শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার থেকে
আগামী ২০ মার্চ দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী পৌরসভার ভোট গ্রহণ। আওয়ামী লীগ বিএনপির তিন জন প্রার্থী থাকলেও এখানে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে দ্বিমুখী। আর তাও ঘরে ঘরে। আওয়ামী লীগ মনোনীত ও একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিজয়ের সম্ভাবনা ক্ষিণ বলেই জানিয়েছেন ভোটাররা। নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, মহেশখালী পৌরসভার ভোটার সংখ্যা ১৭ হাজার ৯৪৫ জন। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিন জন। আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান মেয়র মকসুদ মিয়া, আওয়ামী লীগ ঘরানার বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক মেয়র সরওয়ার আজম ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মুহি উদ্দিন বাশি। কাউন্সিলার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৫ জন। পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে ও ভোটারদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, বর্তমান মেয়ার ও সরকার দলের মনোনীত প্রার্থী মকসুদ মিয়া ও সাবেক মেয়র বিদ্রোহী প্রার্থী সরওয়ার আজম কেউ কারো চেয়ে কম নয়। গেল মেয়র নির্বাচনে সরওয়ার আজম আওয়ামী লীগের সমর্থন পেলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেছিলেন মকসুদ মিয়া। তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। তার পরেও মকসুদ মিয়া মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার হয়েছে ঠিক তার উল্টো। মকসুদ মিয়াকে সরকার নৌকা প্রতীক দিয়ে সমর্থ দিলে সরওয়ার আজম বিদ্রোহ করে প্রার্থী হন। এ দু’জন নির্বাচনে সক্রিয় থাকলেও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বাশির কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। মকসুদ মিয়ার ব্যাপারে ভোটারদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কারো কারো মতে তিনি পৌর এলাকায় রাস্তা-ঘাট সম্প্রসারণ করে বেশ উন্নয়ন কাজ করেছেন। আবার কারো মতে এসব কাজে ভূমি অধিগ্রহণে তিনি মানুষকে ঠকিয়েছেন। তার আমলে গোরকঘাটা বাজারে কয়েকজন হিন্দু পরিবারের ব্যবসায়ী ও জামায়াত পরিবারের ব্যবসায়ীর ৮/১০টি দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এজন্য নির্বাচনে হিন্দু সম্প্রদায় এবং জামায়াত সমর্থিত ভোটার বিদ্রোহী প্রার্থী সরওয়া আজমের প্রতি ঝুঁকতে পারে বলেও ধারণা করছেন তারা। মেয়র নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র বর্তমান ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রার্থী মহেশখালীর হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রবীণ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক পূর্ণ চন্দ্র দে বলেন, মহেশখালী পৌরসভায় সুষ্ঠু নির্বাচন হলে নৌকা প্রতীকের বিজয়ের আশা কম। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠক। মেয়র নির্বাচনে কিছু আওয়ামী লীগ নেতা সুবিধা নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখে একটি রাজাকার পরিবারে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। যাকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী করা হয়েছে বর্তমান মেয়র (মকসুদ মিয়া) তার বাপ-চাচারা ছিল স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার। তৎকালীন পাকিস্তানি সেনাদের সাথে তাদের (মকসুদ মিয়ার পিতা মুহাম্মদ ও চাচা মৌলবী জাকরিয়া) আত্মতৃপ্তির পোঁচ দেয়া ছবি এবং অপকর্মের ডকুমেন্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁেছনি বলেই রাজাকার পরিবারের একজন সন্তানকে নৌকা প্রতীক দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ওই রাজাকাররা এখন থেকে ৪৫ বছর আগে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। সেই হুমকি নাকি এখনো আসছে বলে তিনি জানান। বিষয়টি এখন প্রধানমন্ত্রীর নজরে গেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, সুবিধাভোগী আওয়ামী লীগ নেতারা এখন কোনঠাসা। তারা কেউ এখন আর মকসুদ মিয়ার সাথে নেই। তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন আওয়ামী লীগের প্রতীক ‘নৌকা’ রাজাকার পরিবারের সন্তানকে দিয়ে ‘নৌকা’র অবমাননা করা হয়েছে। শেষ মুহূর্তে মহেশখালী পৌর নির্বাচনে সরকারের সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কেন নির্বাচন করছেন এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সরওয়ার আজম বলেন, মনোনয়ন তারই পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অবিচার করা হয়েছে। জনগণ তার পক্ষে রয়েছে। নির্বাচিত হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিতে চান। মকসুদ মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ ঠিক নয় বলে জানিয়ে বলেন, তিনি পৌসভায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন। প্রতিপক্ষের কাছে তা অসহ্য। আবারো নির্বাচিত হলে তিনি মহেশখালী জেটি ঘাটের সম্প্রসারণ ও সংস্কার করবেন। মহেশখালী-চৌফলদন্ডী ফেরি চালু করবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন পরিকল্পনা এগিয়ে নেবেন বলে জানান মকসুদ মিয়া। মহেশখালী পৌরসভায় বিএনপির দুরাবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর ছিদ্দিক মনোনীত প্রার্থী ‘দুবর্ল নয়’ বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘প্রার্থী নয়, প্রতীক দেখেই ভোট দেবেন সাধারণ মানুষ।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন