শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

চিঠিপত্র

| প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বখাটেদের রুখবে কে?
সা¤প্রতিক সময়ে দেশের আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে ইভ টিজিং বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। প্রতিদিনই স্কুল-কলেজগামী মেয়েরা হিংগ্র বখাটেদের উৎপাতের শিকার হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষিকা, চাকরিজীবী নারী, এমনকি বয়স্করাও এর শিকার হচ্ছেন। সামাজিক এ ব্যাধিটি সমাজে এক আতঙ্কের নাম হিসাবে পরিচত হয়ে উঠেছে। অনেকেই ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। অথচ কয়েক বছর আগেও আমাদের দেশের অনেকেই ইভ টিজিং সম্পর্কে খুব বেশি জানত না। এর প্রায়োগিক অর্থ বুঝত না। কিন্তু দিন দিন এর প্রবণতা বৃদ্ধির কারণে সরকার ও সমাজের সুশীল মানুষগণ বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। আজকাল শুধু শহরেই নয়, গ্রামের অনেক অভিভাবকই মেয়েকে একা স্কুলে যেতে দিচ্ছে না। ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না। কারণ পথে-ঘাটে, স্কুল-কলেজে অর্থাৎ ঘর থেকে বের হওয়ার পরই ইভ টিজিংয়ের বিড়ম্বনা শুরু হয়। কারা এই ইভ টিজিংয়ের সাথে জড়িত রয়েছে? অভিভাকরা কাদেরকে ভয় পাচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব, যারা বিভিন্ন এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে, যাদের বাসা হাট-বাজার সংলগ্ন, তারা বখাটে বেশি হয়ে থাকে। এরাই ইভ টিজিংয়ের প্রধান আসামী। তবে ইদানিং পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা ইভ টিজিংয়ের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন বালিকা বিদ্যালয় বা কলেজের সামনে অবস্থান করে। প্রকাশ্যে ধুমপান করে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসার পথে এবং ছুটির পর বাসায় যাওয়ার পথে তরুণীদের উত্যক্ত করে। শুধু উত্যক্ত করে থেমে থাকে না, কখনো তারা শরীরে পর্যন্ত হাত তোলে। এটি কখনো কখনো এমন অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায় যে, লজ্জায়, ক্ষোভে কোনো কোনো মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। ইভ টিজিংকারীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মেয়েদের লক্ষ্য করে রোমান্টিক গান গায়। যখন মেয়েদের থেকে বিরক্তির আভাস পায়, তখন তারা অশালীন উক্তি ব্যবহার করতে থাকে। তবে এখন আর অশালীন উক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অশ্লীল ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, পর্নোগ্রাফি প্রদর্শন, চিঠি, ই-মেইল, কার্টুন, বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিল, নোটিশ বোর্ড, টেলিফোন, এসএমএস, পোস্টার, নোটিশ, দেয়াল লিখনের মাধ্যমে এখন ইভটিজিং চলছে। এর মাধ্যমে অনেকে মেয়েদের প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছে। আর প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে মেয়েরা শারীরিকভাবে লাঞ্চিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রের মুখোমুখি হচ্ছে। মেধাবী ছাত্রীদের স্বপ্ন-আশা সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এভাবে আর কত সমাজে এ অপরাধ চলতে থাকবে?
ইভ টিজিং প্রতিরোধে সরকারের ভূমিকা মূখ্য রয়েছে। তাই সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ইভ টিজিং প্রতিরোধে জোর আলোচনা চালাতে হবে। নানাবিধ কার্যকারী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এসবের পাশাপাশি বখাটেদের আটক করতে প্রশাসনের দ্বিধাবোধ করা যাবে না। কোনো রকম উৎকোচ গ্রহণ করা যাবে না। দলীয় প্রভাবকে আশ্রয় দেওয়া যাবে না। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুলিশের উদ্যোগে ইভ টিজিং প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের করণীয় বিষয়ে সচেতনতা মুলক সেমিনারের আয়োজন করতে হবে। মেয়েদের আত্মরক্ষামুলক নাটক প্রচার করতে হবে। সর্বোপরি, যেহেতু রাষ্ট্রীয় আইনে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ, সেহেতু মিডিয়ার মাধ্যমে, পোস্টার লাগিয়ে অথবা মিছিল, মানববন্ধন করে এই আইনটিকে বখাটেদের সামনে তুলে ধরতে হবে। আইনটি তারা অনুধাবন করে এ জঘন্য কাজ হতে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে। তবেই না হয় এ সমাজ হতে বখাটেরা তাদের আধিপত্য ছেড়ে দিবে। ইভ টিজিংয়ের হাত থেকে মেয়েরা মুক্তি পাবে।
মোহাম্মদ অংকন, শিক্ষার্থী,
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ঢাকা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন