মিয়ারমারের ওপারে মংডু টাউনশীপে এখন পর্যন্ত ১২২ গ্রাম আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ওপারে ফের দাউ দাউ ফের আগুন জ্বলছে। প্রাণের ভয়ে রোহিঙ্গারা প্রতিদিন পালিয়ে আসছে। আগুনের ধোঁয়া মিশে যাচ্ছে মেঘের সঙ্গে। বাংলাদেশের টেকনাফ সীমান্ত থেকেও রাখাইন প্রদেশে লাগিয়ে দেয়া আগুনের লেলিহান শিখা দেখা যাচ্ছে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বলতে দেখা গেছে। সীমান্তের কাছাকাছি বসবাসকারী মানুষ জ্বলন্ত গ্রামগুলো দেখতে ভীড় জমিয়েছে। বর্মী সেনারা নতুন করে গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। জাতিগতভাবে রোহিঙ্গা নিধনের জন্য এখনো আগুন জ্বলছে মিয়ানমারে।
বৃহস্পতিবার সারাদিন দেশটির সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকার পেরানপুরু, হামপাড়া, মাঙ্গালা, কোয়াংবন, বাঘঘোনা, ফইজিপাড়া, গর্জনদিয়া, সারাপাড়া, বড়ডেইল ও খোনকারপাড়া, ছেরাপাড়া, মোল্লাপাড়া, খুইন্নার পাড়া, গজ্জনদিয়া, বডডেইল পাড়া, খেয়ারী পাড়া, নাইনসংপাড়া গ্রামে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। একই সঙ্গে হেলিকপ্টার থেকে দাহ্য পদার্থ ছড়িয়ে দেওয়া হয়। অবশ্য ওই পারে অঝরধারায় বৃষ্টি নামায় আগুন বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
মিয়ানমার থেকে কোনোমতে জীবন বাঁচিয়ে যখন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছেন, তখন এখানেও দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অনেকেই। হুমকি-ধমকি ও পদে পদে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন তারা।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড পুলিশ ও উগ্র বৌদ্ধদের নির্যাতনের শিকার হয়ে সহায়সম্বল ও স্বজনদের হারিয়ে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা প্রতারিত হচ্ছেন ঘাটে ঘাটে।
গত ২৫ আগস্ট গভীর রাতে নিরাপত্তা রক্ষীদের উপর হামলার প্রতিবাদে মিয়ানমারের সেনারা রাখাইন প্রদেশে যৌথ অভিযান শুরু করে। এরপর থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার প্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন, এখনো প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। জাতিসংঘের হিসেব মতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে প্রায় ৪ লক্ষাধিক।
টেকনাফে আরো ৪ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার
টেকনাফে নাফ নদী থেকে দুই শিশুসহ চার রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার সাবরাং নয়াপাড়া ও শাহপরীর দ্বীপ এলাকা থেকে ওই মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মো. মাইন উদ্দিন খান বলেন, সকালে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ থেকে এক শিশু ও নারী এবং নয়াপাড়া থেকে একজন পুরুষ ও শিশুর লাশ উদ্ধার করে। তাদের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারের সহায়তায় যথাযোগ্য মর্যাদায় দাফনের ব্যবস্থা চলছে। লাশ চারটি রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাডুবির বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানান ওসি। এদিকে গেলো মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার ভোরে নাফ নদীতে দুইটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছিল। সে ঘটনায় বুধবার রাতে ১৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া গেলো ২৯ আগস্ট থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে মোট ২২টি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।
উল্লেখ্য, ২৫ আগষ্ট রাখাইনের কয়েকটি পুলিশ ফাঁড়ি ও তল্লাশি চৌকিতে গেলো ২৫ আগস্ট রাতে সন্ত্রাসী হামলা হয়। এর জেরে সেখানে নতুন করে সহিংসতা সেনা অভিযান শুরু হয়। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে।
টেকনাফে ইয়াবাসহ আটক-১
টেকনাফে ইয়াবা ও মিয়ানমারের মুদ্রাসহ এক ইয়াবা পাচারকারীকে আটক করেছে বিজিবি। ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে টেকনাফ ২বিজিবি ব্যাটালিয়নের দমদমিয়া বিওপির সুবেদার মোঃ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে দায়িত্বরত একটি টহলদল টেকনাফগামী একটি রোহিঙ্গা বোঝাই সিএনজি হতে স্কুল ব্যাগ তল্লাশী করে ৩৬লাখ ৬৯হাজার ৬শ টাকার ১২হাজার ২শ ৩২পিস ইয়াবা বড়ি, মিয়ানমার মুদ্রা ৬৫হাজার কিয়াত, বাংলাদেশী নগদ ২৭হাজার টাকা ও ৮হাজার টাকা দামের একটি সিম্পুনি মোবাইলসহ মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার মন্ডু থানার নন্দাখালীর মৃত নুর মোহাম্মদের পুত্র মুজিবুর রহমান (২৫)কে আটক করে। আটক ব্যক্তিকে ইয়াবা বহন ও অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের দায়ে পৃথক মামলায় টেকনাফ মডেল থানায় সোর্পদ করা হয়েছে। টেকনাফ ২বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল এসএম আরিফুল ইসলাম অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন