কুমিল্লার সবচেয়ে বড় উপজেলা মুরাদনগর। প্রাকৃতিক গ্যাস সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে খ্যাত মুরাদনগর উপজেলার দুইটি থানা এলাকার ২২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৩ সংসদীয় আসন। ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ডা. ওয়ালী আহাম্মদের পর জয়ের মুখ দেখেনি দলটি। ১৯৭৯ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০১৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত বারবার প্রার্থী বদল করেও মুরাদনগরে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি আওয়ামীলীগ। কারণ দলীয় কোন্দল। ২০১৪ সালে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হোন মুরাদনগর আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট নেতা জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে ড. কিশোর আলম সরকার। প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন কেন্দ্রিয় আওয়ামীলীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুনের সঙ্গে। ইউসুফ হারুন স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়ে আলোচিত-সমালোচিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয় পান। সম্প্রতি তিনি যোগদান করেছেন আওয়ামীলীগে। ফলে মুরাদনগর আওয়ামীলীগে জাহাঙ্গীর সরকার ও ইউসুফ হারুনের মধ্যে নেতৃত্বের আধিপত্য ও দ্ব›দ্ব আরো একধাপ জায়গা করে নিয়েছে। আর আওয়ামীলীগের এ দ্ব›েদ্ব আসন্ন একাদশ নির্বাচনেও সুবিধাজনক অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছে বিএনপি।
কুমিল্লা-৩ মুরাদনগর আসনে নেতৃত্বের আধিপত্য নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে কুমিলা (উত্তর) জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার ও আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক এবং মুরাদনগর আসনের এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের সঙ্গে বিরোধ চলছে। মুরাদনগরে আওয়ামীলীগের মাঠ নিজেদের আয়ত্বে রাখতে মরিয়া জাহাঙ্গীর সরকার ও ইউসুফ হারুন। দুই নেতার ব্যক্তি পর্যায়ের এ দ্ব›দ্ব আগামী সংসদ নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন আওয়ামীলীগের তৃণমুল নেতারা। মুরাদনগর আওয়ামীলীগে জাহাঙ্গীর সরকারের শক্ত অবস্থান রয়েছে। ইউসুফ হারুনেরও ব্যক্তি ইমেজ রয়েছে। তবে ইতিপূর্বে দুইটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন ইউসুফ হারুন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপিবিহীন নির্বাচনে এমপি হওয়ার তিলক লাগে ইউসুফ হারুনের কপালে। আগামী সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চাইবেন। পক্ষান্তরে একই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশি জাহাঙ্গীর সরকার। মুরাদনগরে এ দুই নেতার মনোনয়ন প্রাপ্তির যুদ্ধই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। মুরাদনগর আওয়ামীলীগের জাহাঙ্গীর-হারুনের তুঙ্গে থাকা বিভেদ-দ্ব›দ্ব শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা নিয়ে সাধারণ জনগণ ও ভোটারদের মাঝে চলছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা।
অপরদিকে মুরাদনগর বিএনপিতে সাংগঠনিক ও ব্যক্তি পর্যায়ের কোন দ্ব›দ্ব বিরোধ না থাকার বিষয়টি আসন্ন সংসদ নির্বাচনের জন্য একটি বড় পজেটিভ দিক বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। মুরাদনগর বিএনপির নেতাকর্মীরা দৃঢ় মনোবল নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে তাদের নেতা মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের দিক নির্দেশনায় শক্তহাতে দল গোচ্ছাছেন, আন্দোলন সংগ্রাম সুসংহত করছেন। টার্গেট আগামী সংসদ নির্বাচন। কায়কোবাদ দেশে নেই, অথচ তার অনুসারি নেতাকর্মীরা একট্টা। মুরাদনগরের মাটি ও মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা মিশে আছে টানা পাঁচবারের এমপি কায়কোবাদের সঙ্গে। আর এমনটিই বিশ্বাস করেন মুরাদনগর বিএনপির পোড় খাওয়া ত্যাগী নেতাকর্মী, ভোটার ও উপকারভোগী সাধারণ মানুষ।
এদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে সারাদেশে বিএনপির চরম প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও এমপি নির্বাচিত হন কায়কোবাদ। নির্বাচনের পরে তিনি দুর্ঘটনায় আহত হয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যান। বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় তার নাম জড়িয়ে দেয়া হয়। বিদেশে থেকেও তিনি নিবিড়ভাবে খোঁজখবর রাখছেন মুরাদনগরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। মোবাইল ফোন, ভিডিও কলে নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। সাহস দিচ্ছেন নেতাকর্মীদের। সতর্ক করছেন নিজেদের মধ্যে যেনো কোন অশুভচক্র বিভেদ সৃষ্টি করতে না পারে। আল্লাহর সাহায্য চেয়ে ধৈর্য্যরে সাথে সকল কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলার পরামর্শ দিচ্ছেন। মুরাদনগর বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, আল্লাহর রহমতে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই তাদের নেতা কায়কোবাদ দেশে ফিরবেন। দেশে এসে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় দায়ের করা মামলা-মোকদ্দমার বিষয়গুলো আইনগতভাবে মোকাবেলা করবেন। বিএনপি নেতারা জানান, মুরাদনগর আসনে কায়কোবাদই বিএনপির একক প্রার্থী। এব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তবে বিএনপি নামধারি একটি চক্র যারা অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের এজেন্ট হয়ে কাজ করেছে তারা একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারো মানুষকে বিভ্রান্ত করতে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। তাদের ব্যাপারে বিএনপি তৃণমুল নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সমর্থক ও সাধারণ ভোটারও সজাগ রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন