ইলিশের প্রজনন মৌসুমে সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উপকূলীয় এলাকায় মা ইলিশ ধরার মচ্ছব চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয় গত ১৩ অক্টোবর বিকেলে জরুরী সিদ্ধান্ত শেষে জেলেদের জন্য খাদ্য সয়হাতার চাল বরাদ্দ দিয়ে জেলা প্রশাসকদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ প্রদান করেছে। অভিযানের শেষ সময়ে জেলেদের জন্য খাদ্য সহায়তার চাল বরাদ্দ হলেও গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত উপকূলীয় ১২ জেলায় এখনও জেলেদের মাঝে খাদ্য সহায়তার চাল পৌঁছেনি। এ কারণে সরকারী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলেরা পেটের দায়ে দাদন ব্যবসায়ী ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের যোগসাজসে মা ইলিশ শিকার করছে। জানা গেছে, প্রতি বছর ইলিশ প্রজনন মৌসুমে খাদ্য সহায়তার চাল বিতরণ করা হতো। জেলে প্রতি ২০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছিল। এবার মৌসুমের শেষ পর্যায়ে এসেও তারা খাদ্য সহায়তার চাল পায়নি। মৎস্য অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকগণ সংশয়ে ছিলেন আদৌ জেলেদের চাল দেয়া হবে কিনা। মা ইলিশ শিকার বন্ধে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশমতো অভিযান অব্যাহত রাখলেও পুরোপুরি বন্ধ রাখা যায়নি মা ইলিশ শিকার। এ বিষয়ে দৈনিক ইনকিলাবে গত ১৩ অক্টোবর একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অভিযানের শেষ সময়ে এসে দেশের ২৫ জেলার ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪৬২ জন জেলেকে খাদ্য সহায়তার আওতায় প্রতিজনকে ২০ কেজি করে চাল বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর দেশের ১১২ উপজেলায় ৭ হাজার ৬৮৯ টন চাল বরাদ্দ দিয়ে জেলা প্রশাসকদের চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ ছিল, বরাদ্দ চাল মা ইলিশ শিকার বন্ধ রাখার জন্য স্থানীয় জেলেদের মাঝে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়নের নির্দেশমতে বন্টন ও হিসাব সংরক্ষণ করবেন। গত অক্টোবর মাসের ১ তারিখ থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। অবশ্য এ সময়ে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের দ্বিমত থাকলেও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোন গুরুত্ব দেয়নি। বিশেষজ্ঞদের সাথে মৎস্যজীবী জেলেরাও প্রজনন সময় নিয়ে একমত পোষণ করেছে।
এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক (জাটকা) ইনকিলাবকে জানান, আমাদের নিজস্ব বিশেষজ্ঞরাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তাদের মতামত দিয়েছেন। সে মতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তফা পাটওয়ারী ইনকিলাবকে জানান, এসি রুমে বসে বিশেষজ্ঞরা ভুল সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন। বাস্তবে আমরা কখনো দেখিনি তারা এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। কখনো তারা আমাদেরকে এসব কাজে বা কোন কমিটিতে সম্পৃক্ত করেননি। প্রতি বছর জেলেদের সম্পৃক্ত করে নানা রকম কর্মসূচির মাধ্যমে জেলেদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য অভিযান চলে আসছে। এবার সরকার এ ধরনের কোন উদ্যোগ নেয়নি। সাবেক মৎস্য ও প্রাণী সম্পদমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস দায়িত্ব থাকাকালে এ অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এখন এ মন্ত্রণালয়ে ২ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থাকা সত্তে¡ও পূর্বের মতো কার্যক্রম চলছে না।
১৭ অক্টোবর পার হলেও এখনো জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করা যায়নি। এজন্য জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরছে। অভিযান চলবে আর মাত্র ৪ দিন। অথচ এখনো চাল পৌঁছেনি জেলেদের কাছে।
উল্লেখ্য, সমুদ্র উপকূল এলাকায় ইলিশ প্রজননের ভরা মৌসুমের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। যথা সময়ে খাদ্য সহায়তা না পাওয়া এবং অসাধু মাছ ব্যবসায়ী ও দাদন ব্যবসায়ীদের কারণে উপকূলীয় জেলাগুলোতে ব্যাপকহারে মা মাছ নিধন হচ্ছে। তাছাড়া নদীতে নৌ পুলিশের কার্যক্রম শিথিল, বিভিন্ন সরঞ্জামে অপ্রতুলতা, কোস্টগার্ডের স্বল্পতার কারণে এ বছর অভিযান তেমন সফল হবে না বলে মনে করছেন অনেকে। তাছাড়া অসময়ে নিষেধাজ্ঞা এটির একটি বড় কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। চাঁদপুর, ল²ীপুর, পিরোজপুর, নোয়াখালী, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, চট্টগ্রাম, মুন্সিগঞ্জ জেলাসহ সাগর ও সাগর মোহনা, মেঘনা ও পদ্মা নদীতে ব্যাপক হারে মা ইলিশ ধরার মচ্ছব চলছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন