আবুল কালাম আজাদ বালাগঞ্জ (সিলেট) থেকে : বালাগঞ্জ-ওসমানীনগরের কৃষকরা ঋতু বৈচিত্রের শীতকালের সময় পার করছেন বোরো ধান চাষে। প্রচ- শীত উপেক্ষা করে প্রবাসী অধ্যুষিত দুটি উপজেলার কৃষকরা এখন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বোরো জমিতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে দুটি উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে ১৫ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান উৎপাদন করা হবে। বালাগঞ্জে ৭হাজার ২৭৫ হেক্টর ও ওসমানীনগরের ৮হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হবে। সড়েজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওসমানীনগর উপজেলার কালাসারা হাওরে কৃষকদের কেউ বীজ তলা থেকে চারা তুলছেন, অনেকে চারা রোপণ করছেন। প্রচ- শীত থাকায় আবার হাওরাঞ্চলে পানিতে নামতে দেরি করছেন। সূর্যের দেখা পেলে তারা চারা রোপণে নামছেন। আগাম তৈরি বীজতলা থেকে এবারও ওসমানীনগরের কৃষকরা শীতের শুরুতেই আগাম চারা রোপণের কাজ শুরু করেছেন। ক্ষেত প্রস্তুত করার লক্ষ্যে জমিতে সেচ ও হাল চাষের কাজেও ব্যস্ত দেখা গেছে কৃষকদের। যার ফলে কৃষকরা কালবৈশাখীর ভয়াল থাবা থেকে তাদের কষ্টার্জিত ফসল আগে ভাগে কেটে ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন। ওসমানীনগরের প্রত্যন্ত অঞ্চল জুড়ে এখন চলছে বোরো ধানের চারা রোপণের মহোৎসব। তবে কৃষকরা চিন্তিত, পানি সংকটের জন্য। মধ্যখানে যদি হাওর ও খালের পানি শেষ হয়ে গেলে কোন বিকল্প পানির ব্যবস্থা নেই। তাই তাদের দাবি ভরাট হওয়া খাল ও বিল খননের ব্যবস্থা করা। অবৈধভাবে দখল হওয়া এবং কোথাও পলি জমে ভরাট হওয়া খাল বিল খনন করা হলে পানি সারা বছর থাকবে। এতে পানির কোন সমস্যা হবে না। এবার দুটি উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ১৫ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হবে। বালাগঞ্জের ৬টি ইউনিয়নে ৭হাজার ২৭৫ হেক্টর বোরো ধান চাষ হবে। এর মধ্যে হাইব্রীড ২২৫ হেক্টর, উফসী ৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর ও স্থানীয় বোরো চাষ হবে ২হেক্টর জমিতে। ওসমানীনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ৮ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হবে। এর মধ্যে হাইব্রীড ৩২০ হেক্টর, উফসী ৭হাজার ৫২০ হক্টর ও স্থানীয় ২শ’ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হবে। গতবারের চেয়ে এবার ৭৪০ হেক্টর অনাবাদী জায়গায় এবার বোরো চাষের আওতায় আনা হয়েছে। এদিকে বোরো চাষিরা সঠিকভাবে চাষ করতে পারে সে জন্য বালাগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। মাঠে রয়েছেন ২০জন কৃষি অফিসার। বালাগঞ্জ উপজেলা উদ্ভিদ কর্মকর্তা মো. আবুল কাশেম বলেন, আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি, রাসায়নিক সার পরিহার করে সঠিকভাবে জৈব সার ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেয়া, সঠিক বয়সে (৩০/৪০ দিনের বয়সের চারা) সঠিক সময়ে চারা রোপণ করা। পরামর্শ দিচ্ছেন পোকা থেকে বাঁচতে পার্চিং ব্যবস্থা করার। তবে বিধি মোতাবেক ১৪টি ইউনিয়নে ৪২জন কৃষি অফিসার থাকার কথা তাকলেও সেখানে রয়েছেন ২০জন কৃষি অফিসার। যার ফলে কৃষি সেবা দিতে অফিসারদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকদের দাবি কৃষি অফিসারের জনবল বৃদ্ধি করে কৃষি চাষে আরো বেশি সেবা দিতে। আগাম বন্যা আসলে পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়া যায় না। ফলে বোরো ধান বন্যায় তলিয়ে যায়। সে জন্য বালাগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস আগাম বন্যা থেকে রক্ষা পেতে কৃষকেরদের মধ্যে ৭টি রিপার তথা ধান কাটার যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল মালেক ইনকিলাবকে জানান, ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জের ১৪টি ইউনিয়নে এবার ১৫ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে বোরো উৎপাদন করা হবে বলে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় কারাসার হাওরের কৃষক মোহিদ আলী বলেন, জমি প্রস্তুত। চারা উত্তোলন করছি জমিতে রোপণের জন্য। বোরো ফসলটি ভালো হলে, পরিবার-পরিজন নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারবো। তাই যতœ সহকারে জমি তৈরি করেছি। রোপণ করা শুরু হয়েছে। তবে তিনি সার ও পানি নিয়ে ভাবনায় রয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন