শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

সাভারে সম্পত্তি আত্মসাতে যুবক গুম স্বজনদের আহাজারি, তিন মাসেও খোঁজ মেলেনি

| প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সেলিম আহমেদ, সাভার থেকে : ঢাকার সাভারের বনগ্রাম এলাকায় এক যুবকের আনুমানিক ১২ কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৬ একর সম্পত্তি প্রতারনার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে একসময় সেন্ডেল ও আইসক্রীম কারখানায় শ্রমিককের কাজ করা রমিজ উদ্দিন ও তার সহযোগীরা। ঘটনা ধামাচাপা দিতে পৈত্রিক ওয়ারিশসূত্রে মালিক হানিফ পালোয়ানকে রাতের আধারে ঘরের সিথ কেটে অপহরণ করে গুম করেছে বলে তার পরিবার অভিযোগ। এঘটনায় প্রতারক রমিজ উদ্দিনকে প্রধান আসামী করে ১০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১২ জনকে আসামী করে অপহৃতার বৃদ্ধ মা সাভার মডেল থানায় একটি অপহরনের মামলা (নং-২৩) দায়ের করেছেন।
মামলার আসামীরা হচ্ছে- রমিজ উদ্দিন (৫০), জমির উদ্দিন ওরফে জমু (৫৫), তমিজ উদ্দিন (৪৫), তাজিম উদ্দিন (৪২), নাজীম উদ্দিন (৪০), নুরজাহান বেগম, সুমন মিয়া, রুবেল মিয়া, কালাচাঁন ওরফে কালা, মো: আসলামসহ আরো অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন। তবে ঘটনার ৩ মাস অতিবাহিত হলেও পুলিশ অপহৃত হানিফ পালোয়ানকে উদ্ধারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো আসামীরা আদালত থেকে জামিনে এসে পুনরায় মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। সরজমিনে বনগ্রাম এলাকায় অপহৃত হানিফ পালোয়ানের বাড়িতে গিয়ে দেখাযায়, ভাঙ্গা একটি ঘরে এক পুত্র ও এক কন্যাকে নিয়ে বসবাস করতেন বৃদ্ধ জবেদা বেগম। একমাত্র ছেলেকে অপহরনের ঘটনাটি বলতে গিয়ে বার বার মূর্চ্ছা যাচ্ছিলেন তিনি। অপহৃতের বৃদ্ধ মা জবেদা বেগম জানান, গত ৩১ জুলাই গভীর রাতে ঘরের সিধ কেটে ঘুমন্ত ছেলে হানিফ পালোয়ানকে (৩৩) অপহরণ করে নিয়ে যায়। তখন ঘরে থাকা ১০ ভরি স্বর্ণের গহনা ও নগদ এক লাখ টাকাও হাতিয়ে নেয়। ওই রাতে হানিফ ঘরে একাই ঘুমিয়ে ছিল। তিনি বলেন, এরআগেও তারা বাড়িতে হামলা চালিয়ে মারধর ও ভাংচুর করেছে। তাদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় একাধিক সাধারন ডাইরীও করা হয়েছে।
অপহরন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সেলিম রেজা আসামীদের সাথে পুলিশের সক্ষতার কথা অস্বীকার করে বলেন, অপহৃত হানিফ পালোয়ানকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। শীঘ্রই তাকে উদ্ধার করতো পারবো। তবে আসামীদের পক্ষে গেÐা এলাকার বুলু নামে এক ব্যক্তি সবসময় যোগাযোগ করেন।
হানিফের ভগ্নিপতি লুৎফর রহমান জানান, হানিফ পালোয়ান ছোট থাকা অবস্থায় তার বাবা রিয়াজ উদ্দিন মারা যায়। তাই সে লেখাপড়া শিখতে পারেনি। বাবার সহায় সম্পত্তির মালিক সে ও তার বোন। প্রতিবেশী চতুর রমিজ উদ্দিন অসহায় হানিফকে ফুসলিয়ে প্রায় ১২ বছর আগে তার কাছে নিয়ে যায়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় রেখে এক মেয়ে দিয়ে পরিবারের অমতে বিয়ে করিয়ে দেয়। পরে আবার ওই মেয়ের পরিবারকে দিয়ে ২০০৭ সালে একটি নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করায়।
মামলা থেকে রক্ষার প্রতিশ্রæতি দিয়ে হানিফ পালোয়ানের কাছ থেকে কয়েক দফায় প্রায় ১২ কোটি টাকার সম্পত্তি আমমোক্তার নামা দলিল করে নেয় প্রতারক রমিজ। পরে রমিজ উদ্দিন সেই জমি স্ত্রী-¯œÍানসহ বিভিন্ন স্বজনদের নামে হেবা করে দেন।
এরআগে জমি লিখে নেয়ার পর হানিফকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। তখন হানিফ ও তার পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি বুঝতে পেরে হানিফ পালোয়ান বনগ্রাম কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পরিচালনা পঞ্চায়েত কমিটির কাছে অপহরনের কয়েকদিন আগে লিখিত বিচার দিলে ওই বিচারের ধার্য্য দিনে উপস্থিত না হয়ে রাতের আধারে হানিফকে অপহরন করে নিয়ে যায়।
তবে সরেজমিনে দিনভর বনগ্রাম এলাকা ঘুরে অনেকের সাথে কথা বলে জানাগেছে, রমিজ উদ্দিন একসময় সেন্ডেল ও আসক্রীম তৈরীর কারখানায় কাজ করে সংসার চালাতো। প্রতারনার আশ্রয় নিয়ে হানিফ পালোয়ানের জমি বিক্রি করে আজ সে কোটি কোটি টাকার মালিক। যে লোক এক বেলা ঠিকমতো খেতে পারতো না তার তেতুঁলঝোড়া ইউনিয়নে একটি তিন তলা বাড়ী, বনগ্রামে একটি তিন তলা ও আরেকটি দুই তলা বাড়ী ও একাধিক প্লট রয়েছে। চতুর রমিজ উদ্দিন এসব জমি বাড়ি নিজের নামে থাকলে ধরা পরার ভয়ে পরিবারের সদস্যদের নামে হেবা করে দিয়েছেন।
রমিজ উদ্দিনের প্রতারনার এসকল কাহিনী বনগ্রাম এলাকার সকলের মুখে মুখে। তবে তার হয়রানীর ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না।
তবে প্রতারক রমিজ উদ্দিনের সাথে কথা বলতে তার বাড়ি গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মুঠফোনে যোগাযোগ করলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তার পক্ষে পুলিশের সাথে যোগাযোগকারী গেন্ডা এলাকার বুলুর সাথে মুঠফোনে যোগাযোগ করলে অভিযোগ প্রসঙ্গে কোন কথা বলতে রাজী হননি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন