শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রোগীর ভারে বেহাল চমেক হাসপাতাল শয্যা ১৩১৩ : রোগী থাকছে ৩ হাজার

আইয়ুব আলী : | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 রোগীর ভারে বেহাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। প্রতিদিন আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার রোগী ভর্তি থাকে। শয্যা ছাড়িয়ে মেঝে, বারান্দা, করিডোর এমনকি সিঁড়িতেও রাখতে হচ্ছে রোগীদের। এতদঞ্চলের বিশাল সংখ্যক রোগীর চাপ যেন নিতে পারছেনা হাসপাতালটি। মাত্র ৫শ’ শয্যার অবকাঠামোতে নির্মিত হাসপাতালের বর্তমান শয্যা সংখ্যা ১৩শ’ ১৩টি। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল এটি। ইতোমধ্যে হাসপাতালটিতে উন্নত চিকিৎসার অত্যাধুনিক সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়েছে। হৃদরোগ, কিডনি, শিশু রোগসহ বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে উন্নতমানের বিশেষায়িত সেবা চালু রয়েছে। এ কারণে রোগীর সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। চট্টগ্রাম মহানগরীসহ এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য ক্লিনিক গড়ে উঠলেও সেগুলোতে মানসম্মত চিকিৎসা নেই। উল্টো মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ভুল ও অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন অনেকে। এ কারণে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন সচ্ছল ব্যক্তিরাও। এসব কারণে দিন দিন রোগীর সংখ্যা বাড়লেও হাসপাতালে জনবল বাড়েনি। ৪২ ওয়ার্ড বিশিষ্ট এ হাসপাতালে স্থান সঙ্কট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে নগরীতে বিশেষায়িত আরও তিনটি হাসপাতালের প্রস্তাব করেছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি চিঠি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সরকারি পর্যায়ে বিশেষায়িত হিসেবে একটি শিশু হাসপাতাল, একটি হৃদরোগ হাসপাতাল এবং অপর একটি ট্রমা (অর্থোঃ সার্জারী) হাসপাতাল স্থাপনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। একইসাথে বিদ্যমান হাসপাতালের জন্য এক হাজার শয্যা ধারণক্ষমতার নতুন একটি ভবন নির্মাণেরও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, শুধু চট্টগ্রাম মহানগরীতে অর্ধ কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস। এর বাইরে চট্টগ্রামসহ এতদঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবায় চমেক হাসপাতাল একমাত্র ভরসাস্থল। শিল্পায়ন, সড়ক দুর্ঘটনা, অগ্নিকান্ডসহ বিভিন্ন কারণে হাসপাতালে দিন দিন রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। তবে কিছু নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে রোগীর চাপ সহনীয় মাত্রার বাইরে। এর মধ্যে শিশু স্বাস্থ্য ওয়ার্ডে প্রতিনিয়ত প্রায় ৬ শতাধিক, হৃদরোগ ওয়ার্ডে ৩৫০, অর্থোপেডিক ট্রমা ওয়ার্ডে ৩ শতাধিক, নিউরো সার্জারী ওয়ার্ডে প্রতিনিয়ত ২ শতাধিক রোগী ভর্তি থাকে। এসব ওয়ার্ডের প্রতিটির রোগীর সংখ্যা একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালের রোগীর সংখ্যার চেয়ে বেশি। এর প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগরীতে বিশেষায়িত একটি শিশু হাসপাতাল, একটি হৃদরোগ হাসপাতাল এবং অপর একটি ট্রমা হাসপাতাল গড়ে তোলা অপরিহার্য।
চমেক হাসপাতালের ক্যান্সার ওয়ার্ডে (রেডিও থেরাপি) কোবাল্ট-৬০ রেডিও থেরাপি মেশিনটি অকেজো হয়ে যাওয়ায় তিন বছর ধরে থেরাপি সেবা বন্ধ রয়েছে। ফলে নতুন মেশিন না বসায় এতদঞ্চলের ক্যান্সার রোগীরা থেরাপি সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। অন্যদিকে মহিলাদের জরায়ু ক্যান্সারের চিকিৎসায় ৬ কোটি টাকার অত্যাধুনিক একটি ব্র্যাকি থেরাপি আনা হলেও দেড় বছর ধরে ওয়ার্ডে পড়ে আছে। অভিযোগ রয়েছে, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেশিনটি স্থাপনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করায় সেটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া দুই মাস ধরে ওই ওয়ার্ডে ওষুধ সরবরাহও বন্ধ রয়েছে। ফলে গরীব রোগীরা ওষুধ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ জালাল উদ্দিন জানান, জনবল ও স্থান সংকটের কারণে হাসপাতালে বিশাল সংখ্যক রোগীর কাক্সিক্ষত সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। তাছাড়া নির্দিষ্ট কয়েকটি ওয়ার্ডে রোগীর চাপ এত বেশি যে তা ওয়ার্ডের সহনীয় মাত্রার বাইরে। এর মধ্যে শিশু ওয়ার্ড, হৃদরোগ ওয়ার্ড, অর্থোপেডিক ও নিউরো সার্জারী ওয়ার্ড উল্লেখযোগ্য। এসব ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের জন্য পূর্ণাঙ্গ একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল অতি জরুরী বলে মনে করেন হাসপাতালের পরিচালক।
এদিকে সংকটের আবর্তে রয়েছে চমেক ফরেনসিক বিভাগ ও মর্গ ব্যবস্থাপনা। ইলেকট্রিক করাত এক যুগ ধরে অচল। ভোতা হাতুড়ি, ছোরা বাটাল ব্যবহার করে লাশ কাটা হয়। মর্গের এক্সরে মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অচল রয়েছে। জনবল ও মহিলা ডাক্তার নেই। লাশ সংরক্ষণের জন্য ৮ জনের ক্যাপাসিটি ফ্রিজ দীর্ঘদিন ধরে অচল। এছাড়া লাশ সংরক্ষণের ২০ জনের ক্যাপাসিটি ফ্রিজ দুই মাস ধরে অচল রয়েছে। চিকিৎসক, অ্যাম্বুলেন্স ও যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে। এ বিভাগে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তৈরি হচ্ছেনা। ৬ বছরে মাত্র ৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। অপরদিকে এখানে বছরে ১২শ’ ময়নাতদন্ত হয়। চমেক হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও চিকিৎসা সনদ সঠিক সময়ে না পাওয়ায় মামলার তদন্ত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্সে। নগর পুলিশের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ শুনে চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) এ কিউ এম নাছির উদ্দীন দ্রæততার সঙ্গে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও চিকিৎসা সনদ সরবরাহের জন্য চমেকের ফরেনসিক বিভাগকে নির্দেশ দেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন