রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাাতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ইতিপূর্বে পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরনার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এবার আরো সাড়ে তিন লাখ যুক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা সংখ্যা আট লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর সাহসী পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। রোহিঙ্গাদের সর্বাতœক সহযোগীতার পাশাপাশি আন্তর্জাাতিক অঙ্গনে তৎপরতা জোরদার করেছে সরকার। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মানবিক দিক বিবেচনা করে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ঠেঙ্গারচরে পুনর্বাসনের সিদ্বান্ত গ্রহন করা হয়েছে।
হাতিয়া উপজেলার মূল ভূখন্ড থেকে ২০ কিলোমিটার পূর্বে নদীপথ পেরিয়ে ঠেঙ্গারচরের অবস্থান। বর্তমানে ঠেঙ্গারচরের আয়তন প্রায় ৩৩০ বর্গকিলোমিটার অর্থাৎ হাতিয়া মূল ভূখন্ডের আয়তনের প্রায় সমান। এছাড়া দ্বীপটির চর্তূদিকে প্রতি বছর গড়ে ৩৫/৪০ বর্গ কিলোমিটার ভূমি জাগছে । জেলেদের সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯০ সালের দিকে জেলেরা এখানে একটি ডুবোচরের অস্তিত্ব খুঁজে পায়। পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে ডুবো চরটির আয়তন বৃদ্বির পাশাপাশি একই সময় দক্ষিনে আরো একটি নতুন চর জেগে ওঠে। স্থানীয় জেলেদের কাছে এটি গাঙ্গুরিয়ার চর নামে পরিচিত।
ঠেঙ্গারচরের তিন কিলোমিটার পশ্চিমে অর্থাৎ হাতিয়া মূল ভূখন্ডের পূর্ব দিকে ইসলাম চর নামক একটি চর তিন দশক পূর্বে জেগে উঠে। চল্লিশ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ইসলাম চরটি বিলীন হয়ে বর্তমানে পনের বর্গকিলোমিটারে এসে ঠেকেছে। ঠেঙ্গারচরে পূর্বদিকে সন্ধীপ উপজেলা এবং উত্তরে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষন কেন্দ্র স্বর্ণদ্বীপের অবস্থান। বিশেষ করে এর দক্ষিন, দক্ষিন পূর্ব এবং উত্তর দিকে প্রচুর ভূমি জাগছে। বিশাল চরটিতে মহিশের কয়েকটি বাথান রয়েছে। এছাড়া বঙ্গোপসাগরের মৎস শিকারীরা এখানে সাময়িক বিশ্রাম নেয়। হাতিয়া মূল ভূখন্ড থেকে ট্রলারযোগে ঠেঙ্গারচর যেতে সোয়া ঘন্টা সময় ব্যয় হয়। কয়েক বছর পূর্বে স্থানীয় বন বিভাগ এখানে বনায়ন শুরু করে। ফলে ঠেঙ্গার চরে বিভিন্ন অংশে গাছ গাছালিতে ভরে গেছে। একসময় ঠেঙ্গারচরসহ পূরো উপকূলীয় অঞ্চল জলদস্যু ও বনদস্যু অধ্যূষিত থাকলেও এখন দৃশ্যপট পাল্টেছে। বিশেষ করে হাতিয়ার জাহাইজ্যার চর বর্তমান স্বর্ণদ্বীপে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষন কেন্দ্রের পাশাপাশি নৌ-বাহিনী ও কোস্ট গার্ডের তৎপরতার সুবাদে আইন শৃঙ্খলা সন্তোসজনক।
রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে পূর্ণবাসনের সিদ্বান্ত গ্রহন করেছে। যার প্রেক্ষিতে কয়েকমাস পূর্বে প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বিবি পিএসসি, হাতিয়ার সাবেক এমপি ও আওয়ামীলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ইউএনও, পৌর মেয়র ও ওসিসহ কর্মকর্তাবৃন্দ ঠেঙ্গারচর পরিদর্শন করেন। এসময় তারা ঠেঙ্গারচরের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। ইতিমধ্যে চরটির অভ্যন্তরে হেলিপ্যাড ও অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে এবং সেখানে নৌ-বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে এর চর্তূদিকে বেঁড়ীবাঁধ নির্মাণের সিদ্বান্ত নিয়েছে সরকার। পরবর্তীতে এখানে সড়ক ও অবকাঠামো গড়ে উঠবে।
ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের পূর্ণবাসন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাতিয়ার সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী ইনকিলাবকে জানান, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মানবিক দিক বিবেচনা করে অসহায় রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে যে মহতী উদ্যোগ নিয়েছে সেটি ইতিহাস হয়ে থাকবে। স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। একই সাথে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে সরকারকে সর্বাতœক সহযোগীতা করতে আমরা প্রস্তুত। তিনি বলেন, ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসরে জন্য পর্যাপ্ত ভূমি রয়েছে। আগামী দুই বছরে এখানে অন্তত দশ লক্ষাধিক রেহিঙ্গা পুনর্বাসন সম্ভব হবে। হাতিয়া উপজেলার বিভিন্ন পেশাজীবির সাথে আলাপকালে তারা ইনকিলাবকে জানান, মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করা উচিত তবে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়টিকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিতে হবে। প্রয়োজনে ঠেঙ্গারচরে নৌ-বাহিনী, কোস্ট গার্ড মোতায়েন ছাড়াও পুলিশের স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে। হাতিয়া আসনের সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌস ইনকিলাবকে জানান, মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত এবং এদেশে আশ্রয় গ্রহনকারী রোহিঙ্গা শরনার্থীদের পুনর্বাসন সরকারের মহতী উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এজন্য আমার পক্ষ থেকে সর্বাতœক সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন