শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ফের কেন সতর্কবার্তা

| প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলার জোরালো আশঙ্কা রয়েছে বলে আবারও অস্ট্রেলিয়া তার নাগরিকদের জন্য সতর্কবার্তা দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেডের ওয়েবসাইটে দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, যে কোনো সময় ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। একান্ত প্রয়োজনে বাংলাদেশ সফরে যেতে হলে, অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। সম্ভব হলে ভ্রমণের পরিকল্পনা বাতিল করুন। আততায়ীরা পশ্চিমা দেশের নাাগরিকদের টার্গেট করতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি ঢাকায় অবস্থানরত জাতিসংঘের কর্মকর্তা-কর্মচারি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চলাচল সীমিত করার পরামর্শ দিয়ে বলা হয়েছে, গুলশানে অবস্থিত নির্দিষ্ট দুটি রেস্টুরেন্ট ছাড়া অন্য কোনো রেস্টুরেন্টে যাওয়া যাবে না। জনসমাবেশ এড়িয়ে চলতে হবে এবং রাত দশটার মধ্যে বাসায় ফিরতে হবে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, এর আগে অস্ট্রেলিয়া এ ধরনের সতর্কবার্তা দিয়েছিল। নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের সফর পর্যন্ত বাতিল করেছিল। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট হয়ে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফর করে নিরাপদেই ফিরে যায়।
বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে এমন অজুহাতে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ বিগত কয়েক বছর ধরে তাদের নাগরিকদের সতর্কবার্তা দিয়ে আসছে। আদতে বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। বাংলাদেশে অবস্থানরত ও ভ্রমণরত পশ্চিমা নাগরিকদের তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। বিশেষ করে পর্যটন এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবসময়ই রয়েছে। ফলে বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা নির্বিঘেœই ঘুরে বেড়িয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই অতিথিপরায়ণ। আতিথ্য দিয়ে বিদেশিদের মুগ্ধ করার ইতিহাস ও ঐতিহ্য তাদের চিরন্তন বৈশিষ্ট্য। বিদেশিরাও বাংলাদেশিদের সহজ-সরল আচরণ ও আতিথ্যে মুগ্ধ হন এবং প্রশংসা করেন। এখানে সামাজিক সম্প্রীতি ও বন্ধন সবসময়ই অটুট এবং নিরেট থাকে। বিগত সময়ে বিচ্ছিন্নভাবে যে কয়টি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেগুলো সফলভাবে মোকাবেলা করেছে এবং এর সাথে সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতারও করেছে। সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান নিয়মিতই চলছে। ফলে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে, দেশের মানুষের ঐক্যবদ্ধ থাকার কারণে। এ প্রেক্ষিতে, অস্ট্রেলিয়ার নতুন করে সতর্কতা জারির বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাছাড়া এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি বা চলমান নয় যে, সতর্কতা জারি করতে হবে। যদি এমন হতো, বাংলাদেশে সংঘাতমূলক পরিস্থিতি চলছে, তাহলে এই সতর্কবার্তা জারি করা যুক্তিযুক্ত হতো। পশ্চিমা বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর বুঝতে হবে, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এখানে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন অবাধ ও গতিশীল রাখা অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে যথাযথ পরিস্থিতি ও কারণ ছাড়া তাদের নাগরিকদের উদ্দেশ্যে সতর্ক বার্তা জারি করা বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ক্ষতিকর। বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের ক্ষতি হয়, এমন কোনো আচরণ করা সমীচিন নয়। তাদের কাছে যদি সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে বা কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এমন সুস্পষ্ট কোনো তথ্য থেকে থাকে, তবে বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে উচিত তা বাংলাদেশ সরকারকে আগেভাগে জানানো। এতে সরকারের পক্ষেও আগাম নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হতে পারে। শুধু মাত্র অনুমানের উপর ভিত্তি করে কোনো ধরনের সতর্কবার্তা জারি করা উচিত নয়। তাদের মনে রাখা উচিত, এর আগে যেসব সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছিল, পরবর্তীতে সেগুলো অসারে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশে এখন পর্যটন মৌসুম চলছে। এ সময়ে বিদেশি অনেক পর্যটক বাংলাদেশ ভ্রমণে আসে। অস্ট্রেলিয়া কর্তৃক এমন সময়ে সতর্কবার্তা জারি করা নিঃসন্দেহে পর্যটন খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যেও তার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়বে। জনগণের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। বিষয়টি বিবেচনা করে, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে, অস্ট্রেলিয়া কেন সতর্কবার্তা জারি করেছে, তা নিয়ে দেশটির সাথে কথা বলা। কেন এবং কিসের ভিত্তিতে তারা সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা করছে, এ বিষয়টি অনুপুঙ্খভাবে জানা। সরকারের পক্ষ থেকেও স্পষ্ট করতে হবে, দেশে এ ধরনের কোনো হামলা হওয়ার ন্যূনতম আশঙ্কা নেই। দেশের ভাবমর্যাদা সুরক্ষার্থেই একটি স্পষ্ট বক্তব্য দেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি ঢাকায় জাতিসংঘ মিশন থেকেও কেন তার কর্মকর্তা-কর্মচারিদের চলাচল সীমিত করার জন্য সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে, তাও জানা দরকার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন