শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

প্রথমবারের মতো গৃহ পাচ্ছেন হাজীগঞ্জের গৃহহীনরা

সবার জন্য বাসস্থান নিশ্চিতকরণের অংশ হিসেবে ৫৩ জনকে ঘর বুঝিয়ে দেয়া হলো

| প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হাজীগঞ্জ (চাঁদপুর) থেকে কামরুজ্জামান টুটুল

সবার জন্য বাসস্থান নিশ্চিত করনে সারা দেশের মধ্যে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় প্রথমবারের মতো গৃহহীনদের গৃহ দেয়া হয়েছে। উপজেলার ১২ ইউনিয়নের কয়েক শ’ গৃহহীনের মধ্য থকে যাচাই-বাছায়ের ভিত্তিতে ১১০ জন এই তালিকায় স্থান দেয়া হয়। ১১০ জনের মধ্যে ইতোমধ্যে ৫৩ জনকে পূর্ণাঙ্গভাবে তৈরি করা ঘর বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। বাকি ঘরগুলোর কাজ সমাপ্তির পথে রয়েছে। চলিত মাসের শেষে দিকে তালিকাভ‚ক্ত বাকি গৃহহীনদের গৃহ বুঝিয়ে দেয়া হবে। কর্মপরিকল্পনার নির্দিষ্ট সময় আসছে মাসে নির্ধারণ করা হলেও চলিত মাসের শেষে দিকে বাকি ৫৭টি ঘর নিজ নিজ গৃহহীনকে বুঝিয়ে দেয়া হবে এবং এ জাতীয় উদ্যোগকে কাজে লাগিয়ে আরো উন্নয়ন করা সম্ভব বলে ইনকিলাবকে নিশ্চিত করেন হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম মজুমদার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরে প্রধানমন্ত্রী এক সভায় বলেন, এ দেশে কোনো লোক গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেক গৃহহীনকে গৃহ দেয়া হবে। সেই কথার আলোকে কোনো ধরনের গেজেট প্রকাশের আগেই চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ও চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের এ নিয়ে নতুন কিছু করার চিন্তা করেন। সেই আলোকে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক আব্দুর সবুর মÐল হাজীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে গৃহহীনদের গৃহ দেয়ার বিষয়ে কাজ করতে হবে বলে নির্দেশনা প্রদান করেন।
চলিত বছরের শুরুর দিকে জেলা প্রশাসক আব্দুস সবুর মÐল হাজীগঞ্জের একটি অনুষ্ঠানে এসে হাজীগঞ্জে গৃহহীনদের গৃহদানের বিষয়ে তালিকা করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন। এর পরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম মজুমদার উপজেলার সব ইউনিয়নের তহশিলদারদের দিয়ে প্রকৃত গৃহহীনদের তালিকা চেয়ে পাঠান। আর এই তালিকার বিষয়ে জানতে পেরে তাৎক্ষণিক স্থানীয় চেয়ারম্যান নিজেরা তালিকা করবেন বলে দাবি তোলেন। এর পরই উভয় তালিকাকে সমন্বয় করে প্রকৃত গৃহহীনদের তালিকা চ‚ড়ান্ত করা হয়, আর এর পরই গৃহহীনদের মাঝে ঘর তৈরি করা ও বিতরণের বিষয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এভাবেই প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘোষণার পরই গৃহহীনদের গৃহদানে বাস্তবে রুপ নেয়া শুরু করে। যা সারা দেশের মধ্যে হাজীগঞ্জেই প্রথম সম্ভব হয়, আর বাস্তবতায় দেখা যায়।
স্থানভেদে কোনো কোনো পরিবারকে তিন রুম, কোনো পরিবারকে দুই রুম আবার কোনো পরিবারকে এক রুমের ব্যবস্থাপনায় ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়। তবে এই ব্যবস্থপনার হেরফের হয় ওই সব গৃহহীনদের সম্পত্তির উপর ভিত্তি করে। প্রথম ধাপের ঘরগুলোতে চাল ও বেড়া রঙিন টিন দিয়ে তৈরি করা হয়। চালে রঙিন টিন ব্যবহার করলে ঘরের ভেতরে গরম বেশি অনুভ‚ত হয় স্থানীয় এমপির এমন পরামর্শে পরের নির্মাণাধীন ঘরগুলোর চাল সাধারণ টিনে আর বেড়াগুলো রঙিন টিন দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় এমপি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, উপজেলা পরিষদ, উপজেলার সকল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ, হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আহসান হাবীব অরুণ ও হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতি, উপজেলায় প্রশাসনিক সকল দফতরের সহায়তায় গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণের কাজ হাতে নেয়া হয়। আর এই সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আসা অর্থেই ১১০টি ঘরের মধ্যে প্রথম অংশে ৫৩টি ঘর বুঝিয়ে দেয়া হয় বিভিন্ন ইউনিয়নের গৃহহীনদের মাঝে। বাকি ৫৭টি ঘরের মধ্যে ৩০টি ঘরের কাজ শেষ হয়ে গেছে, অনেকে বুঝে নেয়ার আগেই বসবাস শুরু করেছেন। বাকিগুলোর কাজ দ্রæত গতিতে চলমান রয়েছে। বুঝিয়ে দেয়া ৫৩টি ঘরের মধ্যে মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপি নিজের থেকে দেয়া বরাদ্দের তিনটি ঘরের সাথে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম মজুমদার জানান, এই প্রকল্পের বিষয়ে শুরু দিকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। শুরুতে বিষয়টি নিয়ে অনেকের মাঝে বিশ^াস যোগ্যতার প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। প্রথমধাপের ঘর বুঝিয়ে দেয়ার সময় একটি আরো একটি নতুন সমস্যার তৈরি হয়ে কাজ প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। একটাপর্যায়ে এসে টাকার অভাবে ঘর নির্মাণ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। পরে জেলা প্রশাসক আব্দুস সবুর মÐল ৭০টি ঘরের টিন আর ঘর নির্মাণের টাকার ব্যবস্থা করে দেন।
গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণে আপনার ভ‚মিকা অপরিহার্য এমন প্রশ্নে ওই কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, সকলের সহযোগিতার কারণে এই কাজ আলোর মুখ দেখেছে। মূলত এভাবে সকলের অংশগ্রহণে আরো বড় বড় কাজ করার ইচ্ছা আছে ও কাজ করা সম্ভব। আমাদের কাজ করার অনেক সোর্স রয়েছে বা সোর্স থাকে শুধু দরকার স্থানীয়দের আর আমাদের আন্তরিকতা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন