শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অযত্ম অবহেলায় রাষ্ট্রীয় নৌযান

ঢাকা-বরিশাল-খুলনা নৌ-রুট

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সারা বিশ্বে অবশিষ্ট ৪টি যাত্রীবাহী প্যাডেল জাহাজ যথাযথ সংরক্ষনে বিআইডব্লিউটিসি’র তেমন কোন হেলদোল নেই। গত ২১বছরেও এসব নৌযানের মূল ইঞ্জিন ওভারহোলিং করা হয়নি। পরিপূর্ণ পূণর্বাসন করা হলে যাত্রী বান্ধব এসব নৌযান আরো অন্তত দুই দশক নির্বিঘেœ চলতে পারে। প্রায় শতবর্ষ পুরনো এসব নৌযান সংস্থাটির কতিপয় কর্মকর্তার অবৈধ আয়ের অন্যতম উৎস হলেও তার যথাযথ রক্ষনাবেক্ষন ও সংরক্ষনেও কোন সুষ্ঠু কর্ম পরিকল্পনা নেই। ঐতিহ্যবাহী এসব নৌযানে ভ্রমনে দেশ বিদেশের যাত্রীদের আগ্রহ যথেষ্ঠ। এখনো এসব প্যাডেল জাহাজে ভ্রমনের জন্যই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকগন বাংলাদেশে আসছেন। মাস কয়েক আগে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে সপ্তাহে একদিন খুলনা পর্যন্ত প্যাডেল জাহাজ পরিচালন শুরু করায় অনেক বিদেশী পর্যটক তাতে ভ্রমন করছেন।
যথেষ্ঠ ব্যায় সাশ্রয়ী হলেও সংস্থাটির কতিপয় কর্মকর্তা ‘পিএস মাহসুদ, পিএস অষ্ট্রিচ, পিএস লেপচা ও পিএস টার্ণ’ নামের প্যাডেল জাহাজগুলো নানা অজুহাতে বসিয়ে রেখে ব্যায়বহুল নৌযান পরিচালনে আগ্রহী বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব প্যাডেল জাহাজের মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যায় দেখানো হলেও তা ঠিকমত চলছে না। প্রায় আড়াইগুন অতিরিক্ত জ্ব্লাানী ব্যায়ের দুটি স্ক্রু-হুইল নৌযান পরিচালনে কর্তাদের আগ্রহ বেশী বলেও অভিযোগ রয়েছে। ‘এমভি মধুমতি ও এমভি বাঙালী’ নামের দুটি স্কু-হুইল জাহাজে গত সাড়ে ৩ বছরে পরিচালন লোকশানই হয়েছে ১০ কোটি টাকার বেশী। এসব নৌযান যাত্রী বান্ধব না হওয়ায় তাতে ভ্রমনেও তেমন আগ্রহ নেই কারো। এরপরেও প্যাডেল জাহাজগুলো সচল রাখার উদ্যোগ কম। গত ১৬ সেপ্টেম্বর পিএস অষ্ট্রিচ জাহাজটি সংস্থার ডকইয়ার্ডে নেয়ার পরে তার মেরামত শুরু হয়েছে দশদিন পরে। কবে শেষ হবে তা জানেন না কেউ। পিএস টার্ণ জাহাজটির মূল ইঞ্জিনের টার্বো চার্জার অকার্যকর থাকায় নৌযানটি গন্তব্যে পৌছাতে প্রায় দেড়গুন সময় লাগছে। যাত্রী ভোগান্তি ও জ্বালানী ব্যায়ও বাড়ছে।
তৎকালীন বৃটিশ সরকারের অধিভূক্ত নৌ-বানিজ্য প্রতিষ্ঠান ‘আইজিএন ও আরএসএন’ কোম্পানী অবিভক্ত বাংলা ও আসামে কয়লা নির্ভর বাস্পীয় ইঞ্জিনের প্যাডেল জাহাজ পরিচালন শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন পূর্ব বাংলার বরিশালে ঐসব কোম্পানীর সদর দফ্তর ও কারখানা স্থাপন করা হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ভাগে কোম্পানী দুটির অন্তত ৩০টি কয়লা চালিত প্যাডেল জাহাজ পরলেও বিভিন্ন সময়ে তার বেশীরভাগ চলাচল অযোগ্য বলে নিলামে বিক্রী করে দেয়া হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর বোমা হামলায় বরিশাল বন্দরের অদুরে পিএস ইরানী ও পিএস মাজবী নামের দুটি নৌযান ডুবে যায়। ১৯৯৭ সালে সংস্থার ডকইয়ার্র্ডে এক বিধ্বংসী অগ্নিকান্ডে পিএস গাজী ও পিএস কিউই জাহাজ দুটি ভষ্মিভূত হয়।
১৯৭৮ সালে বেলজিয়াম সরকারের অর্থায়নে পিএস মাহসুদ, পিএস লেপচা ও পিএস অষ্ট্রিচ নামের ৩টি পাডেল জাহাজ আধুনিকায়ন ও পূণর্বাসন কাজ শুরু হয়। খুলনা শিপইয়ার্ড ও নারায়নগঞ্জ ডকইয়ার্ডে নতুন মেরিন ডিজেল ইঞ্জিন সমৃদ্ধ নৌযানগুলো পূণর্বাসন ও আধৃুনিকায়ন করে ১৯৮১ সালের শেষ দিকে চালু করা হয়। কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ হাইড্রোলিক গিয়ারের কারনে এসব নৌযান ৩ হাজার ঘন্টার বেশী চলেনি।
পরবর্তিতে ১৯৯৪-৯৫ সালে বেলজিয়াম সরকারের অর্থায়নে নৌযানগুলোতে মেকানিক্যাল গীয়ার সংযোজন করে ‘৯৫-৯৬ সালে তা চালু করা হয়। ২০০২ সালে বিআইডবিøউটিসি’র নিজস্ব অর্থে পিএস টার্ণ জাহাজটিতেও অনুরূপ নতুন ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়। সে থেকে অদ্যাবধি এসব নৌযান যাত্রী পরিবহন করছে। ১৯৯৬ সালের পরে বিগত ২১ বছরে প্রথম ৩টি নৌযানের মূল ইঞ্জিন ও গীয়ার সহ জেনারেটর ইঞ্জিনসমুহ মেজর ওভারহোলিং করা হয়নি। স্থানীয়ভাবে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ দিয়ে নৌযানগুলোর জরুরী মেরামত কাজ করা হচ্ছে। এসব নৌযান নির্বিঘেœ চলাচলে কোন সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনাও নেই। প্যাডেল জাহাজগুলোর ১২শ অশ্বশক্তির ‘এবিসি’ ইঞ্জিনগুলোর আরপিএম সাড়ে ৭শ হলেও এখন তার কোনটিই সাড়ে ৫শ গতিতেও চলছে না। মূল ইঞ্জিনের জেনুইন পার্টস সংজোযন হচ্ছেনা। এসব নৌযানের প্যাডেলগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। ফলে তা কাঙ্খিত গতিতে চালান যাচ্ছেনা বলে জানা গেছে। এর ফলে নৌযানগুলো গন্তব্যে পৌছতে অতিরিক্ত সময় লাগছে। বাড়ছে জ্ব্লাানী ব্যায়ও। যাত্রী ভোগান্তিও বাড়ছে। এসব নৌযানে যাত্রী সুবিধা বলতে এখন তেমন কিছু অবশিষ্ট নেই। বৃষ্টি হলে প্রতিটি নৌযানের ছাদ চুইয়েপানি পড়ে। নৌযানগুলোর খোল ও তলা থেকে শুরু করে উপরি কাঠামো ছাড়াও এর মূল ইঞ্জিন সহ প্যাডেলসমুহের পরিপূর্ণ পূণর্বাসনের কোন বিকল্প নেই।
তবে ওয়াকিবাহাল মহলের মতে, ১৯৩৮ থেকে ১৯৫৪ সালের মধ্যে তৈরি ‘পিএস মাহসুদ, পিএস অষ্ট্রিচ, পিএস লেপচা ও পিএস টার্ণ’ জাহাজগুলো একটি প্রকল্পের আওতায় পরিপূর্ণ পূণর্বাসন করলে তা রাজধানীর সাথে দেশের দক্ষিন ও দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের নিরাপদ নৌযোগাযোগ রক্ষায় যথেষ্ঠ ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। পূণর্বাসনের পরে এসব নৌযান অন্তত কুড়ি বছর দেশের অভ্যন্তরীন নৌপথে নিরাপদে যাত্রী পরিবহন করবে বলেও মনে করছেন মহলটি। বেসরকারি সেক্টরের পাশাপাশি সরকারি নৌপরিবহন সংস্থার নিরাপদ নৌযান যাত্রী পরিবহনে ভারসাম্যতা বজায় রাখবে বলেও মনে করছেন মহলটি।
এ ব্যপারে বিআইডব্লিউটিসি’র চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. জ্ঞানরঞ্জন শীল-এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, প্যাডেল জাহাজগুলো যথেষ্ঠ ব্যায় সাশ্রয়ী। তবে এসব নৌযান পূণর্বাসন ও প্রয়োজনীয় আধুনিকায়ন করা সম্ভব কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখে পরবর্তি সিদ্ধান্টত গ্রহন করা হতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন