শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

জিয়া পরিবারসহ বিএনপি নেতাদের ১২শ’ কোটি টাকার সম্পদ

সংসদে ফখরুল ইমামের তথ্য

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জিয়া পরিবারের ১২টি দেশে ১২শ কোটি টাকা পাচার সংক্রান্ত গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্কের (জিআইএন) রিপোর্ট সরকারের হাতে এসেছে। এ নিয়ে তদন্ত চলছে এর বেশি কিছু আগে বলতে চাইছি না। তদন্তে প্রমাণিত হলে যারা দেশের জনগণের সম্পদ লুন্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সঙ্গে পাচারকৃত অর্থ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশে ফেরত আনা হবে।
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এদিন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যদের একাধিক লিখিত ও সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দেন সংসদ নেতা।
বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে মানিলন্ডারিং এর জন্য তদন্তের একটা ব্যবস্থা আছে। জিয়া পরিবারের সম্পদ পাচারের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের মাধ্যমে সত্যতা যাচাই করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে সম্পূরক প্রশ্ন করতে গিয়ে ফখরুল ইমাম স¤প্রতি প্রকাশিত গেøাবাল ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক প্রতিবেদন (জিআইএন) তুলে ধরেন। এতে জিয়া পরিবারসহ বিএনপি নেতাদের ১২টি দেশে অর্থ পাচার তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, এতে বিএনপি’র চেয়াপারসন খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে তার পরিবারের যে টাকা পাচার করা হয়েছে তার একটা রিপোর্ট রয়েছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী কেবল দুবাই নয়, অন্তত ১২টি দেশে জিয়া পরিবারসহ বিএনপি নেতাদের সম্পদ আছে। যার মূল্য ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
কার কোথায় কী সম্পদ আছে- সেটি তুলে ধরে ফখরুল ইমাম বলেন, সৌদি আরবে আহমেদ আল আসাদের নামে আল-আরাবার শপিং মলটির মালিক খালেদা জিয়া। কাতারে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন ‘ইকরা’ এটার মালিকও হলেন খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান। এছাড়া খালেদা জিয়ার ভাতিজা তুহিনের তিনটি বাড়ি আছে কানাডায়। আর সিঙ্গাপুরে ‘হোটেল মেরিন ডে’ মালিকানার ১৩ হাজার শেয়ার সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফের। সাবেক তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ব্যরিস্টার আমিনুল হকের নামে লন্ডনে স্ট্যামফোর্ডে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নামেও অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। মির্জা আব্বাসের স্ত্রীর নামে দুবাইতে রয়েছে বিশাল বহুতল ভবন। সিঙ্গাপুরে মির্জা আব্বাস তার সন্তানের নামে কিনেছেন দুটি অ্যাপার্টমেন্ট। বিএনপি নেতা নজরুল ইসলামের সিঙ্গাপুরে বিশাল বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট আছে।
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এটা তো সবাই জানেন বিএনপি ক্ষমতায় এসে হত্যা ও সন্ত্রাসের পাশাপাশি দুর্নীতি লুটপাট করে বিদেশে অর্থ পাচার করা মানি লন্ডারিং করা এই অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে। তারা আন্দোলনের নামে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। একদিকে সন্ত্রাস জঙ্গীবাদ, অপরদিকে ক্ষমতায় থাকতে দুর্নীতি করা , অর্থ পাচার করা এধরনের বহু অভিযোগ তো জনগণ সব সময় করেছে এবং এটা সবাই জানে। এরই মধ্যে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের পাচার করা টাকা ফেরত আনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারই বাংলাদেশের ইতিহাসেন প্রথম বিদেশে পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
সংসদের বিরোধী দল থেকে প্রশ্নটি আসায় ধন্যবাদ জানিয়ে সংসদ নেতা বলেন, সরকারি দলের কেউ প্রশ্নটি আনলে অনেকেই মায়াকান্না করে বলতেন সরকার হিংসা করে এগুলো বলছে। যাই হোক তথ্যগুলো যখন বের হয়েছে তখন নিশ্চয় সরকারের কাছে আছে এবং এটা নিয়ে তদন্ত চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে একটি তদন্ত কমিটি কাজ করছে। এই তদন্তের মাধ্যমে এ তদন্ত যাচাই করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সঠিক তথ্য পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, জনগণের সম্পদ যারা লুটে নিয়েছে নিশ্চয় তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত করে যখনই আমরা সঠিক তথ্য পাব কোথায় কীভাবে রয়েছে নিশ্চয় আমরা ফেরত আনার পদক্ষেপ নেব। ইতোমধ্যে আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। তদন্ত চলার স্বার্থে হয়তো সব বলা সম্ভব নয়। তবে সত্যতা প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগমের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একটি শান্তিপ্রিয় দেশ গঠনে সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে আসছে। এ কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকারের দক্ষ পরিচালনায় অর্থনীতির সব সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সামাজিক সূচকগুলোর অগ্রগতিতে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বিগত মেয়াদ থেকে রূপকল্প-২০২১, দিন বদলের সনদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার কর্মসূচি নেয়। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সরকার সুখী সমৃদ্ধ মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ গঠনে বদ্ধপরিকর।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে জঙ্গী কর্মকান্ড একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রময় নয়। তবে এদেশের মানুষ ধর্মভীরু হলেও ধর্মান্ধ নয়। ফলে ইতোমধ্যে জঙ্গী দমনে আমাদের সফলতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হচ্ছে। জঙ্গী দমনে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। এটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে।
তিনি বলেন, জঙ্গিরা যেমন নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করার চেষ্টা চালাচ্ছে, তেমনি তাদের অর্থের যোগানদাতা ও মদদদাতাগণও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। বিদেশ থেকে আসা রেমিটেন্স এবং দেশীয় অর্থ কোন জঙ্গি তৎপরতায় ব্যবহৃত হচ্ছে কি-না- সে বিষয়েও গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত আছে। এছাড়া কোনো বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, ক্লিনিক, কোচিং সেন্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এনজিও, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে জঙ্গি তৎপরতা ও সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে কি না, সীমান্তে অবৈধ অর্থের লেনদেন, আদান-প্রদান, চলাচল ও স্থানান্তর একই সঙ্গে বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিস, মোবাইল ব্যাংকিং ও বিকাশের মাধ্যমে অস্বাভাবিক অর্থ আদান প্রদান হচ্ছে কি না সে বিষয়ে নজরদারি অব্যাহত আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গী অর্থায়ন সংক্রান্ত রুজুকৃত মামলাসমূহ সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। জঙ্গী অর্থায়নের সঙ্গে আরও বেশকিছু ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান যুক্ত রয়েছে মর্মে সন্দেহ করা হচ্ছে। যাদের সনাক্ত পূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। দেশে জঙ্গি উৎস অনুসন্ধান কার্যক্রম আরও জোরদারকরণ এবং এ কার্যক্রম অধিকতর সমন্বয়ের লক্ষ্যে গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইন-শৃৃঙ্খলা বাহিনী সমূহ নিয়মিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জঙ্গী অর্থায়নের অভিযোগ পাওয়া মাত্র তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন