মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে নিজ দেশে ফেরাতে হবে। সেক্ষেত্রে ত্রাণনির্ভর কুটনৈতিক তৎপরতা থেকে বের হয়ে সরকারকে জোরালো কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। নির্যাতিত ও মিয়ানমারের শাসকদের প্রতি বিক্ষুব্ধ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দীর্ঘদিন এখানে রাখলে তারা সন্ত্রাস, মাদকে জড়িয়ে যাবে। এমনকি পাহাড়ে জীববৈচিত্র ধ্বংস এবং পরিবেশগত বিপর্যয়ে পড়বে বাংলাদেশ। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রাসপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর এক গবেষণা সমীক্ষায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডির টিআইবি’র নিজস্ব কার্যালয় মাইডাস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই গবেষণা পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন গোলাম মহিউদ্দিন। তিনি ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) বাংলাদেশে অবস্থানজনিত সমস্যা: সুশাসনের জন্য চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ক এই সমীক্ষার চিত্র উপস্থাপন করেন। বক্তৃতা করেন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী সভাপতি ড. ইফতেখারুজ্জামান।
টিআবির গবেষণায় বলা হয়েছে গত দুই মাসে প্রায় ৬ লাখ ৭ হাজার এবং তার আগে চার দশক ধরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা এসেছে ৪ লাখের উপরে। মিয়ানমার থেকে তাদের এদেশে আসতে পদে পদে বাধাগ্রস্ত হতে হয়েছে; ঘাটে ঘাটে অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে রাজনৈতিক নেতা থেকে এমনকি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী থেকেসহ বিভিন্নভাবে তারা প্রতারিত হয়েছে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী ইস্যুতে সরকারের অবস্থা ইতিবাচক ও সব মহলে প্রশংসার। অল্প সময়ে সাময়িকভাবে সমাধান করা গেলেও দীর্ঘমেয়াদি হিসেবে টেকসই হবে না। কক্সবাজারের উখিয়া, টেকনাফে স্থানীয় জনগণের তুলনায় বর্তমানে অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা দ্বিগুণ। তিনি বলেন, এটা নতুন সমস্যা নয়। রোহিঙ্গা সংকট আন্তর্জাতিক সমস্যা। আমাদের কূটনীতিকে সুদৃঢ় করতে হবে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ব ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে সরকার বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে সারাবিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ মানবিকতার প্রশংসা করছেন বিশ্ব নেতারা।
টিআইবির সমীক্ষায় বলা হয় মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পৌঁছাতে প্রকৃত নৌকা ভাড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা হলেও তাদেরকে দিতে হয়েছে ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এ ভাড়া তাদের কিয়াট (মিয়ানমারের মুদ্রা) কিংবা গহনা দিয়ে পরিশোধ করতে হয়েছে। সর্বকালের সব থেকে বড় মানবিক বিপর্যয় চলছে তাদের উপরে। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে রোহিঙ্গাদের জন্য নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে। তারমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরসমূহ থেকে সরাসরি মাঠ পরিদর্শনে হচ্ছে। জরুরী অবস্থা বিবেচনায় সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যে সন্তোষজনক সমন্বয়। বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের মধ্যে আনা হয়েছে। এখন প্রয়োজন কূটনৈতিক সাফল্য দেখিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরত নিতে মিয়ানমার প্রশাসনকে বাধ্য করা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন