্টারনেটের মূল্য অপরিবর্তিত রাখার পক্ষেই কথা বলছেন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) প্রতিনিধিরা।
দ্বিতীয় সাবমেরিণ ক্যাবল সংযোগ হিসেবে সি.মি, ইউ-৫ ক্যাবলের সাথে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়া দেশের ইন্টারনেট সেবায় নিরাপত্তা ও আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক অগ্রগতি। সেই সাথে মোবাইল ফোন অপারেটরদের জন্য ফোর জি নীতিমালাও চুড়ান্ত করেছে। সেখানে মোবাইল অপারেটরদের দাবীর সাথে আপস করে সরকার খসড়া নীতিমালায় প্রস্তাবিত রেভিনিউ শেয়ারিংয়ের হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে বলে জানা যায়। অর্থাৎ মূল প্রস্তাবে অর্জিত আয়ের ১৫ শতাংশ রাজস্ব হিসেবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হওয়ার কথা থাকলেও তা’ সাড়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরও মোবাইল ফোন গ্রাহক বা ইন্টারনেট ব্যবহারকারিদের আশ্বস্ত করার মত কোন সুসংবাদ দেয়া যাচ্ছেনা। আমরা যখন ইন্টারনেট ব্যবহারের দিক থেকে সার্কভ‚ক্ত দেশগুলোর মধ্যে এমনকি ভারতের থেকে বেশ এগিয়ে থাকার জন্য আত্মপ্রসাদ লাভ করছি তখন ভারত তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বছরে লাখ লাখ লোকের নতুন কর্মসংস্থান করছে এবং শত বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স আয় করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সব ধরনের সম্ভাবনা থাকা সত্তে¡ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে বাংলাদেশের আয় এখনো বিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে পারেনি। যদিও সরকার ও উদ্যোক্তারা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের রফতানী বা রেমিটেন্স আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন মোটেও কঠিন বিষয় নয়। সে ক্ষেত্রে যে সব বিষয়ের প্রতি নজর দেয়া আবশ্যক তার মধ্যে ইন্টারনেটের গতি ও সেবার মানবৃদ্ধির পাশাপাশি প্রান্তিক পর্যায়ে দাম কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের আইজিডাবিøউ ও মোবাইলফোন অপারেটরদের সিন্ডিকেটেড মনোপলি ব্যবসায় লাগাম টেনে অস্বচ্ছতা, দুর্নীতি ও করফাঁকি বন্ধ করার পাশাপাশি গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের মূল্য কমিয়ে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করাই সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়, বিএসসিসিএল, বিটিআরসিসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মূল লক্ষ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। দেশের প্রায় ১০ কোটি মোবাইলফোন গ্রাহক এবং কোটি কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারি যেন এসব সংস্থার মুনাফাবাজির শিকার হয়ে না পড়েন সরকারকে সে বিষয়ে স্বচ্ছতা ও বিশেষ মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন