বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নিবন্ধ

পানিতে ডুবে আর মৃত্যু নয়

জিয়া হাবীব আহসান | প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি), উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ও যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা থেকে দেখা যায়, পানিতে ডুবে মৃত্যু বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ। তাদের হিসাব মতে, বছরে সারাদেশে ১৫ হাজার শিশু ও একদিনে ৪০ জন শিশুর মৃত্যু হয়, যাদের বয়স ১ থেকে ৪ বছর। সাঁতার ক্লাবের হিসাব মতে, গত ৫ বছরে ১৪ থেকে ১৯ হাজার শিশু মৃত্যু ঘটে যাদের বয়স ২ থেকে ১৭ বছর বয়স। ৭ থেকে ১৭ বছরের মৃত্যুহার হচ্ছে সাঁতার না জানার কারণে।
নদী মাতৃক বাংলাদেশে প্রত্যেকেরই সাঁতার জানা আবশ্যক। দেশে প্রচুর পুকুর, জলাশয়, হৃদ, খাল, ঝিরি, ছড়া, নদী ও হাওড় রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল জুড়ে রয়েছে বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশি। তাই পানির দেশে সাঁতার জানা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। সাঁতার না জানাতে প্রতি বছর হাজারো শিশু, কিশোর ও সাধারণ মানুষ মারা যায়। তাছাড়া জলোচ্ছ¡াস, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা কবলিত অঞ্চলে অনেক মানুষ পানির স্রোতে ভেসে যায়। অথচ সাঁতার জানলে অনেক মানুষ বেঁচে যেতে পারে। স্বাভাবিক অবস্থাতেও অনেক শিশু ও কিশোর অসাবধানতার কারণে পুকুরে, নদী ও সমুদ্রে ডুবে মরে। এই অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা কারোই কাম্য নয়। স্বাস্থ্য ভালো রাখা এবং জীবন বাঁচানোর তাগিদে আমাদের ছোটবড় সকলের সাঁতার জানা ও প্র্যাকটিস করা আবশ্যক। সাঁতার বাংলাদেশের জন্য উজ্জ্বল সম্ভাবনাময়ী একটি খেলাও বটে। অন্যান্য খেলার জন্য সরকার ও আমরা যেভাবে জোর দিচ্ছি এবং ব্যয় করছি সাঁতারে সেরকম কোন আগ্রহ দেখা যায় না। অথচ খুব কম খরচে সাঁতার শেখা যায় এবং দেশে বিদেশে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে ক্রীড়া ক্ষেত্রে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করা যায়।
স¤প্রতি আমার ৩ পুত্র সন্তানকে সাতাঁর শেখাতে আমার অর্ধাঙ্গিনী তৎপর হন। তিনি তাদের নিয়ে নগরীর বিভিন্ন অভিজাত হোটেলের সুইমিংপুলে সাতাঁর প্রশিক্ষকদের স্মরনাপন্ন হন। কিন্তু জনপ্রতি ১৬-২০ হাজার টাকা খরচের অপারগতার কারণে সেখানে সাঁতার শেখানো আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। এই হতাশা-নিরাশার মধ্যে আশার প্রদীপ জেলে দিলেন বিশিষ্ট কবি, অধিকারকর্মী ও ফটো আর্টিস্ট বন্ধুবর ওচমান জাহাঙ্গীর। তারা ক’জনে গড়ে তুলেছেন ‘সাঁতার ক্লাব’ নামের একটি ক্লাব। সাঁতার ক্লাবের লক্ষ্য হচ্ছে, সাঁতার শেখানোর পাশাপাশি জাতীয় আন্তর্জাতিক মানের সাঁতারু সৃষ্টি করা, পুকুরে, নদী, সমুদ্রের পানিতে ডুবে আর কারো মৃত্যু না ঘটে সে লক্ষ্যে সচেতনতামূলক সামাজিক যোগাযোগ কর্মসূচী গ্রহণ করা। আমার সন্তানদের সাঁতার শেখানোর পূর্বে ক্লাব পরিচালক ওচমান ভাই প্রথমে তাদের বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের সূত্র শেখালেন। জাহাজ কেন ভাসে শেখালেন, আরো বললেন, সাঁতার শেখাতে প্রথম দরকার আত্মবিশ্বাস। সাঁতার ক্লাবে মূলত ৫ প্রকার সাঁতার শেখানো হয় যথা: ফ্রি স্টাইল সাঁতার বা মুক্ত সাঁতার, ব্যাকস্ট্রোক বা চিৎ সাঁতার, ব্রেস্ট স্ট্রোক বা বুক সাঁতার, বাটারফ্লাই বা প্রজাপতি সাঁতার এবং ডুব সাঁতার। আমি মনে করি, প্রত্যেক শিশু কিশোরের জন্য সাঁতার শেখা বাধ্যতামূলক করে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা দরকার। আমাদের শ্লোগান হোক ‘পানিতে ডুবে আর মৃত্যু নয়।’ আসুন গ্রামে-গঞ্জে নগরে বন্দরে পাড়ায় সাঁতার ক্লাব গড়ে তুলি।
লেখক: আইনজীবী, কলামিস্ট
সুশাসন ও মানবাধিকার কর্মী

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন