“যদি বর্ষে আগনে( মতানÍরে আগুনে) রাজা যায় মাগনে”! অর্থাৎ অগ্রহায়ণ মাসে অকালে বৃষ্টিপাত হলে ফল-ফসলের অনিষ্ট হতে পারে। আর খাদ্যাভাব মেটানোর জন্য রাজা বা দেশের শাসকগণকে ভিন দেশের কাছে হাত পাততে যেতে হতে পারে! বহুকালের প্রচলিত ও পুরনো খনার বচন-প্রবচন আছে হাজারো। তার অন্যতম এই বচনটি যদি মিথ্যা না হয় তাহলে অগ্রহায়ণ মাসের এই নিম্নচাপ থেকে এহেন অকাল বর্ষণ পাকা, আধা-পাকা ও উঠতি আমন ফসল, শীতকালীন শাক-সবজির জন্য কম কিংবা বেশিমাত্রায় ক্ষয়ক্ষতির কারণ ঘটাতে পারে। এমনটি শঙ্কা কৃষককুলের। বিশেষত যারা এখনও মাঠের ফসল পুরোপুরি পাকলে ঘরে তোলার জন্য অপেক্ষা করছেন তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। কারণ হিমেল দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টিপাতে পাকা, আধা-পাকা সোনার ধান কাদামাখা জমিতে লেপ্টে যেতে পারে। মেঘ-বাদলে পোকায় ফসলের অনিষ্ট ডেকে আনতে পারে।
বৃহত্তর চট্টগ্রামসহ দেশের অনেক অঞ্চলে আমন ফসল একটু বিলম্বে কাটার সময় হয়। তাছাড়া সর্বশেষ পূর্বাভাসে একটি দুঃসংবাদ হচ্ছে, আজও (রোববার) ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগে বিক্ষিপ্ত ভারী থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে। গতকাল (শনিবার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় প্রায় সারাদেশেই বর্ষাকালীন আমেজে বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ সময় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ঢাকা বিভাগের নিকলীতে ৪৫ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৯ মিমি করে, সিলেটে ২০ মিমি, রাজশাহীতে ১১ মিমি, খুলনায় ২৪ মিমি, বরিশালে ৬ মিমি। তবে খরাপীড়িত জনপদ রংপুরেই শুধু বৃষ্টি হয়নি।
অগ্রহায়ণ মাসের শেষ দিকে এসেই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত না হয়েই গতকাল কিছুটা দুর্বল হয়ে নিম্নচাপের আকার ধারণ করে। এর সক্রিয় প্রভাবে হঠাৎ করে বদলে গেছে সারাদেশের আবহাওয়ার মতিগতি। পারদের তাপাঙ্কের হিসাবে তাপমাত্রা মওসুমের এ সময়ের জন্য ‘স্বাভাবিক’ পর্যায়ে রয়েছে। তবে সারাদিন মেঘলা গুমোট আবহাওয়ার মাঝে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিপাত, সেই সাথে হিমেল কনকনে হাওয়ায় শীতের কামড় বেশিই অনুভূত হচ্ছে। গতকাল (শনিবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের প্রায় সর্বত্র হিমেল হাওয়ার সাথে থেমে থেমে গুঁড়ি গুঁড়ি, হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়েছে। শিক্ষার্থী, কর্মমুখী হাজারো মানুষকে ছাতা মাথায় এবং গায়ে শীতের পোশাক, শাল-চাদর জড়িয়ে বের হতে হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম মহানগরীর সড়ক, রাস্তাঘাটে, অলিগলিতে বৃষ্টির কারণে কাদাপানিতে জনদুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তাছাড়া বৈরী আবহাওয়া বিশেষত অসময়ের মেঘ-বাদল, হিমেল বাতাসের কারণে শ্বাসকষ্ট-জনিত রোগীদের কষ্ট বেড়েছে। তবে বৃষ্টিতে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সবখানে ধুলাবালির কষ্ট থেকে স্বস্তি এসেছে। আজও (রোববার) দেশের অধিকাংশ স্থানে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। নিম্নচাপটি কেটে যাওয়ার পর শীতের প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে।
এদিকে আবহাওয়া বিভাগ ভারী বর্ষণের সতর্কতায় জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপের প্রভাবে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী (২৪ ঘণ্টায় ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার পর্যন্ত) থেকে ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিমি) বর্ষণ হতে পারে।
সন্ধ্যায় আবহাওয়ার সর্বশেষ বুলেটিনে জানা গেছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি আরও সামান্য উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় (২০.৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৭.৫ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫১৫ কিলোমিটার পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫০৫ কিমি পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩২০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৫৫ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর বা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে। নিম্নচাপটির প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দর সমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
নিম্নচাপটির কেন্দ্রের ৪৪ কিমির মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৪০ কিমি, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপটির কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর সমূহকে ৩নং স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আজ রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেইসাথে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে যেতে পারে। এর পরের ৫ দিনে রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন