শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

কুসংস্কার

মাওলানা আব্দুল হান্নান তুরুকখলী | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

‘আজকের দিনটি কেমন যাবে’- পত্রিকার এ কলামটিতে চোখ না বুুুুুুুুুুলিয়ে অনেক শিক্ষিত লোক ঘর থেকে বের হন না। ঘর থেকে বের হওয়ার সময় চৌকাঠে ঠেকলে, হোঁচট-খেলে, শূন্য কলস দেখলে, হাঁচি পড়লে, টিকটিকি ডাকলে- কেউ কেউ খানিকটা বসে তারপর যাত্রা শুরু করেন। এভাবে অসংখ্য কুসংস্কার দৈনন্দিন জীবনে ছড়িয়ে আছে। অনেকে পাথর ব্যবহার করেন। প্রত্যাশিত ফলের চেয়ে বিশ্বাস প্রবণতা সেখানে বেশি। তের সংখ্যাটি দুর্ভাগ্যের, ঊনপঞ্চাশ সংখ্যা মস্তিষ্ক বিকৃতির, চারশ বিশ সংখ্যা প্রতারণার সাথে জড়িত বলে অনেক লোকে বিশ্বাস করেন। অমাবস্যার রাতে শেওড়া গাছের নিচে দিয়ে যেতে আধুনিক শিক্ষিত লোকও ভীত হয়ে উঠেন ভূতের ভয়ে। এ সবই কুসংষ্কার-অবৈজ্ঞানিক ধারণা।
কুসংস্কার এক ধরনের অন্ধবিশ্বাস। মানুষের মনের অজ্ঞানতা, বিবেক বুদ্ধির অভাব ও অন্ধবিশ্বাস থেকেই এ কুসংস্কারের জন্ম। প্রকৃত পক্ষে কুসংস্কারের পেছনে কোন যুক্তি নেই। অন্ধবিশ্বাসজাত ও এ কুসংস্কারের মূল ভিত্তি হল, ‘চোখ দুটো আছে চারিদিক তবু ঘনঘোর অন্ধকার/ হবে না তা কেন মনে রয়েছে যে হাজার সংস্কার।’ কোন বুদ্ধি বিবেচনাহীন ও যুক্তিতর্কের বাইরে মানব মনের এক ধরনের অন্ধবিশ্বাসকে কুসংষ্কার বলে। এমন অনেক ঘটনার উপর মানুষের মনে বিশ্বাস জন্মায় এবং এ ধারণা এমনভাবে বদ্ধমূল হয় যার কোন ভিত্তি নেই। এক বদ্ধমূল ধারণা ও অন্ধবিশ্বাস মানুষের মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। কোন যুক্তি দাঁড় করিয়েও তাকে অর্থহীন বলে বিশ্বাস করানো যায় না। এ প্রবণতাই কুসংস্কার। কুসংস্কার ব্যাপকভাবে মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করে। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সকল মানুষই কুসংষ্কারের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে। শিক্ষা-দীক্ষা ও সভ্যতায় সমৃদ্ধ অনেক জাতির মাঝেও কুসংস্কারের অস্তিত্ব রয়েছে। দেশে দেশে অবশ্য কুসংস্কারের পার্থক্য রয়েছে। এর প্রভাবে মানবজীবনের অনেক ক্ষতি হয়। ছোটখাট বিষয়ে যেসব কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে তাতে আপাতদৃষ্টিতে কোন ক্ষতি প্রত্যক্ষ করা না গেলেও তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব আছে মানবজীবনে। কুসংস্কারের প্রভাবে মনে যে সংকীর্ণতা দেখা দেয়, তা প্রতিফলিত হয় তার আচরণে, তার কাজকর্মে।
কুসংস্কারাচ্ছন্ন ব্যক্তি জাতীয় জীবনের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কুসংস্কার যেমন ব্যক্তি জীবনের উন্নতির পথে বাধা, তেমনি জাতীয় জীবনের অগ্রগতিরও প্রতিবন্ধক। তাই জীবন থেকে কুসংস্কার অবশ্যই দূর করতে হবে। সমাজ থেকে কুসংষ্কার দূর করার জন্য যা অবশ্য করণীয় তা হচ্ছে- (১) ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। ধর্মীয় বিষয়ের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরতে হবে। (২) কুসংস্কারের অপকারিতা সম্পর্কে বইপত্রে আলোচনা থাকতে হবে। (৩) পত্র-পত্রিকায় কুসংস্কারমূলক বিষয়াদির প্রচার বন্ধ করতে হবে। (৪) মুক্তবুদ্ধির চর্চায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। (৫) কুসংস্কারের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমগুলোকে সক্রিয় করে তুলতে হবে। (৬) সকলকে সচেতন হতে হবে।
লেখক : শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন