মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন : লন্ডনে পণ্য পরিবহন নিষিদ্ধ : কি হচ্ছে বাংলাদেশে?

প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

॥মোবায়েদুর রহমান॥
গত রোববার দৈনিক ‘ইনকিলাবের’ প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের ওপর শকুনের থাবা’। খবরটিকে সমর্থন করেও বলছি, শকুনের থাবা বলব না, বলব শকুনের শ্যেন দৃষ্টি। আর ক্রিকেট বা অন্যান্য স্থানের ওপর পড়ছে বাজ পাখির থাবা। তো শকুনের শ্যেন দৃষ্টি বলুন, আর বাজ পাখির থাবাই বলুন, সেটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের ওপরই শুধু পড়েনি, পড়েছে সমগ্র বাংলাদেশের ওপর। ক্রিকেটের বিষয়টি তো সামান্য। ২ জন বোলারের বোলিং অ্যাকশনকে কেউ কেউ বিতর্কিত বলছেন। যদি সত্যিই সত্যিই বোলিং অ্যাকশন বিতর্কিত হয় তাহলে হয়তো তারা ২ জন খেলা থেকে বাদ পড়বেন। অন্য ২ জন এসে তাদের স্থলাভিষিক্ত হবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ওপরে বাজ পাখির কালো থাবার যে ছায়াপাত দেখা যাচ্ছে তার প্রভাব অনেক দূর যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঢাকা বিমানবন্দরে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নেই, এই কারণে কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ থেকে পণ্য পরিবাহী কার্গো বিমানের ইংল্যান্ডে প্রবেশ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তখনই কেউ কেউ আশঙ্কা করছিলেন যে, ব্যবসায়ীরা হয়তো ভিন্ন পথে ভিন্ন বিমান ক্যারিয়ারে বাংলাদেশের পণ্য ইংল্যান্ডে পাঠানোর চেষ্টা করবেন। দেখা যাচ্ছে, এই ধারণা শুধু বাংলাদেশী পলিটিশিয়ান, ব্যবসায়ী এবং সাংবাদিকরাই করেননি, এই আশঙ্কা হয়তো ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষও করেছেন। তাই শনিবার ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, কাতার এয়ার ওয়েজ যোগেও যদি বাংলাদেশী পণ্য ইংল্যান্ডে প্রবেশের চেষ্টা করে তাহলে সেটিকেও ইংল্যান্ডে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। ইংল্যান্ডের এই সিদ্ধান্তের ফলেই বোঝা যায় যে, বিষয়টিকে তারা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছে। এখন যদি ভবিষ্যতে অন্যান্য এয়ার ওয়েজের বিমানে ইংল্যান্ডে বাংলাদেশী পণ্য পরিবহনের চেষ্টা করা হয় তাহলে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ সেই সব এয়ার ওয়েজকেও ইংল্যান্ডে বাংলাদেশের পণ্য পরিবহনে নিষিদ্ধ করা হতে পারে।
এখানে স্মরণ করা যেতে পারে যে, মাসাধিক কাল পূর্বে পণ্যবাহী কার্গো বিমান অস্ট্রেলিয়া প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। আমার মনে হয়, অস্ট্রেলিয়ার নিষেধাজ্ঞাকে কেউ তত গুরুত্বের সাথে নেননি। কারণটি সম্ভবত এই হতে পারে যে, ভৌগোলিক আয়তনের দিক দিয়ে অস্ট্রেলিয়া একটি মহাদেশের সমান হলেও জনসংখ্যা এখন পর্যন্ত ৩ কোটিতে পৌঁছায়নি। তাই পরিবাহিত পণ্যের পরিমাণের কথা চিন্তা করে অনেকে হয়তো এটিকে হালকাভাবে নিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের কর্তা ব্যক্তিরা হয়তো সেই সময় ভুলে গিয়েছিলেন যে, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা এবং কানাডা এই ধরনের যে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করুক না কেন তারা সেটি সম্মিলিতভাবেই গ্রহণ করে। তবে সেই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নে হয়তো কিছুটা আগু-পিছু হতে পারে। এর আগে বিশেষজ্ঞ মহলে জল্পনা-কল্পনা হচ্ছিল যে, শুধু ইংল্যান্ড নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশও হয়তো ইংল্যান্ডের পদক্ষেপ অনুসরণ করতে পারে।
ইংল্যান্ডের এই পদক্ষেপের ফলে সেই ধারণাই প্রমাণিত হলো। অস্ট্রেলিয়া প্রথমে যে পথে হাঁটল ইংল্যান্ডও সেই পথেই হাঁটল। অনেকে ভেবেছিলেন যে, অস্ট্রেলিয়া হয়তো মাস খানিকের মধ্যেই তার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া তো দূরের কথা, মড়ার উপর খাঁড়ার ঘার মতো ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার পথে গেল। আমরা জানি না, আর কোন দেশ এদের পথে হাঁটবে। তবে ইংল্যান্ডের পদক্ষেপের ফলে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ ৪/৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। এখন যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নও ব্রিটেনকে অনুসরণ করে তাহলে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য মারাত্মকভাবে হোঁচট খাবে বলে বিশেষজ্ঞ মহল আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
॥দুুই॥
বিষয়টিকে ওপর থেকে যত সহজ মনে হচ্ছিল, যতই দিন যাচ্ছে ততই দেখা যাচ্ছে যে, বিষয়টি অতো সহজ নয়। বরং দিনের পর দিন বিষয়টি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। ঢাকার একটি পরিচিত সংবাদ পত্রে গত রবিবার খবর বেরিয়েছে যে, ইংল্যান্ডের এই অ্যাকশনের চেইন রি-অ্যাকশন অন্যান্য দেশের ওপর এবং অন্যান্য সেক্টরেও পড়বে। ইতিমধ্যেই অসমর্থিত খবরে প্রকাশ, ইংল্যান্ড বাংলাদেশের সাথে যাত্রী পরিবহন বিমান সার্ভিস অর্থাৎ প্যাসেঞ্জার সার্ভিসও নাকি বন্ধ করে দেবে। এ ব্যাপারে দৈনিক ‘বাংলাদেশ প্রতিদিন’র রবিবারের সংখ্যায় দ্বিতীয় প্রধান সংবাদ হিসেবে যে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে তার শিরোনাম হলো, ‘ঢাকা-লন্ডন যাত্রীবাহী ফ্লাইট বন্ধের শঙ্কা’। সংবাদে বলা হয়েছে,
‘ঢাকা-লন্ডন যাত্রীবাহী ফ্লাইটও যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা ঝুঁকিতে রয়েছে। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে দুই দেশের সম্মত কর্ম পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারের কাজ শুরু না হলে বাংলাদেশ বিমানের যুক্তরাজ্যগামী সরাসরি যাত্রীবাহী ফ্লাইট এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে যুক্তরাজ্য সরকারের এক সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রবিবার ঢাকায় আসে। আর আগামী ২২ মার্চ আসছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পর্যবেক্ষণ দল। তাদের দেয়া পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভর করবে কার্গো ফ্লাইটের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার এবং যাত্রীবাহী ফ্লাইটের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি। এর এক দেড় মাস আগে একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে অস্ট্রেলিয়া। সংশ্লিষ্টরা বলছে, বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন মঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লিখে ৩১ মার্চের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্যথায় বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ব্রিটেনে যাত্রী চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
সূত্র জানায়, ব্রিটিশ গোয়েন্দারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন বিমানবন্দরে। শাহজালাল বিমানবন্দরের বাইরে হাজার হাজার দর্শনার্থী প্রতিদিন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। এটিকেও তারা এক ধরনের নিরাপত্তা হুমকি বলে মনে করছেন।
শুধু ইংল্যান্ডই নয়, আমেরিকাও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের ঐ রিপোর্টে প্রকাশ, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা করতে এ মাসেই আসছে যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রতিনিধি দল। ২২ ও ২৩ মার্চ তাদের ঢাকা সফরে আসার কথা। বিমানবন্দরের নিরাপত্তার পাশাপাশি মার্কিন প্রতিনিধিরা সাইবার নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয়েও আলোচনা করবে।
রিপোর্টে বলা হয়, আমেরিকা ইতিপূর্বে ঢাকা-আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছিল। তখন ৩ মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে যৌথ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা ঠিক করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করবে নিউইয়র্ক ফ্লাইটের ভবিষ্যৎ।
বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারের তাগিদ দিচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। এরপর থেকেই বাংলাদেশসহ আরও কিছু দেশকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বাড়াতে যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্ট তাগাদা দিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পাশ্চাত্যের কয়েকটি দেশের পক্ষে বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরের নিরাপত্তা মূল্যায়নের দায়িত্ব দেয়া হয় যুক্তরাজ্যকে। এরপর থেকে ঢাকায় কয়েক দফা সফর করেছেন যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা। তারা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারের তাগিদ দিয়ে আসছেন।
আলোচ্য রিপোর্টটি যদি তথ্যভিত্তিক হয় তাহলে চলতি মাস বাংলাদেশ বিমানের জন্য অত্যন্ত ক্রুশিয়াল হবে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন।
॥তিন॥
বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুতর ও উদ্বেগজনক আরেকটি খবর এসেছে মালয়েশিয়া থেকে। কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার ২ সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছিল যে, আগামী ৩ বছরের মধ্যে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার শ্রমিক নেবে। এই মর্মে ২ দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক ও স্বাক্ষরিত হয়। সমঝোতা স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ১ মাসও যায়নি। মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন যে, বাংলাদেশ থেকে যে সাড়ে ৩ লক্ষ শ্রমিক নেয়ার কথা ছিল সেই সমঝোতা স্মারক বাতিল করা হয়েছে। বাতিল করার কারণ সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে যে, মালয়েশিয়ায় যে বিপুল সংখ্যক বাংলদেশী মানুষ বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবৈধভাবে কাজ করছেন তাদেরকে বৈধ করার বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে। এসব অবৈধ বাংলাদেশীকে বৈধ করার পরেই নতুন নিয়োগ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা যেতে পারে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, মালয়েশিয়াতে বর্তমানে ৬ লক্ষ বাংলাদেশী রয়েছে। এদের মধ্যে ৪ লক্ষ বৈধ আর ২ লক্ষ অবৈধ। এই ২ লক্ষের বৈধতার বিষয়টি আগে বিবেচনা করা হবে।
এ ব্যাপারে জনশক্তি রফতানি বিশেষজ্ঞদের অনেকে মন্তব্য করেছেন যে, মালয়েশিয়ায় সাড়ে ৩ লক্ষ বাংলাদেশী জনশক্তি রফতানির সিদ্ধান্ত এবং মাত্র ১ মাসেরও কম সময়ের মধ্যে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল-এই সমগ্র বিষয়টিই রহস্যের অন্ধকারে ঢাকা আছে। কেনই বা তারা এতো বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী জনশক্তি আমদানি করতে চাইল আর কেনই বা অকস্মাৎ কোনোরূপ কারণদর্শানো ছাড়াই সেটি বাতিল করা হলো, সেটি নিয়ে রাজনৈতিক মহল বিভ্রান্তির মধ্যে আছেন। বিভ্রান্তির কারণ এই যে, আগামী ২/৪ মাসের মধ্যে এই সমস্যা সমাধানের কোনোরূপ আলামত পাওয়া যাচ্ছে না।
সচেতন পাঠকরা অবশ্যই জানেন যে, কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির পরিভাষা ধার করে ওরা বলছেন, ঐ টাকা হ্যাক্ট হয়েছে। ৮১ মিলিয়ন বাংলাদেশী টাকায় ৬শ’ ৪০ কোটি টাকা। আরো ৬ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৪৮ হাজার কোটি টাকা চুরি হয়ে যাচ্ছিল। তবে হ্যাকাররা সাইবার চোরদের পাসওয়ার্ড হ্যাক করে বসাতে একটি সংখ্যা ভুল বসিয়েছিল। তাই বাংলাদেশ প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা চুরি হওয়া থেকে বেঁচে গেছে। এগুলো নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন। কেউ কেউ বলছেন, হাইলি টেকনিক্যাল। সোজা বাংলায় বলতে হয় যে, সাধারণ মানুষের হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফসল এই অর্থ আজ এক দল সাইবার চোর বাংলাদেশী এক বা একাধিক অফিসারের সাথে যোগসাজশ করে লুট করছে। ব্যাংক লোপাট এই প্রথম নয়। ইতিপূর্বে ব্যাংকে জালিয়াতি করে যে অর্থ ওঠানো হয়েছে তার পরিমাণ হাজার হাজার কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, হলমার্ক, যুবক, ডেসটিনি, শেয়ার বাজারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে গেছে। অথচ কোনো ব্যক্তির কোনো গুরুদ- হয়নি এজন্য। তাই লুটেরাদের সাহস বেড়ে গেছে এবং এবার তারা হাত বাড়িয়েছে দেশের সর্বোচ্চ ব্যাংক অর্থাৎ সেন্ট্রাল ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি। এই লুণ্ঠন প্রতিহত করতে এবং লুটেরাদের কঠিন শাস্তি দিতে সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু বিরোধী দল? তারা এই ব্যাপারে যুৎসই বক্তব্য রাখতেও ব্যর্থ হয়েছে।
অনেক দিন পর এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের একটি বক্তব্য চোখে পড়ল। মওদুদ সাহেব সম্পর্কে বাজারে নানা রকম কথা রয়েছে। তবে তার এই বক্তব্যটি হয়েছে পলিটিশিয়ান লাইক বা রাজনীতিক সুলভ। তিনি বলেছেন, ‘হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮শ কোটি টাকা চুরির ঘটনা মারাত্মক নৈরাজ্য। তিনি বলেন, আজ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো খালি হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত কোনোটির বিচার হয়নি। এখন তারা থাবা দিয়েছে সেন্ট্রাল ব্যাংকে (বাংলাদেশ ব্যাংক)।
গত শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ প্রশ্ন তুলে বলেছেন, এটা কি কেউ বিশ্বাস করবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার সহযোগিতা ছাড়া এই টাকা চুরি হয়েছে? বাংলাদেশের কোনো মানুষ এটা বিশ্বাস করবে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘শেয়ারবাজার, ডেসটিনি, হল-মার্কের মাধ্যমে সরকারের মদদপুষ্ট ব্যবসায়ীরা জনগণের অর্থ চুরি করেছে। এখন প্রতিদিন আমরা শিশু হত্যা, সহিংসতার খবর পাই। আজকে তো বিএনপির কঠিন কোনো কর্মসূচি নেই। তারপরও কেন এত অস্থিরতা, কেন এত নৈরাজ্য?’
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের কার্গো বিমান বন্ধ করা এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিক নিয়োগের চুক্তি স্থগিত করার ঘটনা উল্লেখ করে মওদুদ বলেন, জবাবদিহি না থাকায় আজ এই অবস্থা। তিনি বলেন, ‘জবাবদিহি ও গণতন্ত্র না থাকলে রাজনৈতিক অঙ্গনে শূন্যতা বিরাজ করে। এ সুযোগে জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, মৌলবাদের আবির্ভাব হওয়াটা অবধারিত। আজকে সেটিই আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
॥চার॥
ওপরে অনেকগুলো কাহিনী এবং কেলেঙ্কারি তুলে ধরা হলো। কিন্তু একটি প্রশ্ন সরকার বা বিরোধী দল কেউ করছে না। কিন্তু যারা চিন্তাশীল মানুষ তাদের মনকে সেই প্রশ্ন দারুণভাবে আলোড়িত করছে। মওদুদ সাহেবের ভাষায় বলা যায়, এখন তো দেশে বিএনপি বা জামায়াতের কঠোর আন্দোলন নেই। কঠোর আন্দোলন তো দূরের কথা, দেশে কোনো আন্দোলনই নেই। সাহিত্যের ভাষা ধার করে বলতে হয়, দেশে কবরের শান্তি বিরাজ করছে। তারপরেও দেশে এই লুটপাট কেন? কেন একমাত্র ভারত ছাড়া পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি অংশ বাংলাদেশের ওপর ক্ষ্যাপা?
রাষ্ট্র পরিচালনায় আমাদের গলদ কোথায়? হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠনে শুধুই কি সাইবার চোররাই জড়িত? না কি অন্ধকার সুড়ঙ্গ থেকে এর পেছনে মদদ জোগাচ্ছে একাধিক রাঘব বোয়াল? কে তারা? কারা তারা?
journalist15@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Ashraful Alam Narail ১৫ মার্চ, ২০১৬, ১০:৪১ এএম says : 1
এটা আ:লীগ সরকারের উন্নয়নের জন্য হচ্ছে।
Total Reply(0)
Sohel Khan ১৫ মার্চ, ২০১৬, ১০:৪২ এএম says : 0
এগুলি সবই পরিকল্পিত ভাবেই করা হচ্ছে।
Total Reply(0)
MD Sanaul ১৫ মার্চ, ২০১৬, ১০:৪২ এএম says : 1
বাংলদেশ গোল্লায় যাইতেছে
Total Reply(0)
আরিফ হাসান ১৫ মার্চ, ২০১৬, ১০:৪৩ এএম says : 0
বাংলাদেশ তো স্বশান আগেই হয়েছে বাকি ছিল ভিক্ষার থলি হাতে দেওয়ার এখন তাই কার্যকর করা হচ্ছে।
Total Reply(0)
Abdullah Al Mamun ১৫ মার্চ, ২০১৬, ১০:৪৩ এএম says : 0
দুরর্ভিক্ষ
Total Reply(0)
Dr. Md. Saiful Islam ১৫ মার্চ, ২০১৬, ১০:৪৪ এএম says : 0
ওদেরকে লুটেপুটে খেতে দাও। ওরা অনেক ক্ষুধার্থ।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন