স্টাফ রিপোর্টার : দেশের শীর্ষ আলেমদের অনুরোধ ও পরামর্শমূলক বার্তা উপেক্ষা করেই চলছে একতরফা প্রচারণা। কাকরাইলে জনৈক মুরব্বী শূরা ও গুরুত্বপূর্ণ সাথীদের মজলিসে ঘোষণা দিয়েছেন- বিতর্কিত সাআদ সাহেবই বর্তমানে তাবলীগের বিশ্ব আমির। তাকে মানাই এখন ওয়াজিব। একথাই সংকটের মূল বিষয়। গতকাল এক বিবৃতিতে তাবলীগ সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা আবদুল হামিদ এসব কথা বলেন। বিবৃতিতে দেশের ৪০ জন আলেমের বক্তব্য জানার পরও এধরনের ঘোষণা দেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলা হয়, সকল যুগের সকল দ্বীনী কাজের মধ্যে কিছু না কিছু সাময়িক বিপর্যয় লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু দাওয়াত ও তাবলীগের বর্তমানের সংকট কঠিন অবস্থায় উপনীত। শেষ হযরতজী হযরত মাওলানা এনামুল হাসান সাহেব (র.) এর ইন্তেকালের পর প্রায় ১৮ বছর তাবলীগের মেহনত মোটামুটি সুষ্ঠুভাবে চলছিল। যদিও এ সময়ে তাবলীগের একক কোন আমির ছিল না। কিন্তু হযরত মাওলানা জোবায়েরুল হাসান সাহেব (র.) এর ইন্তেকালের পর কিছু অতি উৎসাহী ব্যক্তি নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে মাওলানা সাআদ সাহেবকে আমির ঘোষণা করে। মাওলানা সাআদ সাহেবও এই বিষয়ে সমর্থন করেন। মূলত তা থেকে তাবলীগের সংকট মারাত্মক পর্যায় চলে যায়। ভারতের নিজামুদ্দীন মার্কাজের হাঙ্গামা হয়, পুলিশ পাহারা দিতে হয়। মাওলানা আহমদ লাট, মাওলানা ইবরাহীম দেওলা, মাওলানা ইয়াকুব এবং মাওলানা সাআদ সাহেবের ওস্তাদগণসহ শীর্ষ মুরব্বীরা সাআদ সাহেবকে বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে নিজামুদ্দীন মার্কাজ ছেড়ে চলে যান। পৃথিবীর সকল তাবলীগের সাথীদের মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা সাহেব ও মাওলানা ইয়াকুব সাহেব খোলা চিঠি লিখেন। যাতে নিজামুদ্দীন-এর সমস্যা এবং সমাধানের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। বাংলাদেশের ওলামাগণ নিজামুদ্দীন-এর শীর্ষ মুরব্বীদের চিঠি পেয়ে ফিকিরমন্দ হন। দরদমাখা অন্তর নিয়ে কাকরাইল মসজিদে ছুটে যান। কাকরাইল কে চিঠি লিখেন। মাওলানা সাআদকে বার্তা পৌঁছে দিতে বলেন যাতে উনি তাবলীগের শীর্ষ মুরব্বীদের পথে চলেন এবং তাবলীগের মেহনতকে সেই পথে চালান। কিন্তু সালাফি ও মওদুদি মতবাদে প্রভাবিত মাওলানা সাআদ সাহেবের অনমনীয়তার কারণে দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা মাওলানা সাআদ সাহেবের ভ্রান্ত মতবাদ ও কুরআন হাদীসের অপব্যাখ্যার ব্যাপারে কলম ধরেন। ওনার ব্যাপারে কঠিন অভিমত পেশ করেন। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দারুল উলুমকে সত্যায়ন করে চিঠি আসতে থাকে। বাংলাদেশের ওলামাদের থেকেও চিঠি যায়। মাওলানা আহমদ শফী সাহেব ব্যক্তিগতভাবে কাকরাইলের শূরাকে চিঠি লিখেন। ৪০/৪৫ জন শীর্ষ আলেমও তার নেতৃত্বে পত্র লেখেন। কাকরাইলের শূরার পক্ষ থেকে মাওলানা সাআদ সাহেবকে চিঠি লেখা হয়। যাতে উনি বাংলাদেশে আসার আগে দেওবন্দ ও নিজামুদ্দীনের শীর্ষ মুরব্বীদের সাথে সমঝোতা করে ফেলেন। আসলে মাওলানা সাআদ সাহেব-এর সাথে নিজামুদ্দীন মার্কাজের শীর্ষ মুরব্বীগণের দারুল উলুম দেওবন্দ এবং বাংলাদেশের ওলামায়ে কেরামের কোন ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নেই। কেউ তাঁকে নিজামুদ্দীনের মার্কাজ থেকে সরানোর দাবীও করছেন না। অন্য কাউকে আমির বানানোর চেষ্টাও করা হচ্ছে না। তাঁকে বলা হচ্ছে, তিনি যাতে নিজামুদ্দীন-এর শীর্ষ মুরব্বী (যাদের মধ্যে তার শ্রদ্ধেয় ওস্তাদগণও আছেন)দেরকে সাথে নিয়ে চলেন। পাশাপাশি দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার সাথে সম্পর্ক রেখে আকাবিরদের পথে নিজেকে পরিচালিত করেন। এই ব্যাপারে ওনার অনুসারীগণ ওনাকে বুঝানোর দরকার। কিন্তু কাকরাইলের নাসিম সাহেব এবং ওয়াসিফ সাহেব সংশোধনের কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। বরং জনাব নাসিম সাহেব গত ০৩/০১/২০১৭ ইং তারিখে মাগরিবের পর কাকরাইল মসজিদে ভরা মজলিসে এই এলান করেন, মাওলানা সাআদ সাহেব এখন বিশ্ব আমির। ওনাকে মেনে চলা ওয়াজিব। এই ঘোষণা তাবলীগের সংকটকে কঠিন অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যেখানে আরব, আফ্রিকা, পাকিস্তান ও ভারতের নিজামুদ্দীন মার্কাজের শীর্ষ মুরব্বীগণ ওনাকে আমির স্বীকৃতি দিচ্ছেন না, কারণ আমিরের ব্যাপারে কোন পরামর্শ করা হয়নি। কাকরাইলের শূরার সমন্বিত কোন সিদ্ধান্তও এ ব্যাপারে হয়নি। সেখানে এমন কঠিন পরিস্থিতিতে এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে এ ধরনের এলান সংকটকে আরো ঘনীভূত করবে। তাছাড়া দেশের শীর্ষ আলেমদের নিষেধ সত্ত্বেও তাকে ইজতেমায় উপস্থিত করা হবে বড় ধরনের বিশৃংখলা ও ফিতনার কারণ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন