তাবলীগ জামাতের কাকরাইল মারকাজ মসজিদে গত পরশু সকালে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে শূরা কমিটি। আসন্ন জোড় ইজতেমার খিত্তা বণ্টন নিয়ে সাময়িক যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল কাকরাইলের মুরব্বিগণ তা নিরসন করেছেন। কাকরাইলের পরিস্থিতিও আগের মতো স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানা যায়। সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকালে ৫ দিনের জোড় নিয়ে যে ঘটনা ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল তা নিরসনে দুপুরে বৈঠকে বসেন তাবলীগের শূরার সদস্যগণ। বৈঠকে ঢাকা জেলার ডিসি ও রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত ওসিও ছিলেন। জানা যায়, ভবিষ্যতে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সবার মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে ৬টি বিষয়ে অঙ্গীকার করেন শূরার সদস্যগণ। অঙ্গীকার নামায় বলা হয়, আমরা শূরার সদস্য ৮ জন ১৪ নভেম্বর দুপুর ২ টায় কাকরাইল মসজিদের মিটিংয়ে একমত হলাম যে- ১. ভবিষ্যতে কাকরাইল মসজিদের যে কোনো সভায় শূরার সদস্যদের মধ্যে তিন ভাগের দুই ভাগ সদস্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন এবং তারাই শুধুমাত্র সভায় উপস্থিত হবেন। ২. অন্য যেকোন বিষয়ও তিনভাগের দুই ভাগ সদস্য যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন সে সিদ্ধান্তই বলবৎ হবে। ৩. মাদরাসার ছাত্ররা উত্তরভাগ ব্যতীত দক্ষিণভাগে আসবেন না। ছাত্রদের পড়ানোর বিষয়টি শিক্ষকরা উত্তরভাগে গিয়ে সম্পাদন করবেন। ৪. সম্প্রতি যে বিষয় নিয়ে মতদ্বৈধতা সৃষ্টি হয়েছে সে সব বিষয়ে তিনভাগের দুইভাগ শূরা সদস্য যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন সেটাই কার্যকর হবে। ৫.তাবলীগের কার্যক্রমে কেউ কোন অস্ত্র নিয়ে আসতে পারবেন না। কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ৬.আসন্ন বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি অতিথি আগমণের বিষয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের উপস্থিতিতে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সে অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করেন, মাওলানা জোবায়ের আহমদ, ওয়াসিফুল ইসলাম, মাওলানা রবিউল হক, মো. মুবারক, শাহাবউদ্দীন নাসিম, মোহাম্মদ হোছাইন, মাওলানা ওমর ফারুক।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কাকরাইলের উভয় গ্রæপ এবং দেশের শীর্ষ আলেমদের ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন নাম না প্রকাশ করার শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, তাবলীগে নেতৃত্ব নিয়ে দ্ব›দ্ব দেখা দিয়েছে। ভারত থেকে শুরু হওয়া এ দ্ব›দ্ব বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ছে। মসজিদে মসজিদে মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ছে। কিছুদিন ধরে তাবলীগেরই একদল আরেক দলকে মারপিট, মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া ও জঙ্গী বলে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার বহু ঘটনা দেশের আনাচে-কানাচে দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে আলেম সমাজ ও ধর্মপ্রাণ মানুষ উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে ভারতের নিজামুদ্দিনের অন্যতম শুরা সদস্য মাওলানা সাদ একক নেতৃত্ব দাবি ও আকিদাবিরোধী কার্যকলাপের কারণে এ দ্ব›দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। সম্প্রতি ঢাকার কাকরাইলে মসজিদ নির্মাণের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে দ্ব›দ্ব আরো বেড়ে যায়। বিতর্ক এড়ানো ও দ্ব›দ্ব নিরসনের জন্য বাংলাদেশের শীর্ষ আলেমরা আগামী জানুয়ারীতে টঙ্গির ইজতেমায় মাওলানা সাদ যাতে না আসেন সে জন্য আগে থেকেই পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়া চলতি নভেম্বর বা আগামী ডিসেম্বরের প্রথম দিকে কাকরাইলের বিবাদমান দুই গ্রুপের দুইজন ও দেশের শীর্ষ আলেমদের পক্ষ থেকে দুইজনসহ মোট পাঁচ জনের একটি টিম দিল্লী ও দেওবন্দ যাওয়ার কথা রয়েছে। তারা তাবলীগের ভেতরকার দ্ব›দ্ব নিরসন, দেওবন্দের সাথে তাবলীগের সমঝোতা ও ভ্রান্ত আকিদা বিষয়ে মাওলানা সাদের সর্বশেষ অবস্থান নিয়ে খোঁজ-খবর করে বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে অবহিত করবেন। এর আলোকে সরকার মাওলানা সাদের ঢাকা আগমন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে। কাকরাইলের দুই গ্রুপের দ্ব›দ্ব নিরসনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনের বৈঠকে যে উলামা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে আজ যাত্রাবাড়ি মাদ্রাসায় সে কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আশা করা যায়, কাকরাইলের মুরব্বিরা উলামায়ে কেরামের পরামর্শ মেনে নিলে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ তার নিজ গতিতে ফিরে আসবে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ বা পুলিশি সাহায্যের প্রয়োজন হবেনা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন