বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ওষুধ রফতানির বিপুল সম্ভাবনা

| প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ওষুধ উৎপাদনে বৈপ্লবিক অগ্রগতি হয়েছে। এমন একটা সময় ছিল যখন ৭০ শতাংশ ওষুধ আমদানি হতো। এখন দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধই দেশে তৈরি হয়। শুধু তাই নয়, বিদেশে রফতানিও হয়। দিনকে দিন ওষুধ রফতানিকারী দেশ হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী হচ্ছে। আন্তর্জাতিকমানের হওয়ায় ওষুধ রফতানি প্রতি বছরই বাড়ছে। বিশ্বের অন্তত ১২৭টি দেশে ওষুধ রফতানি হচ্ছে। ওষুধ ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, বর্তমানে দেশের দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠান ৫ হাজার ব্র্যান্ডের ৮ হাজারের বেশি ওষুধ উৎপাদন করছে, যার মধ্যে বড় ১০টি কোম্পানী দেশের চাহিদার ৮০ শতাংশ মেটাচ্ছে। বড় ২০টি কোম্পানির কথা বিবেবচনায় নিলে তারা দেশীয় চাহিদার ৯০ শতাংশ পূরুণ করছে। আর ৪০টি কোম্পানি ১৮২ ব্যান্ডের সহ¯্রাধিক রকমের ওষুধ রফতানি করছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ওষুধ রফতানি হয়েছে ১ কোটি ৫৭ লাখ ডলার মূল্যের। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় তা ১৫.৬৩ শতাংশ বেশি। ২০১১-১২ অর্থ বছরে যেখানে ওষুধ রফতানি হয় ৪ কোটি ৮২ লাখ ডলারের যেখানে গত অর্থ বছরে রফতানি হয়েছে ৮ কোটি ২১ লাখ ডলারের ওষুধ। চলতি অর্থ বছরে রফতানি প্রায় ১০০০ কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়াতে পারে। ওষুধ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অভিমত, বিশ্বে ওষুধ রফতানির যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে তা কাজে লাগাতে পারলে ওষুধ দ্বিতীয় প্রধান রফতানি পণ্যে পরিণত হতে পারে। বিশ্বে ওষুধের রফতানি বাজার ১৭০ মিলিয়ন ডলারের। এর ১০ শতাংশও যদি বাংলাদেশ রফতানি করতে পারে তবে আয় হতে পারে ১৭ মিলিয়ন ডলার।
সম্ভাবনার এই প্রেক্ষাপটে ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এসএম শফিউজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে ওষুধ উৎপাদন করে যাচ্ছে। ওষুধ রফতানির অগ্রগামিতার দিক দিয়ে বাংলাদেশ আঞ্চলিক পর্যায়ে অন্যতম প্রধান দেশে পরিণত হয়েছে। তার মতে, ওষুধ রফতানিতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই পোশাক রফতানির কাছাকাাছি যাওয়া সম্ভব হবে। দ্বিতীয় প্রধান রফতানি খাতে পরিণত হতে বেশী সময় লাগবে না। ২০৩০ সালের মধ্যে ওষুধ রফতানিতে দেশ এক নম্বরে চলে যেতে পারে, এমন সম্ভাবনাও আছে। সম্প্রতি তুরস্কে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। তুরস্কের বাংলাদেশ দূতাবাস ও বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি যৌথভাবে ওই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে বেক্সিমকো ফার্মার সিইও এসএম রাব্বুর রেজা বাংলাদেশের ওষুধের গুণগত মান, বর্হিবিশ্বে তার চাহিদা ও রফতানির অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, ওষুধ শিল্প খাত বাংলাদেশের সবচেয়ে বর্ধনশীল একটি শিল্পখাত এবং ২৫৭টি ওষুধ কোম্পানির উৎপাদিত ওষুধের বর্তমান বাজার মূল্য বার্ষিক ২ বিলিয়ন ডলারের উপরে। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ উৎপাদন এবং রফতানির অগ্রপথিক হিসাবে বেক্সিমকো ফার্মার ভূমিকা ও অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ২০১৫ সালে দেশের প্রথম ওষুধ প্রস্ততকারী কোম্পানি হিসাবে বেক্সিমকো ফার্মা ইউএস এফডিএ কর্তৃক নিরীক্ষিত ও অনুমোদিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটি ৫০টিরও বেশি দেশে ওষুধ রফতানি করছে। ইউএস এফডিএ ছাড়াও এর এজিইএম (ইউউ টিজিএ) অস্ট্রেলিয়া, হেলথ কানাডা এবং টিএফডিএসহ বিশ্বের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার স্বীকৃতি রয়েছে।
দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক। মোট রফতানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশই আসে এখাত থেকে। গত অর্থ বছরে এখাত থেকে আয় এসেছে ২৮১৫ কোটি ডলার। নানা সমস্যা সত্তে¡ও এখাতে আয় বৃদ্ধির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে বিশ্বে তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে থাকবে বলে বিশ্বখ্যাত ব্যবস্থাপনা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মাকেনজি অ্যান্ড কোম্পানি জানিয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে তৈরি পোশাক সরবরাহের পছন্দের দিক দিয়ে কোন তিন দেশ শীর্ষে থাকবে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রায় অর্ধেক ব্র্যান্ড ও ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সিপিও বাংলাদেশের নামই বলেছে। এটা অত্যন্ত সুখবর। এই পছন্দ ধরে রাখতে এবং রফতানি বাড়াতে বিজিএমইএকে আরও সক্রিয় ও তৎপর হতে হবে, সরকারকেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে হবে। ভারত ইতোমধ্যেই তার তৈরি পোশাক রফতানি বাড়াতে ইনসেনটিভ দ্বিগুণ করেছে। প্রতিযোগী অন্যান্য দেশও নানা উদ্যোগ-পদক্ষেপ নিচ্ছে। বাংলাদেশকেও প্রতিযোগিতাসক্ষমতা বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। তৈরি পোশাক রফতানির সঙ্গে ওষুধ রফতানিও যদি প্রত্যাশানুগ হয়, অর্থনীতিতে অবশ্যই তার ইতিবাচক প্রতিফলন ঘটবে। ধারণা করা হচ্ছে, ওষুধের কাঁচামালের ক্ষেত্রে পরমুখাপেক্ষিতা হ্রাস করা গেলে রফতানি আরো দ্রæত বাড়বে। মুন্সীগঞ্জের এপিআই পার্ক পূর্ণাঙ্গ রূপে চালু হওয়া সেজন্য খুবই জরুরি। তৈরি পোশাক রফতানি যেমন বেসরকারী খাতের অবদান তেমনি ওষুধ রফতানিও বেসরকারী খাতেরই অবদান। আন্তর্জাতিক মান এবং প্রতিযোগিতামূলক মূল্যই এই দুই শিল্পের বিকাশ ও রফতানি খাত হয়ে ওঠার আসল কারণ। কাজেই, মানের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। দামের ক্ষেত্রেও প্রতিযোগিতাসক্ষমতা ধরে রাখতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন