রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নিবন্ধ

সড়ক দুর্ঘটনায় আর কত মানুষ মারা যাবে

মো. ওসমান গনি | প্রকাশের সময় : ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আমাদের সড়ক-মহাসড়কের সর্বত্রই চলছে বিশৃঙ্খলার মহোৎসব। এতে প্রাণ যাচ্ছে একের পর এক মানুষের। এভাবেই কি দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে মানুষের মৃত্যুর বিভীষিকা চলতে থাকবে? দেশে এত বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে যে, দুর্ঘটনা রোধে হালে বিশেষ বাহিনী গঠনের দাবি উঠছে। দেশে সন্ত্রাস দমনে যদি র‌্যাব বাহিনী গঠন করা যায়, দুর্ঘটনা রোধে এ-জাতীয় বাহিনী নয় কেন? সরকারি ও বেসরকারিভাবে সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হলেও তা বাস্তবে কার্যকর করা যাচ্ছে না। আমাদের দেশের গাড়ি চালকের সঠিক প্রশিক্ষণ না থাকা, অতি দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানো, ওভারটেক করাসহ বিভিন্ন কারণে দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার বেড়ে যাচ্ছে। আর এই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দিক থেকে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বিশ্বের মধ্যে ১৩তম। বাংলাদেশের উপরে আছে চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম। কিন্তু দেশগুলোতে যানবাহনের সংখ্যা বাংলাদেশের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় বাংলাদেশে প্রতি এক লাখ মানুষের জন্য এক হাজার ১৩৩ যানবাহন রয়েছে, চীনে প্রতি ১ লাখ মানুষের জন্য রয়েছে ১৮ হাজার, ভারতে প্রায় ১৩ হাজার আর পাকিস্তানে পাঁচ হাজার। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ায় প্রতি দুজনে একটি করে যানবাহন রয়েছে। অথচ এসব দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা বেশি।
এই প্রেক্ষাপটে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় গঠন করা হয়েছে ‘ন্যাশনাল রোড সেফটি স্ট্র্যাটেজিক এ্যাকশন প্ল্যান। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়ক নিরাপত্তার স্বার্থে দেশের জাতীয় ২২ মহাসড়কে তিন চাকার স্বল্পগতির যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে স¤প্রতি সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠক থেকে। মূলত নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফলে মহাসড়কে এখন অটোরিক্সা, নসিমন, করিমন, ভটভটি, ভ্যান, ব্যাটারিচালিত রিক্সাসহ সব ধরনের ১০ লাখের বেশি নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচলে এখন আর কোন বাধা রইল না। এতে সড়ক দুর্ঘটনা গত দুই বছরে ৩৩ ভাগ কমলেও তা আবারও বেড়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে।
তাছাড়া প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর আন্তঃসড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠক হবার কথা থাকলেও তা একেবারেই অনিয়মিত। সড়ক নিরাপত্তার স্বার্থে গেল আট বছরে যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল এর অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি। কিছু বাস্তবায়ন হলেও একেবারেই নামেমাত্র বলা চলে। ১০ মাস পর গত ১৪ নভেম্বর নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠক হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি বৈঠক হয়েছিল। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মহাসড়কে ২৬০টির বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক আজও সরলীকরণ হয়নি। ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়নি। ৩২ লাখ রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত গাড়ির বিপরীতে অবৈধ চালকের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক। সড়ক-মহাসড়কের পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান রাজনৈতিক কারণে সম্ভব হয় না। বিচার হয় না দুর্ঘটনার জন্য দোষী চালকের। এই প্রেক্ষাপটে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যে সত্যিই কঠিন তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত তিন কারণে সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। ওভারস্পিড, ওভারটেকিং, যান্ত্রিক ও রাস্তার ত্রুটি। এছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস না পাওয়ার পেছনে রয়েছে নানা কারণ। চালকের লাইসেন্স প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে যানবাহনের ফিটনেস সনদ, গাড়ির অনুমোদন, সড়কের ত্রুটি, সঠিক তদারকির অভাবসহ সকল ক্ষেত্রেই রয়েছে গলদ।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন সময়ে নানামুখী পরিকল্পনা নেয়া হলেও বাস্তবায়ন গতি খুবই কম। এ নিয়ে প্রতি বৈঠকে হইচই হয়। কিন্তু কাজ হয় না। এটি এখন আনুষ্ঠানিকতার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে কাজ করলে কখনই সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে না।
মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বেপরোয়া গতি। এদিকে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে জাতিসংঘ ঘোষিত ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
উন্নত দেশগুলোয় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যেসব পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তা খুবই সুনির্দিষ্ট হয়। কিন্তু বাংলাদেশে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন দায়সারা গোছের। কত বছরে কী পরিমাণ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমানো হবে। কীভাবে তা অর্জিত হবে, কারা তা সফল করবে সেটাও ভেবে দেখা দরকার।
স্বল্প ব্যয়ে ফুটপাথ, জেব্রা ক্রসিং, আন্ডারপাস, ওভারপাস নির্মাণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে প্রাণহানি অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব। ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বেপরোয়া গতি। গতি নিয়ন্ত্রণ, মহাসড়কে ছোট যানবাহন বন্ধ ও বেপরোয়া যানবাহন চলাচল বন্ধ করা জরুরি।
এছাড়া এখনও দেশের সড়ক-মহাসড়কে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে ১০ লাখ নছিমন-করিমন-ইজিবাইক। অবাধে আমদানি হচ্ছে অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত রিক্সা, ইজিবাইক। দেশব্যাপী ৫ লাখ ফিটনেসবিহীন বাস, ট্রাক, কভার্ডভ্যান, হিউম্যান হলার অবাধে চলছে। নিবন্ধনবিহীন ৪ লাখ অটোরিক্সা ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে সড়ক-মহাসড়কে। এসব যানবাহন সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।
আইন প্রয়োগের দুর্বলতা সড়ক দুর্ঘটনা না কমার একটি বড় কারণ। সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে বিশৃঙ্খলা। চালক-মালিকদের বেপরোয়া মনোভাব এই সেক্টরকে দিন দিন অনিরাপদ করে তুলছে। সরকার সড়ক নিরাপত্তায় জনবান্ধব যে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গেলে তারা বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে সড়ক নিরাপত্তা আজ মারাত্মক হুমকির মুখে।
আগামী ২০২০ সালের মধ্যে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা শতকরা পঞ্চাশ ভাগে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে অনুমোদিত হয়েছে ন্যাশনাল রোড সেফটি স্ট্র্যাটেজিক এ্যাকশন প্ল্যান। সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ২৫তম সভায় একশন প্ল্যান অনুমোদন হয়। গৃহীত পরিকল্পনায় সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে প্রতি দু’মাস পরপর সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সভায় সড়ক-মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে এক্সেললোড কন্ট্রোল নীতিমালা গত ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শীতের সময় দুর্ঘটনা এড়াতে ক্ষেত্রবিশেষে যানবাহনের গতি সীমিত রাখার বিষয়েও সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এ্যাকশন প্ল্যানের ভূমিকায় বলা হয়, প্রতিবছর দেশে গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। পুলিশের পাঁচ বছরের হিসাব অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর গড়ে ২ হাজার ২৮০ জনের মৃত্যু হয়। সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হলো ওভারস্পিড, ওভারলোডিং ও ওভারটেকিং। আবার একই সড়কে ছোট-বড়, ধীরগতি ও অতি গতি এবং অযান্ত্রিক গাড়ি চলাচলের কারণেও সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অসচেতনতা ও প্রয়োগের দুর্বলতাও দুর্ঘটনার কারণ। এছাড়া সড়কে দুর্ঘটনার প্রকৃত তথ্য নিয়েও বিভ্রান্তি রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রকাশ করে। এ্যাকশন প্ল্যানে সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য সংরক্ষণের জন্য পুলিশ, বিআরটিএ, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, এলজিইডি, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, বুয়েটে এক্সিডেন্ট রিসার্স ইনস্টিটিউট (এআরআই) কাজ করবে।
সারাদেশে গত ১০ মাসে ২ হাজার ৯২৬ সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৬০৮ নিহত ও ৭ হাজার ৭৮৬ জন আহত হয়েছেন। নিহতের তালিকায় ৪২৩ নারী ও ৪৬৫ শিশু রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক, মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে এসব দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা ঘটে।
বেসরকারি সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির (এনসিপিএসআরআর) নিয়মিত মাসিক জরিপ ও পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। সংগঠনের তথ্য মতে, গত ১০ মাসের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে সর্বাধিক ৩৭২ দুর্ঘটনায় ৫৬ নারী ও ৫৮ শিশুসহ মোট ৪৭২ নিহত ও ১ হাজার ৯৪ জন আহত হয়েছেন। কম দুর্ঘটনা ঘটেছে আগস্টে। এ মাসে ২১৭ দুর্ঘটনায় ২৫ নারী ও ৩১ শিশুসহ মোট ২৭৯ জনের প্রাণহানি ঘটে এবং আহত হন ৫০৩ জন। কমিটির তথ্য মতে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটলেও জুন মাস থেকে তা কমতে শুরু করে। তবে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা আবারও বেড়ে যায়।
বর্তমান সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ৯টি প্রধান কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। যেমন, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, সড়ক-মহাসড়কে মোটর সাইকেলসহ তিন চাকার যানবাহন চলাচল বৃদ্ধি, স্থানীয়ভাবে তৈরি দেশীয় ইঞ্জিনচালিত ক্ষুদ্রযানে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন, বিধি লঙ্ঘন করে ওভারলোডিং ও ওভারটেকিং, জনবহুল এলাকাসহ দূরপাল্লার সড়কে ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণ না করা, দীর্ঘক্ষণ বিরামহীন গাড়ি চালানো, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ও বেহাল সড়ক, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চলাচল বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব এবং অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ।সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ করতে হলে সরকারের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে গাড়ির চালক, মালিক পক্ষসহ সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত দেশের মানুষ সচেতন না হবে ততক্ষণ সড়ক দুর্ঘটনা আইন করে রোধ করা যাবে না। সবার আগে আমাদের সকলের মন-মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। দুর্ঘটনার কারনে একদিকে চলে যায় মানুষের প্রাণ আর অপরদিকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় গাড়ির মালিক। নষ্ট হয় দেশের সম্পদ।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
বিজয় ১০ জুলাই, ২০১৮, ১১:০৮ পিএম says : 0
আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় বেশিরভাগ আইনশৃঙ্খলা ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রধান কারন। যেমন: ১. আমাদের দেশের আইন যদি সঠিক নিয়ম পালন করত তাহলে অবৈধ চালকরা যানবাহন চালায় কিভাবে? যদি তারা অবৈধভাবে ড্রাইভিং না করত তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কম হত। ২. আমরা বলি আমরা উন্নয়নশীল দেশ কিন্তু তথ্য প্রযুক্তির ঘাটতির কারনে দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদি আমাদের সড়কের প্রতি কি.মি অন্তর অন্তর সিসি ক্যামেরা থাকতো তাহলে চালকেরা বেপোরোয়া গাড়ি চালাতে পারত না।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন