উন্নয়নশীল বিশ্বে যত জরুরি প্রয়োজন মানুষের আছে, এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও এই তিনটি বিষয়কে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগই নেই।
প্রসঙ্গক্রমে বলে নেওয়া ভালো, যে জাতি যত উন্নত হবে তার স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি তত প্রয়োজন হবে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের বিষয়ের ওপর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যসেবার ওপর কিছু কথা বলতে চাই। যার টাকা আছে সে স্বাস্থ্যসেবা পাবে, যার টাকা নেই সে বারান্দায় অথবা হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসাহীনভাবে মারা যাবে অবস্থাদৃষ্টে এমনটাই মনে হয়। স¤প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনা আমাদের ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। আজিমপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রসূতির চিকিৎসাই হলো না, উপরন্তু বকাঝকা করে তাঁকে বের করে দেওয়া হলো, অবশেষে মেঝেতেই সন্তান প্রসব করল। ঢাকা মেডিক্যালে একটি শিশুকে অপারেশন করে বের করে আনা হলো, অন্য মৃত শিশুটি পেটেই থেকে গেল। এই খবরগুলো পড়া যেমন সহজ, তেমন তা মেনে নেওয়া অত্যন্ত কঠিন। যে বা যাঁরা এই কঠিন অবস্থায় পড়েন, শুধু তাঁরাই বুঝতে সক্ষম জীবন কত কঠিন এবং চিকিৎসা পাওয়া কত কঠিন। প্রায়ই দেখা যায় গ্রামের হাসপাতালে ডাক্তার নেই। রোগী এসে যাদের সেবা পায় তারা হয় নার্স অথবা ওয়ার্ডবয়। বিষয়টি এতই পরিচিত ঘটনা যে গ্রামে চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলা বাহুল্য নয়। এখন প্রশ্ন হলো, এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? একটি সহজ পদ্ধতি হচ্ছে যে হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসকদের ত্রুটি পাওয়া যাবে, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার বিধান রাখা। ট্রেড ইউনিয়নের নামে হাসপাতালের ভেতরে ডাক্তারসহ যে শ্রমিকরা আন্দোলন করেন তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রাখা যেতে পারে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রায়ই বলেন, স্বাস্থ্যসেবা উন্নত হয়েছে। কিন্তু যাঁরা স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন তাঁদের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে চিকিৎসাসেবা কখনোই জনগণের কাছে কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছবে না। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করার জন্য ব্যতিক্রমী একটি পদ্ধতির কথা বলব, যা হলো প্রতিটি হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নিজে অথবা তার বিশ্বস্ত কর্মীকে দিয়ে ছদ্মবেশে অথবা গোপনীয়ভাবে তদন্ত করার একটি উদ্যোগ নিতে পারে। অত্যন্ত গোপনীয় ও সততার সঙ্গে যদি এটা করা সম্ভব হয় এবং রিপোর্টটির সঠিক মূল্যায়ন করে ব্যবস্থা নেওয়া যায় তাহলে এ দেশের চিকিৎসাসেবায় কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসবে।
ওয়াহিদ মুরাদ
নিউ ইস্কাটন, ঢাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন