স্টাফ রিপোর্টার : দু-একজন ব্যক্তির হঠকারিতা ও ভ্রান্ত মতাদর্শের ফলে বিশ্ব তাবলীগ এখন হুমকির মুখে। দিল্লির সাআদ সাহেবের বাড়াবাড়ি ও ভুল মতবাদ বিশ্বব্যাপী তাবলীগকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আগামী ইজতেমায় তার উপস্থিতি ও বয়ান দেশের তাবলীগ ও আলেমসমাজকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর এক ক্ষতিকর চ্যালেঞ্জ ছাড়া আর কিছু নয়। বিশ্ব তাবলীগের মুরুব্বিদের সাথে সমঝোতা না করে এবং দেওবন্দের মুরুব্বিদের অমান্য করে সাআদ সাহেব যে ভুল করছেন তার ফলে তাবলীগের কাজ নষ্ট হলে তিনি ও বাংলাদেশে তার অন্ধ সমর্থক কাকরাইলের দুই মুরুব্বি ওয়াসিফুল ইসলাম ও নাসিম সাহেবই দায়ী থাকবেন। তাবলীগ জামাতকে তার সঠিক পথের ওপর টিকিয়ে রাখার জন্য উলামায়ে দেওবন্দ যে কোনো পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান। গতকাল আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে দেশের শীর্ষ ৪০ জন আলেম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।
শীর্ষ আলেমগণ আরো বলেন, আলেম সমাজ ও তাবলীগ জামাতের মধ্যে দূরত্ব ও বিরোধ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র সফল হবে না। সারা বিশ্বের তাবলীগ সংশ্লিষ্ট মুরুব্বি, আরব আফ্রিকাসহ ইউরোপ আমেরিকার সকল মারকাজ শূরা ভিত্তিতে তাবলীগ পরিচালনার পক্ষে থাকলেও ব্যক্তিগতভাবে দিল্লির সাআদ সাহেব একক সিদ্ধান্তে তাবলীগ জামাত চালাচ্ছেন। তার নিজস্ব চিন্তাধারা ও ঐতিহ্যবিরোধী নতুন নীতিমালার ফলে ভারতের তাবলিগী কাজও দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সাআদ সাহেবের ভ্রান্ত মতাদর্শ এখন সারাবিশ্বে প্রচারিত হওয়ায় দিল্লি নিজামুদ্দিনের মুরুব্বিরা তাকে ত্যাগ করে মারকাজ থেকে চলে গেছেন। মাওলানা আহমদ লাট, মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা প্রমুখ দিল্লি ছেড়ে নিজ নিজ এলাকায় চলে গিয়ে প্রকৃত উসুল মোতাবেক দাওয়াতের কাজ করছেন। সাআদ সাহেবকে বিশ্বের সকল দায়িত্বশীলরা সংশোধন ও নীতির ওপর ফিরে আসার আল্টিমেটাম দিলেও তিনি কারো কথাই মানছেন না। তিনি দারুল উলুম দেওবন্দসহ ভারত, পাকিস্তান, আরব, আফ্রিকা ও বাংলাদেশের সকল আলেমের সম্মিলিত প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইতোমধ্যে দেওবন্দ থেকে তার ভ্রান্ত মতাদর্শ ও ভুল কর্মপদ্ধতির ওপর বিশদ আলোচনাসহ ফতোয়া দেয়া হয়েছে। দেওবন্দের মুহতামিম আল্লামা নোমানী, মাওলানা আরশাদ মাদানী, মাওলানা সাঈদ আহমদ পালনপুরী প্রমুখ আলেমদের প্রতি সাআদ সাহেবের অবজ্ঞা বিশ্ব মুসলিমের মনে চরম আঘাত হেনেছে। গত হজে বিশ্ব তাবলীগের মুরুব্বিরা সাআদ সাহেবের হঠকারিতার জন্যই তাকে সাথে রাখেননি। বাংলাদেশের সকল আলেম আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে সাআদ সাহেবকে সংশোধনের পূর্ণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। দেশের ৪০-৪৫ জন বড় আলেম কাকরাইল ও টঙ্গীর জোড়ে গিয়েও তার সংশোধন কামনা করে বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। সর্বশেষ দেশের উলামায়ে কেরাম আগামী ইজতেমায় সাআদ সাহেবকে না আসার অনুরোধ জানিয়ে পত্র দিলেও বাংলাদেশে তাবলীগের দু-একজন লোক তাকে আনার চেষ্টা করছেন এবং আলেম উলামা ও তাবলীগের সকল মুরুব্বির এ দাবিকে অগ্রাহ্য করে সাআদ সাহেবের হঠকারিতাকে এস্টাবলিস্ট করার চ্যালেঞ্জ দিয়ে মাঠে নেমেছেন। বিশেষ করে কাকরাইলের আসিফুল ইসলাম ও নাসিম সাহেব বাংলাদেশের আলেম সমাজের সাথে তাবলীগ জামাতের দূরত্ব সৃষ্টি ও মসজিদে মসজিদে পাড়ায়-মহল্লায় বিরোধ ও আলেম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। কাকরাইলের শূরা ও আলেমদের সাথেও তারা রীতিমতো দুর্ব্যবহার করছেন। এ পর্যায়ে যদি তারা নিজেদের জেদ বহাল রাখার জন্য সাআদ সাহেবকে টঙ্গীতে উপস্থিত করেন তাহলে দেশের আলেম সমাজ তা মেনে নেবে না। এর ফলে টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়া অসম্ভব নয়। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের সাথে আলেম সমাজের সুসম্পর্কেরও মারাত্মক ফাটল ধরবে। তখন গোটা আলেম সমাজ ও বিশ্ব তাবলীগ নিজেরা অতীতের মতোই ঐক্যবন্ধ থাকবে, কেবল হঠকারী শক্তিটিই প্রত্যাখ্যাত হবে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন মাওলানা আবদুল হালীম, পীর সাহেব মধুপুর, আল্লামা আশরাফ আলী, আল্লামা আবদুল কুদ্দুস, আল্লামা মাহমুদুল হাসান, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মালেক, মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা মাহফুজুল হক, মুফতি মিজানুর রহমান, মাওলানা মুফতি রুহুল আমীনসহ দেশের শীর্ষ ৪০ আলেম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন