বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

সাটুরিয়ায় বেহাল সড়কে ধান বুনে প্রতিবাদ

বালিয়াটি-মুন্সিচর সড়ক

| প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) থেকে মো. সোহেল রানা খান : সড়কে বৃষ্টি হলেই জমে থাকে পানি। কয়েক মাস ধরে কাদায় ভরা সড়কে চলা দায় হয়ে পড়েছে। আগে ভালো কাঁচা সড়কে ইটের সলিং করতে ঠিকাদার সড়কের মাটি খুঁড়ে কাজ না করে চলে গেছে।
ফলে প্রায় পাঁচ মাস ধরে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার বালিয়াটি-মুন্সিচর সড়কে কাদা মাড়িয়ে চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় আশপাশের ১০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষকে।
সড়কের এমন বেহাল দশায় মাসের পর মাস দুর্ভোগে নিরুপায় হয়ে সড়কে ধানের চারা লাগিয়ে প্রতিবাদ করেছে মুন্সিচর গ্রামের মানুষ।
গতকাল বালিয়াটি-মুন্সিচর সড়কের মুন্সিচর এলাকায় সড়কের মাঝে কাদার মধ্যে ধান গাছের চারা লাগিয়ে বেহাল সড়কেটি দ্রæত সংস্কারের দাবি জানিয়ে প্রতিবাদ করেছে স্থানীয় যুবকরা।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি ইউনিয়নের বালিয়াটি-মুন্সিচর এ সড়কের আংশিক সড়ক পাকা করা হয়েছে গত অর্থবছরে। বাকি সড়কটুকু ইট সেলিং করার জন্য এ বছর বরাদ্ধ দেয়া হয়। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করার জন্য এ ভালো কাঁচা সড়কটি উপরের অংশের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশের মাটি কেটে ইট বসানোর জন্য প্রস্তুত করে। পরে ঠিকাদাররা তাদের লোকসান হবে এমন অভিযোগ এনে কাজ না করেই চলে যাওয়ায় বৃষ্টিতে খানাখন্দ হয়ে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় ও কাদার ফলে মারাত্মক সমস্যায় পড়েছে প্রায় ১০ গ্রামের মানুষ।
বালিয়াটি-মুন্সিচর সড়কের মুন্সিচড় মোড় থেকে জগা মার্কেট পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক প্রায় পাঁচ মাস ধরে কেটে রাখায় সামান্য বৃষ্টি হলে হেঁটে যাওয়ার পরিবেশ থাকে না। চলতি বছর অতিবৃষ্টিতে কাঁচা সড়কটি একাধিক স্থানে প্রায় দুই মাস ধরে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার পথচারীর মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।
প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে দুটি প্রাথমিক, দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি দাখিল মাদরাসা এবং একটি কলেজের প্রায় পাঁচ শতাধিক ছাত্রছাত্রীর চলাচল করতে হয়। এ সড়কটি চলাচলের অযোগ্য থাকায় তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ সড়ক দিয়ে সাটুরিয়া উপজেলা ছাড়াও পার্শবর্তী ধামরাই উপজেলা, টাঙ্গাইলের নাগরপুর, মির্জাপুর উপজেলার প্রায় ১০টি গ্রামের মানুষ চলাচল করে। কিন্তু এ সড়ক দিয়ে রিকশা, অটো-রিকশা চলাচলও বন্ধ রয়েছে। ফলে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। কৃষক তার কাচা পণ্য হাটবাজারে নিতে অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে।
সড়কে ধানের চারা রোপণ করা প্রদীপ ও শ্যামল জানায়, সড়কটি বেশ কয়েক মাস ধরে চলাচলের অযোগ্য অবস্থায় পড়ে আছে। সড়কে যান চলাচল তো দূরের কথা, হেঁটে চলাচল করাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাই সড়কের বেহাল দশা ও দ্রæত সংস্কারের দাবিতে ধানের চারা লাগিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
মুন্সিচর গ্রামের সমাজসেবক মো. ফারুক হোসেন জানায়, সড়কটি আগেই ভালো ছিল, কাজ করার জন্য সড়কটি মাটি কাটল, ঠিকাদার কাজ না করে চলে যাওয়াতে সড়কের বেহাল অবস্থা হয়েছে। বৃষ্টি নামলেই ১০-১২ দিন হেঁটেও চলা যায় না। সড়কে চলাচল করতে হলে কয়েক স্থানে হাঁটু পরিমাণ কাদা পারাতে হয়। বালিয়াটি-আতুল্লা কাঁচা সড়কের ইট সেলিং করার জন্য ঠিকাদার মাটি কেটে প্রস্তত করে কাজ না করেই চলে গেছে। ফলে এ সড়কে প্রায় দুই মাস ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে আছে।
বালিয়াটি ঈশ্বর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র সানি ও মুস্তাফিজ জানায়, এ সড়কের ছয়টি স্থানে এমন কাদা হয়ে আছে যে, আমরা হেঁটেই আসতে পারি না। হেটে এলেও কাদায় স্কুলড্রেস নষ্ট হয়ে যায়।
নিকলা বাজারের ব্যবসায়ী ডা. আতাউর রহমান জানায়, আমাদের বাজারের সব ব্যবসায়ী সাটুরিয়া বাজার থেকে পাইকারি পণ্য এনে বিক্রি করে। কিন্তু বালিয়াটি-মুন্সিচর সড়কটি ইট সলিং কাজ শুরু করার পর ঠিকাদার কাজ ফেলে চলে যাওয়ায় সড়কটি চলাচলের অযোগ্য হওয়াতে আগের ১০০ টাকার ভ্যানভাড়া ৩০০ টাকা দিলেও আসতে চায় না। ফলে আমরা ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।
সাটুরিয়া উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক জানান, বালিয়াটি-মুন্সিচর সড়কের ইট সলিং কাজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান না করেই চলে গেছে। যখন প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়, তখন ইটের দাম কম ছিল। কাজের সময় ইটের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এ কাজে লোকসান হবে ভেবে তারা চলে যায়। যাতে বাকি কাজ সম্পন্ন করে তার জন্য আমরা তাদের লিখিতভাবে চিঠি দেবো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন