শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

মাওলানা মাহমুদ হাসান: রেশমী রুমাল আন্দোলনের নেতা

| প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কে.এস. সিদ্দিকী
ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রদূত খেলাফত ও রেশমী রুমাল আন্দোলনের প্রাণপুরুষ এবং দেওবন্দের সুবিখ্যাত আলেম হজরত মাওলানা মাহমুদ হাসান (রহ.) এর ওফাত বার্ষিকী ৩ নভেম্বর। ১৯২০ সালের এইদিন তিনি ইনতেকাল করেন। তিনি ‘শায়খুল হিন্দ’ নামে সুবিখ্যাত। তিনি ডা. মোখতার আহমদ আনসারীর গৃহে ইনতেকাল করেন। তার জানাজার পর দিল্লী হতে দেওবন্দ আনা হয় এবং যেখানে তাকে দাফন করা হয়। মাওলানা মোহাম্মদ আলী তার ইনতেকালের খবর শুনে বলেন, তার ওফাত আমার কোমর ভেঙ্গে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে মওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহ.) বলেন, কোনো কোনো লোক তাকে আসীরে মালদা বা মাল্টার কয়েদি বলে থাকে। আমি বলবো তিনি ছিলেন, আমিরে মাল্টা। (মাল্টার শাসক)। তোমরা বলে থাকো শায়খুল হিন্দ (ভারত বর্ষের শায়খ) আমরা বলি, শায়খুল আলম (বিশ্বের শায়খ)। ভারতের এ দুই সেরা মণীষীর উল্লেখিত মন্তব্য ছাড়াও শায়খুল হিন্দের ইনতেকালে আরো অনেকে গুরুত্বপূর্ণ অভিমত ব্যক্ত করেন।
দারুল উলুম দেওবন্দ কায়েম হওয়ার ১৫ বছর পূর্বে ১৮৫১ সালে মাওলানা মাহমুদ হাসান জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা জুলফিকার আলী ছিলেন বিখ্যাত আলেম। বেরেলীতে এ ঘরানার যথেষ্ট সুনাম ছিল। খোশহাল ও মুখ স্বাচ্ছন্দ্যের এ ঘরানা মানসম্মানে ও সুপরিচিত ছিল। মাওলানা মাহমুদ হাসানের পিতা সে যুগের সেরা আলেম মাওলানা মামলুক আলির নিকট শিক্ষা লাভ করেছিলেন।
এ সম্পর্কে অপর একটি বর্ণনা অনুযায়ী, মাওলানা কাসেম নানুতবী (রহ.) ও স্যার সৈয়দ আহমদ খান, এ দুজনই ছিলেন মাওলানা মামলুক আলীর ছাত্র। একসঙ্গেই তারা তার কাছে শিক্ষা লাভ করেছিলেন। পরবর্তীকালে কর্মজীবনে এ দুজন দুই পদ্ধতির অনুসারী হয়ে বিশ্বে খ্যাতির অধিকারী হয়েছিলেন। স্যার সৈয়দ আহমদ খান আধুনিক শিক্ষা লাভ করে ইংরেজ সরকারকে সমর্থন করে স্যার উপাধি লাভ করেন এবং ইংরেজি শিক্ষার প্রবর্তক হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। ইংরেজি শিক্ষা হতে বিরত থাকা মুসলমানদের সেদিকে আকৃষ্ট করতে গিয়ে নিন্দা সমালোচনারও অধিকারী হয়েছিলেন। তিনি মনে করতেন, ইংরেজদের প্রতি সমর্থন করে তাদের ভাষা আয়ত্ব করেই তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হবে। তার আলীগড় আন্দোলন ছিল এর প্রমাণ।
পক্ষান্তরে মাওলানা কাসেম নানুতবী (রহ.) যে দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসা কায়েম করে উপমহাদেশে ইসলামী শিক্ষায় অনন্ত ধারার সূচনা করেছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমানে দেওবন্দ উপমহাদেশের ‘আল-আজহার’ নামে খ্যাত। আর এ ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে হজরত মাওলানা কাসেম নানুতবী ব্রিটিশ বেনিয়াদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ জেহাদের ডাক দেন এবং এ শিক্ষা কেন্দ্রের উলামা ছাত্রবৃন্দ স্বাধীনতা সংগ্রামে সরাসরি অংশগ্রহণ করে যে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছেন তা ইতিহাসের এক অতি উজ্জ্বল অধ্যায়। ইংরেজ বিরোধী দেওবন্দ আন্দোলন তথা স্বাধীনতা সংগ্রামে কত উলামা-মাশায়েখ শাহাদাত বরণ করেছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তার বিবরণ লিপিবদ্ধ রয়েছে। খোদ মাওলানা মামলুক আলীও এক সময় দেওবন্দ আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা ছিলেন।
মাওলানা জুলফিকার আলী মাওলানা কাসেম নানুতবী এবং স্যার সৈয়দ আহমদ খানের ওস্তাদ মাওলানা মামলুক আলী সম্পর্কে উলামায়ে হিন্দ কাশানদার মাযী নামক বিখ্যাত গ্রন্থে বলা হয়েছে, বালাকোট ঘটনার পর যখন এখানে পর্যবেক্ষণ বেড়ে যায় এবং কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে তখন তিনি মাওলানা শাহ মোহাম্মদ ইয়াকুবের সঙ্গে হিজরী ১২৫৮/১৮৪২ সালে (অর্থাৎ বালাকোট ঘটনার এগারো বছর পর) মক্কা মোআজ্জমায় চলে যান, যাতে বহির্শক্তিগুলোর মাধ্যমে ভারতবর্ষের অভ্যন্তরীণ স্বাধীনতা আন্দোলনকে সাহায্য করা যায় এবং এখানে কাজ করার জন্য তার ছাত্র মাওলানা মামলুক আলী সাহেবের নেতৃত্বে একটি বোর্ড গঠন করে দেন।
মাওলানা মামলুক আলী সাহেব সরকারি চাকুরে হিসেবে দিল্লী অ্যারবিক কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। তাকে সরকারের বিশ্বস্ত মনে করা হতো। তার নেতৃত্বে যে সংগঠন হচ্ছিল সে সম্পর্কে কোনো সন্দেহ-সংশয় ছিল না। কিন্তু ১৮৫৭ এর মোজাহেদীনের অধিকাংশ মাওলানা মামলুক আলীর ছাত্র ছিলেন। (২৫০-২৫১ ২য় খন্ড) গঠিত বোর্ডে সভাপতি হিসেবে মাওলানা মামলুক আলী বিশেষ দুইজন সদস্য মাওলানা শাহ আবদুল গণি ও ভুপালের নবাব নবাব সিদ্দিক হাসানের পিতা মাওলানা কুতুবুদ্দীন দেহলভী সমেত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। মাওলানা মাহমুদ হাসানের পিতার ওস্তাদ মাওলানা মামলুক আলীর চিন্তাধারা পরিবারকে ইংরেজ বিরোধী করে তুলেছিল। এটি ছিল বাস্তব। মাওলানা মাহমুদ হাসানের পরবর্তী জীবনে তার প্রতিফলন রয়েছে।
মাওলানা মাহমুদ হাসানের শিক্ষা জীবনে ফিরে আসা যাক। তার শিক্ষা জীবনের প্রথমদিকের কথা, তার মাতা তাকে খুবই ভালোবাসতেন। এ সম্পর্কে খোদ তিনি বলেন, আমার প্রতি আমার মাতার এতই ভালোবাসা ছিল যে, তার সাথে কোনো তুলনাই হয় না। আমি দরসে লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম, ঘরে খাবার তৈরি হতো, সকলের খাবার শেষ হতো, কিন্তু আমার মাতা কিছু আটা আলাদা করে রেখে দিতেন। গরমকালে আমি যখন লেখাপড়া শেষ করে দুপুর বারোটা বাজে গৃহে প্রত্যাবর্তন করতাম তখন তিনি সেই আটা দিয়ে টাটকা রুটি পাকিয়ে আমাকে খাওয়াতেন।
মাওলানা মাহমুদ হাসান মিয়াজী মঙ্গলোরীর নিকট কোরআনের অধিকাংশ পাঠ গ্রহণ করেন। মওলবী আবদুল লতিফের নিকট ফার্সির প্রাথমিক কিতাবগুলো পড়েন। তার বয়স যখন পনোরো বছর তখন দেওবন্দ আরবি মাদরাসা চালু হয়। তিনিও সেখানে ভর্তি হয়ে যান। তিনি প্রথমদিকের ছাত্রদের মধ্যে গণ্য হতে থাকেন। হিজরী ১২৮৯ সালে তিনি সিহাহ সিত্তার সকল হাদীসগ্রন্থ এবং ফনুনাত সমাপ্ত করেন। হিজরী ১২৯০ সালে মাদরাসার বার্ষিক সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে তাকে সনদ প্রদান করা হয়। হিজরী ১২৯২ সালে তাকে মাসিক পনোরো টাকা বেতনে মাদরাসার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তার আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার প্রমাণ এই যে, হিজরী ১৩১৩ সালে দুর্ভিক্ষ সত্তে¡ও শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়। মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী (রহ.) তার মাসিক বেতন পঞ্চাশ টাকা করেন এবং বিনা বাক্যে তিনি তা গ্রহণ করেন। অতঃপর দুইবার তিনি স্বীয় ওস্তাদকে স্বপ্নে দেখেন, স্বপ্নে তিনি বলেন, মাহমুদ, কতকাল তুমি মাদরাসা হতে মাসোহারা গ্রহণ করতে থাকবে? তাই দুই বারই তিনি মোসোহারা ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছা করেন। কিন্তু মাওলানা রশীদ আহমদ তা মানেননি। তার ওফাতের পর আরেকবার শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো হয়। তাই তার বেতনও বৃদ্ধি করে ৭৫ টাকা ধার্য করা হয়। কিন্তু এবার তিনি এ বর্ধিত হার গ্রহণ করেননি এবং এর পর মাদরাসা হতে বেতন গ্রহণই বন্ধ করে দেন। তিনি সারাজীবন চাটাইতে বসে শিক্ষা দান করেন। শেষ জীবনে তিনি অর্শ্বরোগের কারণে তার বসার জন্য হিতাকাক্সিক্ষদের কেউ কেউ আরামদায়ক বিশেষ ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন, তাতে তিনি প্রয়োজনে বসতেন, কিন্তু তাতেও কিছুটা কষ্ট হতো।
দেওবন্দ মাদরাসা কায়েম হওয়ার পর সেখানকার কোনো কোনো লোকের ধারণা হয়েছিল যে, এ মাদরাসা যখন থেকে কায়েম হয়েছে আমাদের জীবনে অভাব দারিদ্র্য নেমে এসেছে। মাওলানা যখন এ খবর অবগত হন, তখন তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিষয়টি এইরূপ নয় যে, মাদরাসা তোমাদের অভাব, দারিদ্র্যের কারণ, বরং আসল কথা হচ্ছে, তোমরা পূর্বে আল্লাহর আহŸান বা নির্দেশনাবলী অবগত ছিলে না, তখন তোমাদের পাপকর্মও ছিল হালকা, এখন যেহেতু তোমরা মাদরাসার কারণে আল্লাহর নির্দেশাবলীর প্রতি জেনেশুনে আমল করছ না, এজন্য তোমাদের প্রতি আল্লাহর আক্রোশ। তোমরা যদি আমল করো, তাহলে আবার খোশহাল হয়ে যাবে।
দারুল উলুম দেওবন্দে শায়খুল হিন্দ হজরত মাওলানা মাহমুদ হাসান সুদীর্ঘকাল অধ্যাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি দারুল উলুমের সদরুল মোদার্রেছীন অর্থাৎ হেড মাওলানা হিসেবে ২৪ বছর (১৮৯০-১৯১৪) দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া দারুল উলুমের সার পুরস্ত বা পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ১৯০৬ হতে ১৯১৪ ফের ১৯১৮ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত দায়িত্বরত ছিলেন।
হজরত শায়খুল হিন্দের কিছু রচনাও রয়েছে। তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কীর্তি হচ্ছে কোরআন শরীফের পূর্ণাঙ্গ উর্দূ অনুবাদ। শেষে অনুবাদক হিসেবে শায়খুল হিন্দ সাহেবের এক দীর্ঘ ভূমিকা রয়েছে। শুরুতে সউদী বাদশাহ মরহুম ফাহাদ ইবনে আবদুল আজীজের আরবিতে পৃষ্ঠাব্যাপী ভূমিকা রয়েছে। এ তরজমা ও তফসীরের বাংলা অনুবাদ হয়েছে বলে জানা যায়।
আসীরে মাল্টা: হিজরী ১৩৩৩ সালে হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে মাওলানা মাহমুদ হাসান মক্কা শরীফে গমন করেন এবং প্রায় ছয় মাস তিনি মদীনা মোনাওয়ারায় অবস্থান করেন। এটি ছিল যুদ্ধের সময়। তার সম্পর্কে কেউ পুলিশকে জানায় যে, এ আলেমগণ ইংরেজদের গুপ্তচর এবং সিআইডি। তাই পুলিশ তাদের উত্যক্ত করতে থাকে। এ সময় তুরস্কের যুদ্ধমন্ত্রী আনোওয়ার পাশা ও নৌমন্ত্রী জামাল পাশা মদীনায় আগমন করেন। জিয়ারতের পর এসব মন্ত্রী মদীনায় সমবেত হন। প্রথমে মুফতী সাহেব বক্তৃতা করেন। অতঃপর আনোয়ার পাশা মাওলানা মাহমুদ হাসানকে বক্তৃতা করার জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু তিনি অস্বীকার করেন। অতঃপর মওলানা হোসাইন আহমদ বক্তৃতা প্রদান করেন, তাতে তিনি মাওলানা মাহমুদ হাসানের পরিচয় তুলে ধরেন। খাবারের পর মুফতী সাহেব মন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, পুলিশ এমন ব্যক্তিত্বের প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে। তাই তারা পুলিশকে কঠোরভাবে নিষেধ করে দেন।
হিজরী ১৩৩৪ সালে মাওলানা মাহমুদ হাসান মদীনা হতে মক্কায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং সেখানে বোখারী শরীফের দরস শুরু করেন। হিন্দুস্থানে শরীফে মক্কার বিদ্রোহের খবর শুনে সন্দেহ ছড়িয়ে পড়ছিল। এসময় আওরঙ্গবাদের খান বাহাদুর মোবারক আলী খান মক্কা পৌছে তুর্কীদের সমালোচনা এবং শরীফে মক্কার সরকারের গুণকীর্তন করে শরীফ দরবারে প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার করেছিল এবং সে নিজের সম্পর্কে একথা প্রচার করিয়ে দিয়েছিল যে, সে হিন্দুস্থান সরকারের প্রেরিত। সুতরাং একটি ফতোয়া ও ঘোষণার ব্যবস্থা করা হয়। এ ফতোয়ায় তুর্কীদের মোলহেদ (নাস্তিক) ও কাফের আখ্যায়িত করে শরীফে মক্কার বিদ্রোহকে ন্যায় ও সঠিক বলে গণ্য করা হয়। মক্কা মোআজ্জমার উলামা সমাজ ভীত হয়ে এ ফতোয়ায় স্বাক্ষর করেছিলেন। এ ফতোয়া যখন খান বাহাদুরের নিকট পৌঁছে তখন সে বলল যে, ঐসব আলেমকে হিন্দুস্থানে কেউ চেনে না তবে মাহমুদ হাসান একজন বিজ্ঞ আলেম। তার স্বাক্ষর যদি হয়ে যায় তাহলে এ ফতোয়া অর্থবহ হতে পারে। শরীফে মক্কা এ প্রস্তাব পছন্দ করেন। কিন্তু মাহমুদ হাসান এ ফতোয়ায় স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানান। এভাবে মাওলানার বিরুদ্ধে সরকারকে বিভ্রান্ত করার একটি অস্ত্র হাতে এসে যায়। মাওলানা মাহমুদ হাসান ও তার সঙ্গীদের বন্দি করে মাল্টায় প্রেরণ করা হয়, যাদের মধ্যে মাওলানা হোসাইন আহমদ মাওলানা আজীজ গুল, মাওলানা ওয়াহীদ আহমদ এবং মাওলানা নুসরত হোসাইন অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
কথিত আছে যে, মাওলানা মাহমুদ হাসানকে যখন জাহাজে তোলার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন উপস্থিত তার ভক্ত-অনুরক্তদের মধ্যে এক করুণ দৃশ্যের অবতারণা হয়, যা বর্ণনাতীত। এ সময় তার ছাত্র মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী (রহ.) এর যে অবস্থা হয়েছিল, তা তিনি আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে এইভাবে ব্যক্ত করেছিলেন।

‘দর্দে আয় হিজরে হজরত
কমৃতর আয় ইয়াকুবে নিসৃত
ও পিছায় গুম কারদয় হআসৃত
মান পেদার গুম কারদাহ আম।

অর্থাৎ- হজরতের বিদায় ব্যথা (আমার কাছে) ইয়াকুব (আ.) এর চেয়ে কম নয়, তিনি হারিয়েছিলেন পুত্র আর আমি হারিয়েছি পিতা। ওস্তাদের প্রতি ছাত্রের এ অনুভূতির কোনো দৃষ্টান্ত হতে পারে না।
মাল্টায় জেল জীবন কীভাবে কেটেছিল তার বিবরণ হজরত মাদানী (রহ.) এর আত্মজীবনী ‘নুকুশ’ পাঠ করলে জানা যেতে পারে। শায়খুল হিন্দ হজরত মাহমুদ হাসান (রহ.) এ সময় পাঁচ বছর কারা নির্যাতনের পর মুক্তি লাভ করেন। জানা যায় যে, আওরঙ্গবাদের খান বাহাদুর মোবারক আলী খানের প্ররোচনায় তুর্কিদের বিরুদ্ধে কোফর ও নাস্তিকতার ফতোয় রচনা করিয়ে তাতে ভীতসন্ত্রস্ত আলেমদের স্বাক্ষর নেয়া হয়েছিল এবং মাওলানা মাহমুদ হাসানের ওপরও চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল তাতে স্বাক্ষর করার জন্য। তিনি শরীফে মক্কার বিদ্রোহকে জায়েজ ও ন্যায়সঙ্গত বলতে অস্বীকার করায় তার ও তার সঙ্গীদের ওপর জেল-জুলুম নেমে আসে। এ প্রসঙ্গে তার রেশমী রুমাল আন্দোলনের কথা এসে যায়। এ সম্পর্কে বর্ণনায় বিভিন্নতা লক্ষ করা যায়। আমাদের পরবর্তী আলোচনা মাওলানা মাহমুদ হাসানের রেশমী রুমাল আন্দোলন।
(আগামাীবারে সমাপ্ত)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন