সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

কালেক্টরেট ভবন ও জজ কোর্টসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা

নরসিংদীতে খাল দখল করে বালু ভরাট

| প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : নরসিংদীতে রেলস্টেশন সংলগ্ন ৩শত বছরের পুরনো সরকারী খাল দখল করে বালু ভরাট শুরু করেছে ভ‚মিদস্যুরা। একের পর এক রেলওয়ের কোটি কোটি টাকা মূল্যের জায়গা দখলের ধারাবাহিকতায় এবার ভ‚মিদস্যুরা নরসিংদী জেলা শহরের একমাত্র খালটি দখলে নিয়েছে। সাথে দখলে নিয়েছে নরসিংদী সদর উপজেলা কমপ্লেক্সের বিশাল জলাভূমি। আর এদেরকে মদদ যোগাচ্ছে রেলওয়ের এস্টেট বিভাগের এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, রেলওয়ের স্থানীয় কিছু দালাল এবং বালু দস্যুরা। এ খালটি ভরাট করা হলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পানির নিচে তলিয়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। সাথে প্লাবিত হয়ে যাবে নরসিংদী জজ কোর্ট, পুলিশ সুপার কার্যালয়, সিভিল সার্জন কার্যালয়, গণপূর্ত, সার্কিট হাউজসহ সরকারী অফিস আদালত ও সরকারী কোয়াটার। নাকের ডগায় ভূমিদস্যুদের এই দখলবাজী দেখেও স্থানীয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
জানা গেছে, ১৭শ’ শতকের ভূমিকম্পে ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ পরিবর্তনের পর নদের পূর্ব তীরবর্তী এলাকা তথা নরসিংদী শহরের পশ্চিম এলাকায় ব্যাপক পানিজটের সৃষ্টি হয়। সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই গ্রামের পর গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে যেতে থাকে। এই পানিজটের শিকার হয় দগরিয়া, রাজাদী, চিনিশপুর, ভেলানগর, তরোয়া, ভাগদী, বাসাইল, বানিয়াছল, ব্রাহ্মন্দী, বৌয়াকুড় ইত্যাদি গ্রামসমূহ ও এর আশেপাশের বিশাল জনপদ। সে সময় ব্রহ্মপূত্র নদ ও প্লাবিত গ্রামগুলোর পানি পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে একটি কমবেশী ৩ কিলোমিটার লম্বা একটি নালার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে তৎকালীন জমিদাররা নালার গতিপথ ধরে এই পানিজটের স্থায়ী সমাধান হিসেবে চিনিশপুরের পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে পূর্ব দিকে দগরিয়া, চিনিশপুর, তরোয়া, বিলাসদী ও ব্রাহ্মন্দীর ভিতর দিয়ে হাড়িধোয়া নদী পর্যন্ত খালটি খনন করে। ১৯শ শতকের শেষ দিকে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় দফায় ভৈরব-টঙ্গী রেললাইন নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করে। সে সময় খালের পাড় ঘেসে রেল কর্তৃপক্ষ মাটি কেটে রেললাইন নির্মাণের কারণে খালটি বিভিন্ন জায়গায় রেলওয়ের জায়গার সাথে একাকার হয়ে যায়। কিন্তু এরপরও খালটি ৩শত বছর ধরে নরসিংদী শহরের পশ্চিমাঞ্চলের বৃষ্টি, বন্যা ও প্লাবনের পানি বহন করে হাড়িধোয়া নদীর মাধ্যমে মেঘনায় সরবরাহ করে আসছে। এরশাদের শাসনামল থেকে খালটি নরসিংদী শহর ও শহর এলাকার এক শ্রেণীর ভূমিদস্যুদের দখলে চলে যেতে শুরু করে।
এই ৩শত বছরের পুরনো খালটি সংরক্ষণে স্থানীয় প্রশাসন এবং পৌর কর্তৃপক্ষ কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। নরসিংদী শহরের ব্রাহ্মন্দী খালপাড় এলাকা থেকে শুরু করে পূর্ব দিকে হাড়িধোয়া নদী পর্যন্ত খালটি অবৈধ দখলে চলে যায়। এ অবস্থায় নরসিংদী পৌর কর্তৃপক্ষ ব্রাহ্মন্দী খালপাড় থেকে পূর্বব্রাহ্মন্দী রেলব্রীজ পর্যন্ত পাইপ ড্রেন নির্মাণ করে উপরে মাটি ভরাট করে দেয়। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ খালের জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করতে পারেনি। এই অবস্থায় ভূমিদস্যুদের দৃষ্টি পতিত হয় খালের পশ্চিমাংশে। বিগত বছরাধিককালের জায়গা দখলে নিয়ে যায়। তখনও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। স¤প্রতি ভূমিদস্যুরা এ খালটি দখলে নিয়ে বালু ভরাট করার জন্য হাড়িধোয়া নদী থেকে বিশাল লোহার পাইপ বসিয়ে খালে বালু ভরাট করতে শুরু করেছে। এ দৃশ্য দেখার পর স্থানীয় জনসাধারণ সজাগ হয়ে উঠে। তারা ঘটনাটি সাংবাদিকদের গোচরীভূত করে। পরে নরসিংদী প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল মোহাম্মদ মানিক ঘটনাটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজাকে জানালে তিনি ভূমিদস্যুদেরকে বালু ভরাট করতে নিষেধ করেন। ভূমিদস্যুরা খালটি থেকে তাদের ড্রেজারের পাইপ সরিয়ে নিচ্ছে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন