শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

শাহজালাল বিমানবন্দরে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা

| প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশ্বায়ণের এই যুগে প্রতিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সমুদ্রবন্দর দেশের সাথে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গেটওয়ে হিসেবে কাজ করে থাকে। বিশেষত: আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলো বৈদেশিক বিনিয়োগ, ব্যবসায়-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখে। বিদেশি নাগরিকরা কোন দেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা সম্পর্কে প্রথম ধারনাটি লাভ করেন বিমান বন্দরে পর্দাপণ করেই। বিমানবন্দরের অনিয়ম বিশৃঙ্খলা, রাজধানী শহরের যানজট, নাগরিক নিরাপত্তা, পরিবেশ ও সুযোগসুবিধার ঘাটতি দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিরও অন্যতম প্রতিবন্ধক হিসেবে বিবেচিত। ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সত্তে¦ও বাংলাদেশ এসব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। একদিকে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে জাহাজজট, কন্টেইনারজট, অন্যদিকে দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং জাতীয় পতাকাবাহী একমাত্র বেসামরিক বিমান সংস্থা বাংলাদেশ বিমানের অনিয়ম, দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলার দায় পোহাতে হচ্ছে পুরো জাতিকে। ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরের অবকাঠামো ও নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নয়নে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করার পরও যাত্রি ভোগান্তি, হয়রাণি ও বিশৃঙ্খল অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বিদেশে কর্মরত যে লাখ লাখ শ্রমিক নিয়মিত রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত সে সব শ্রমিক বিদেশ গমন এবং দেশের ফেরার পথে বিমান বন্দরে অহেতুক নানাবিধ হয়রাণি ও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। আবার বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পের ক্রেতা ও বিনিয়োগকারি ও পর্যটকরাও বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হয়। বিমানবন্দরের এসব অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেক লেখালেখি হলেও অবস্থার লক্ষ্যনীয় পরিবর্তন কখনো ঘটেনি।
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালনায় অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার কারণে বিদেশিদের কাছে দেশের ভাব-মর্যাদা সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরী হয়। বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে লাগেজ বিড়ম্বনা, দালালদের দৌরাত্ম্য, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসে যাত্রি নাজেহাল হওয়ার বেশুমার ঘটনাবলীর পাশাপাশি বিমানবন্দরের বাইরে প্রতারকচক্র, হকার ও ভিক্ষুকদের উৎপাতসহ কোন কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। বিমানবন্দরের এহেন নিয়ন্ত্রণহীন পরিবেশে দেশি-বিদেশি যাত্রীসাধারণ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়ে থাকে। বিমানবন্দরের অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা ও যাত্রিহয়রাণি জাতীয় উন্নয়ন ও ভাব-মর্যাদার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে থাকে, যারা আমাদের জাতীয় উন্নয়ন-অগ্রগতিকে নস্যাৎ বা বাঁধাগ্রস্ত করতে চায় তারা পরিকল্পিতভাবে বিমানবন্দরের অনিয়ম বিশৃঙ্খলাগুলো জিইয়ে রাখতে নেপথ্যে ভ’মিকা রাখছে কিনা সঙ্গত কারণেই এমন প্রশ্ন উঠতে পারে। বিমানবন্দর দিয়ে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকার মাদক, সোনাসহ অবৈধ চোরাচালানের বিশাল আর্ন্তজাতিক নেটওয়ার্কও সক্রিয় রয়েছে। বিমানে এবং বিমানবন্দরে শত শত কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি ও নাশকতার ঘটনা ঘটলেও এসব বন্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা তেমন একটা দেখা যায়না, এমনকি তদন্ত প্রতিবেদনও পাওয়া যায়না। গত আগস্টে শাহজালাল বিমানবন্দরে রহস্যজনকভাবে অগ্নিকান্ড সংঘটিত হওয়ার পর প্রায় দুইমাস অতিক্রান্ত হলেও কিভাবে, কাদের অবহেলা বা ব্যর্থতায় এ অগ্নিকান্ড সংঘটিত হয়েছিল তা এখনো জাতির সামনে পরিস্কার নয়। ফায়ার সার্ভিংসের ১০-১২টি ইউনিট কয়েক ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হলেও এ ধরনের ঘটনায় বিমানবন্দরটি আরো বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা ছিল।
ইতিমধ্যে কয়েকটি পশ্চিমা দেশ নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে বাংলাদেশে তাদের কার্গো নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, যা আমাদের রফতানী বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও ভাব-মর্যাদার ক্ষেত্রে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এসব নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য প্রথমে বিমান বন্দরের বিশৃঙ্খলা, অব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তাহীনতার কথা বলা হলেও পরবর্তিতে বাংলাদেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তা পরিস্থিতির বিষয়ও তারা আলোচনায় নিয়ে আসে। অতএব দেশের আভ্যন্তরীণ জননিরাপত্তা তথা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও একটি গতিশীল সামাজিক-অর্থনৈতিক অগ্রগতির অন্যতম পূর্বশর্ত। একদিকে আমরা অবকাঠামো উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগছি, অন্যদিকে আমাদের রাজধানী শহর বিশ্বের সবচেয়ে নোংরা ও নিরাপত্তাহীন শহরের তালিকায় স্থান পাচ্ছে। শহরের বিমান বন্দর থেকে শুরু করে প্রতিটি বাণিজ্যিক এলাকা এবং অভিজাত আবাসিক এলাকায় হাজার হাজার ছিন্নমূল মানুষ ও ভিক্ষুকের উৎপাত মানুষের নাগরিক জীবনের স্বাভাবিক স্বাচ্ছন্দ্য ও গতিশীলতা চরমভাবে ব্যহত করছে। এমন বৈপরীত্য সামনে রেখে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রত্যাশা করা যায়না। আগামী দশক শেষে মধ্য আয়ের দেশ অথবা ডিজিটাল বাংলাদেশ জাতির সামনে উন্নয়নের যে রূপরেখাই দেখানো হোক, বিমান বন্দর, সমুদ্রবন্দরে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা জিইয়ে রেখে, যাত্রিহয়রাণি, জাহাজজট, কন্টেইনার জট, রাজপথে যানজট, হকার-ভিক্ষুকের উৎপাত নাগরিক নিরাপত্তাহীনতা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন ছাড়া কোন রূপকল্পই জনগনের আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারবেনা। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে বিমানবন্দরের ভেতর-বাহিরের নিরাপত্তা এবং যাত্রিসেবার মানোন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন