শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

আ.লীগের টার্গেট আসন রক্ষা বিএনপির চেষ্টা পুনরুদ্ধারের

কুমিল্লা-৬ : সদরে বইছে নির্বাচনী হাওয়া

| প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লা-৬ মানেই সদর আসন। জেলার ১১টি আসনের মধ্যে কুমিল্লা-৬ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা জেলা রাজনীতির সূতিকাগারই হলো কুমিল্লা শহর। যা সদরের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট। কুমিল্লা শহরে রাজনীতির প্রবাহ এখন আওয়ামী লীগ-বিএনপিতেই সীমাবদ্ধ। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো কেন্দ্রিয় কর্মসূচিনির্ভর। আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কুমিল্লা সদরে আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশে সরকারের উন্নয়নের রূপরেখা তুলে ধরে আগামী দিনে নৌকা বিজয়ের আহŸান জানিয়ে সদরের বর্তমান এমপি হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের আওয়াজ প্রতিনিয়ত ধ্বনিত হচ্ছে। অন্যদিকে এখনো আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপি খুব একটা তৎপর হয়ে ওঠেনি। তবে রাজনৈতিক নয় এমন ছোটখাটো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আগামী নির্বাচনে নিজের অবস্থানের কথা ভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হাজী আমিন-উর রশিদ ইয়াসিন। জেলা বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে প্রচারণাই প্রমাণ হবে বিএনপি জনগণের দল। এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, আসন্ন একাদশ নির্বাচনে কুমিল্লা-৬-এর মতো মর্যাদাপূর্ণ আসনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির ভোটযুদ্ধ হবে মর্যাদা রক্ষার। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের টার্গেট আসন রক্ষা আর বিএনপি চাইবে হারানো আসন পুনরুদ্ধার।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৮টি ওয়ার্ড, সদর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও সদর দক্ষিণ উপজেলার একটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৬ সদর আসন। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক খোরশেদ আলমের পর এ আসনটি বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দখলেই ছিল। অত্যন্ত গুরুত্ব ও মর্যাদাপূর্ণ কুমিল্লা সদর আসনটি দীর্ঘ ৩৪ বছর পর ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিজয়ের মধ্যদিয়ে পুনরুদ্ধার হয়। আর এ বিজয়ের মধ্যদিয়ে অধ্যাপক খোরশেদ আলমের পর হাজী বাহারই হলেন দ্বিতীয় ভাগ্যবান ব্যক্তি। যিনি ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনেও নির্বাচিত হয়ে জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছেন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি হওয়ার পর সদরে পুরোদমে আওয়ামী লীগের রাজনীতির এক অপ্রতিরোধ্য নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন হাজী বাহার। গণমানুষের নেতায় পরিণত হন তিনি। তার প্রচেষ্টায় কুমিল্লা পৌরসভা উন্নীত হয় সিটি করপোরেশনে। সবশেষ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে দলের নগর কর্তৃত্বও আসে এমপি হাজী বাহারের হাতের মুঠোয়। বিভিন্ন সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি ও যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের শক্তি জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে কুমিল্লা শহরে কোনো আন্দোলন-কর্মসূচিতে দাঁড়াতে দেননি এমপি হাজী বাহার। কুমিল্লা সদরে আওয়ামী লীগকে তিনি এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। সদরের ইউনিয়নগুলোতে এমপি বাহার সমর্থিত চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং গেল সিটি নির্বাচনে তার সমর্থিত কাউন্সিলরের সংখ্যাও অনেক। গত ৯ বছরে কুমিল্লা সদরে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন তিনি। ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে হাজী বাহার কেবল দলীয় ভোটই নয়, তিনি কুমিল্লা সদরের সাধারণ ভোটারদের সহানুভ‚তির ভোটও পেয়েছিলেন। কারণ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনি বারবার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন। তার প্রতি ছিল সাধারণ মানুষের অসম্ভব দুর্বলতা।
আগামী নির্বাচনে সদরে আওয়ামী লীগের টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমপি হাজী বাহারের। দলের তৃণমূল নেতারা জানান, আওয়ামী লীগের মতো বড় দলে দ্ব›দ্ব-বিভেদ থাকতেই পারে। কিন্তু আগামী জাতীয় নির্বাচনে কুমিল্লা সদরে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকবে। তবে সদরের আসন ধরে রাখতে হলে হাজী বাহারের বিকল্প নেই। হাজী বাহারের উন্নয়নমুখী কর্মকান্ডের কারণে এখানকার আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক আগের চেয়ে আরো বেশি বেড়েছে। এদিকে কুমিল্লা আওয়ামী লীগে সাংগঠনিক ও ব্যক্তি দ্ব›দ্ব অনেক পুরনো। এসব দ্ব›দ্ব কখনো চুপসে থাকে, কখনো মাথাচাড়া দেয়। নির্বাচন এলে হাজী বাহার ও আফজল খান দ্ব›েদ্বর বিষয়টিই বেশি চাউর হয়।
আবার আওয়ামী লীগের ‘সম্ভাব্য’ প্রার্থীর বহরও বেড়ে যায়। এসব সম্ভাব্য প্রার্থীর বেশির ভাগই মিডিয়ায় প্রচার পাওয়ার আশায় নির্বাচন এলে নড়েচড়ে ওঠে। কেবল সংসদ নির্বাচনই নয়, সব নির্বাচনেই মনোনয়নের আশায় সম্ভাব্যরা উঁকি দেয়। আগামী সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। মনোনয়ন চাইতে পারেন এমন নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহ-সভাপতি ও কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক আলহাজ ওমর ফারুক ও আওয়ামী লীগ নেতা আফজল খানের জ্যেষ্ঠপুত্র মাসুদ পারভেজ খান ইমরান।
এদিকে ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় নির্বাচনে লে. কর্নেল (অব.) আকবর হোসেনের জয়ের মধ্যদিয়ে কুমিল্লা সদর আসনটিতে বিএনপির যাত্রা শুরু হয়। ৮৬ এবং ৮৮ সালের দু’টি নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী আনসার আহমেদ আসনটিতে এমপি নির্বাচিত হন। তারপর ৯১, ৯৬ এবং ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী আকবর হোসেনের টানা বিজয়ের পথ ধরে কুমিল্লা সদর আসন বিএনপির ঘাঁটিতে পরিণত হয়। আর সেই ঘাঁটি বিএনপির অন্তর্কোন্দলের কারণে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাতছাড়া হয়। কুমিল্লা সদরে আগের বিএনপির প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে। দলীয় কোন্দলের জায়গা থেকে বেরিয়ে এসেছে দলটি। আসন্ন একাদশ নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ বিএনপির হাতধরে ২০০৮ সালের পরাজয় ভুলতে চায় দলটি। সদরে মাঠপর্যায়ে বিএনপির কার্যক্রম খুব একটা চোখে না পড়লেও নীরবে বা ঘরোয়া কার্যক্রমে দলটি নির্বাচনী প্রক্রিয়া এগিয়ে রাখছে। জেলা বিএনপির নেতারা সদরে দলীয় প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রিয় বিএনপির ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক হাজী আমিন-উর রশিদ ইয়াছিনকে নিয়ে আগামীর স্বপ্ন দেখছেন। সদরে হাজী ইয়াছিনই বিএনপির প্রার্থী এমনটি নিশ্চিত বলে মনে করছেন দলের নেতারা। কুমিল্লা সদরে বিএনপির বড় শক্তি সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু।
হাজী ইয়াছিনের সাথে তার বৈরিতার অবসান ঘটেছে প্রায় পাঁচ বছর হতে চলছে। এরই মধ্যে সাক্কু ও ইয়াছিনের মধ্যে নতুন করে কোনো বিভেদ দেখা দেয়নি। তবে আসন্ন একাদশ নির্বাচনে যদি হাজী ইয়াছিন মনোনয়ন পান তাহলে মনিরুল হক চৌধুরী দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষেই থাকবেন বলে আশঙ্কা করছেন তৃণমূলের অনেকেই। কেননা গেলো সিটি নির্বাচনে শেষ মুহূর্তে সাক্কুর পক্ষে কাজ না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সদর দক্ষিণের রাজনীতিতে একসময় হাজী ইয়াছিনের সাথে মনিরুল হক চৌধুরীর চরম বিরোধ ছিল। এখনো সেই বিরোধ জিঁইয়ে রয়েছে। তবে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতারা মনে করেন, মনির চৌধুরী কোনো ফ্যাক্টর নয়। দলের হাইকমান্ডসহ স্থানীয় সিনিয়র ও দায়িত্বশীল নেতারা মেয়র সাক্কু ও ইয়াছিনের ঐক্য আগামী নির্বাচনে সদরে বিএনপির জন্য বড় ধরনের পজেটিভ দিক বলে মনে করছেন। দলীয় কোন্দলের কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী হাজী ইয়াছিন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে প্রায় ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন। বর্তমানে কোন্দলমুক্ত ঐক্যবদ্ধ বিএনপি আসন্ন একাদশ নির্বাচনে সদরের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া হয়ে ওঠবেন এমনটিই ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে গত ৯ বছরে সদরে আওয়ামী লীগের যে শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে, তা ভেদ করাটা বিএনপির জন্য অনেক বেশি কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন