সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৮ জন
মিয়ানমারে অব্যাহত নিষ্ঠুর সেনা অভিযানে গণহত্যার মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৭৯ জন রোহিঙ্গাকে চট্টগ্রাম থেকে আটক করে টেকনাফে পাঠিয়ে দিয়েছে পুলিশ।
গতকাল (বুধবার) বিকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ছাড়া পাওয়া আট রোহিঙ্গার সাথে মহানগরীতে আটক ১৬ জনকে উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তার আগে মঙ্গলবার হাটহাজারীর এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয়া নারী, শিশুসহ ১৯ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠায় পুলিশ। একইদিন সীতাকুন্ডের সোনাইছড়ি থেকে ফেরত পাঠানো হয় আরও ১৮ জনকে।
এদিকে নগরীর কাপ্তাই রাস্তার মাথা ও শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে গতকাল দুপুরে ও মঙ্গলবার রাতে ১৬ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। চান্দগাঁও থানার ওসি আবুল বাশার জানান, রোহিঙ্গারা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম চলে এসেছিল। কাপ্তাই রাস্তার মাথায় বিভিন্ন পরিবহনে তল্লাশি চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতদের মধ্যে পাঁচজন মহিলা, চারজন পুরুষ ও দুইটি শিশু রয়েছে। মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামে প্রবেশের পথে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর বাকলিয়া থানার চেকপোস্টে বাস তল্লাশি করে তিন জন মহিলা ও দুইজন পুরুষকে আটকের কথা জানিয়েছেন থানার ওসি প্রণব চৌধুরী। তিনি জানান, রাতে বাসে তল্লাশি করে তাদের আটক করা হয়। বুধবার বিকালে তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
অপরদিকে বিভিন্ন সময়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসাদের মধ্যে আটজনকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার। তিনি বলেন, আমাদের কাছে একটি নির্দেশনা আছে যেসব রোহিঙ্গা নগরী বা অন্য কোথায় পালিয়ে যেতে চায় তাদের ধরে টেকনাফে পাঠিয়ে দেয়ার। সে হিসেবে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া আটজন এবং বাকলিয়া ও চান্দগাঁও থেকে আটক হওয়া ১৬ জনসহ মোট ২৪ জনকে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বেলা সাড়ে পাঁচটার দিকে পুলিশ পাহাড়ায় একটি বাসে করে রোহিঙ্গাদের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার হাটহাজারীর ফটিকা ইউনিয়ন থেকে ১৯ জন ও রোববার সীতাকুন্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়ন থেকে ১৮ জনকে আটক করে টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। চমেক হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ৮ জন ক্যাম্পে ফেরত গেছে। এ পর্যন্ত এ হাসপাতালে ৯৭ জন রোহিঙ্গা চিকিৎসা নিতে আসে। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ২ জন।
হাটহাজারী থেকে সংবাদদাতা জানান, টানা ১৫ দিনের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে আসা ১৯ রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ফেরৎ পাঠিয়েছে পুলিশ। হাটহাজারী ফটিকা কামাল পাড়ায় নুর আলম কলোনিতে মোঃ সিরাজুল ইসলামের ঘরে আশ্রয় নিয়েছিলেন মোঃ মিয়া হোসনের রোহিঙ্গা পরিবার ও তাদের কিছু স্বজন। পনের বছর আগে সিরাজুল ইসলাম বিয়ে করেছিলেন রোহিঙ্গা নারী মোঃ হোসনের কন্যা নুর জাহানকে। মূলত ঐ সূত্রেই তাদের হাটহাজারীতে আসা। মঙ্গলবার সেখানে এসব রোহিঙ্গার আগমনের খবর পেয়ে ছুটে যান হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাসুম। পরে তাদের সবাইকে সনাক্ত করে টেকনাফ উখিয়া বালুখালি ক্যাম্পে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এ সময় রোহিঙ্গা পরিবারটি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়লে তাদের ক্যাম্পের সুযোগ সুবিধার কথা জানানো হলে স্বস্তি নিয়েই তারা টেকনাফের উদ্দেশ্যে যেতে রাজি হয়। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাদের এক বেলা খাবার ও অসুস্থদের চিকিৎসা, ঔষধপত্র দিয়েই তাদের ক্যাম্পে পাঠান বলে জানান থানার এস আই আকরাম।
মোঃ মিয়া হোসনের পুত্র আমির হোসেন বলেন, আমার বোনের কাছেই আশ্রয়ের জন্যে হাটহাজারীতে আসা, কিছু পায়ে হেটে কিছু সড়কপথেই আমরা ১১ সেপ্টেম্বর সোমবার রাত ১২টায় হাটহাজারীতে আসি, মা বাবা নিজের বউ বাচ্চা বোন ভাগনি তথা পুরো পরিবার নিয়েই আমরা এসেছি, আরকান আর্মিদের হাতে তাদের কেউ হতাহত না হলেও ঘরবাড়ি সব কিছু জ্বালিয়ে দেয় তারা, হাটহাজারী থেকে ফিরে যাবার ব্যাপারে তিনি বলেন স্যারেরা (পুলিশ) যেভাবে সুবিধার কথা জানিয়েছেন সেভাবে ক্যাম্পে যাওয়াটাই মনে হয় ভাল হবে আমার বোনের জামাইও দিনমজুর কিভাবে আমাদের এত বড় পরিবার চালাবেন। পরিবারটি রাখাইনের মন্ডু থানাধীন কাদি বিল এলাকার বড্ডা কাদির পাড়ার বাসিন্দা।
বাঁশখালীতে আটক ২৬ জন
এদিকে চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালীর সাধনপুর, চাম্বল ও ছনুয়া থেকে নারী, শিশুসহ ২৬ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের চিহ্নিত করে আটক করা হয়। গতকাল বিকেলে তাদের কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবানের বিভিন্ন সীমান্ত পথে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা এসব রোহিঙ্গারা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বাঁশখালীতে আসে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন