রংপুরে গ্রেফতার টিটুরায়কে ফেসবুকে ধর্মীয় উসকানিমূলক পোস্ট দেয়ার ঘটনার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গত সোমবার ভোর রাতে গ্রেফতারের পর টিটু রায়কে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত তার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। শুক্রবার তার রিমান্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ায় গতকাল আবারো তার রিমান্ডের আবেদন জানালে বিজ্ঞ আদালত আরো ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অপরদিকে, সংঘর্ষ এবং হিন্দু পল্লীতে আগুন দেয়ার মামলায় শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়নের সিরাজুল ইসলাম নামের আরও একজন ইউপি সদস্যকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে মমিনপুর বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি মমিনপুর ইউপি’র ৬ নং ওয়ার্ডের সদস্য। এ নিয়ে ওই ইউনিয়ন পরিষদের ৩ জন সদস্যকে পুলিশ আটক করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
এদিকে, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়াকে কেন্দ্র করে শলেয়াশা ঠাকুরপাড়ার হিন্দু পল্লীতে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে দোষী ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে এবং টিটু রায়ের নিঃর্শত মুক্তির দাবিতে রংপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জাতীয় হিন্দু মহাজোট রংপুর বিভাগীয় শাখা। বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট রংপুর বিভাগীয় শাখার সভাপতি পুলক বসাকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- ক্ষত্রিয় সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি নীরেন্দ্র নাথ রায়, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট রংপুর বিভাগীয় শাখার যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার দাস, সদস্য পরেশ চক্রবর্তী এবং উত্তম কুমার বর্মণসহ প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তরা বলেন, যে স্ট্যাটাসটি নিয়ে তুলকালাম কান্ড হলো, লাশ পড়ল, ১০ সংখ্যা লঘু পরিবারের বাড়িঘর পুড়ল সেই স্ট্যাটাসটি প্রদান করেন খুলনার মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদী। গত ১৮ অক্টোবর তিনি ¯পর্শকাতর স্ট্যাটাসটি দেন এবং ৮৭ জন ফেসবুক ব্যবহারকারী তাদের ওয়ালে এর শেয়ার দিয়েছেন। এছাড়া টিটু রায় লেখাপড়া জানে না, নিরক্ষর। সে ফেসবুক চালাতে জানে না। তার নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদী’র পোস্ট শেয়ার করা হয়। টিটু রায় সম্পূর্ণ নির্দোষ। বক্তারা, অবিলম্বে দোষী ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে ফাঁসি এবং টিটু রায়ের নিঃর্শত মুক্তির দাবি জানান। পরে তারা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দিঘলিয়া উপজেলার সভাপতি এবং খুলনা জেলার সহসাংগঠনিক স¤পাদক মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদী’র কুশপুত্তলিকা পোড়ায়।
ওদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত ১০ হিন্দু পরিবারসহ হিন্দু পল্লীতে পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। গতকালও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে অনুদান দেয়া হয়েছে। হিন্দু পল্লীতে ২টি ক্যাম্পের মাধ্যমে পুলিশ প্রহরায় রাখা হয়েছে। হিন্দু পরিবারের সকল সদস্য এখন স্বাভাবিক চলাফেরা ও কাজকর্ম করছে। পক্ষান্তরে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে এখনও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি। গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়ানো পুরুষ ব্যক্তিরা এখনও বাড়ি ফিরে না আসায় নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোতে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। এসব পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি গত ৮দিন যাবৎ পলাতক থাকায় পরিবারগুলোতে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এসব পরিবারের নারী ও শিশু সদস্যদের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ এখনও শোভা পাচ্ছে। দরিদ্র ও অসহায় এসব পরিবারের খোঁজ কেউ নিচ্ছে না, নেয়ার প্রয়োজনও মনে করছে না। তারা এখন চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন