বখাটেদের রুখবে কে?
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে ইভ টিজিং বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। প্রতিদিনই স্কুল-কলেজগামী মেয়েরা হিংস্র বখাটেদের উৎপাতের শিকার হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষিকা, চাকরিজীবী নারী, এমনকি বয়স্করাও এর শিকার হচ্ছেন। সামাজিক এ ব্যাধিটি সমাজে এক আতঙ্কের নাম হিসাবে পরিচত হয়ে উঠেছে। অনেকেই ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। অথচ কয়েক বছর আগেও আমাদের দেশের অনেকেই ইভ টিজিং সম্পর্কে খুব বেশি জানত না। এর প্রায়োগিক অর্থ বুঝত না। কিন্তু দিন দিন এর প্রবণতা বৃদ্ধির কারণে সরকার ও সমাজের সুশীল মানুষগণ বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে।
আজকাল শুধু শহরেই নয়, গ্রামের অনেক অভিভাবকই মেয়েকে একা স্কুলে যেতে দিচ্ছে না। ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না। কারণ পথে-ঘাটে, স্কুল-কলেজে অর্থাৎ ঘর থেকে বের হওয়ার পরই ইভ টিজিংয়ের বিড়ম্বনা শুরু হয়। কারা এই ইভ টিজিংয়ের সাথে জড়িত রয়েছে? অভিভাকরা কাদেরকে ভয় পাচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে আমি বলব, যারা বিভিন্ন এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে, যাদের বাসা হাট-বাজার সংলগ্ন, তারা বখাটে বেশি হয়ে থাকে। এরাই ইভ টিজিংয়ের প্রধান আসামী। তবে ইদানিং পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা ইভ টিজিংয়ের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন বালিকা বিদ্যালয় বা কলেজের সামনে অবস্থান করে। প্রকাশ্যে ধুমপান করে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসার পথে এবং ছুটির পর বাসায় যাওয়ার পথে তরুণীদের উত্যক্ত করে। শুধু উত্যক্ত করে থেমে থাকে না, কখনো তারা শরীরে পর্যন্ত হাত তোলে। এটি কখনো কখনো এমন অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায় যে, লজ্জায়, ক্ষোভে কোনো কোনো মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়।
ইভ টিজিংকারীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মেয়েদের লক্ষ্য করে রোমান্টিক গান গায়। যখন মেয়েদের থেকে বিরক্তির আভাস পায়, তখন তারা অশালীন উক্তি ব্যবহার করতে থাকে। তবে এখন আর অশালীন উক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অশ্লীল ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, পর্নোগ্রাফি প্রদর্শন, চিঠি, ই-মেইল, কার্টুন, বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিল, নোটিশ বোর্ড, টেলিফোন, এসএমএস, পোস্টার, নোটিশ, দেয়াল লিখনের মাধ্যমে এখন ইভটিজিং চলছে। এর মাধ্যমে অনেকে মেয়েদের প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছে। আর প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে মেয়েরা শারীরিকভাবে লাঞ্চিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রের মুখোমুখি হচ্ছে। মেধাবী ছাত্রীদের স্বপ্ন-আশা সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এভাবে আর কত সমাজে এ অপরাধ চলতে থাকবে?
ইভ টিজিং যে ভয়াবহ রুপ ধারণ করতে শুরু করে দিয়েছে, তাতে বোঝাই যাচ্ছে এটা একদিনে বন্ধ হবে না। এ জন্য আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সাথে জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। একটি মেয়ে যখন ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়, তখন তার পাশে পরিবারের সহায়ক ভূমিকা না থাকলেই অনেক সময় আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি ইভ টিজিং এর শিকার তরুণীকেও যতটুকু সম্ভব বখাটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। মেয়ে বলে পিছিয়ে থাকা যাবে না। তাহলে বখাটেরা গা চাড়া দিয়ে উঠবে। মেয়েরা যদি বাল্য বিবাহ রোধ করতে পারে, তাহলে ইভ টিজিংও রোধ করতে পারবে। দেশে মেয়েরা যখন মেধা মননে অগ্রসর হতে চলেছে, তখন পরিচ্ছন্ন সমাজ গড়তে পুরুষের পাশাপাশি তাদেরও ভূমিকা পালন করতে হবে।
মোহাম্মদ অংকন
শিক্ষার্থী, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ঢাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন