এবার উচ্চ মাধ্যমিকে দেশের ১৩৫টি কলেজ ও মাদরাসায় কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। আরো ১৩৮৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দু’একজন করে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। এ তালিকায় শহরের চটকদার ও বাহারি নামের বেশ কিছু কলেজও রয়েছে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বর্ণিত তথ্যের সত্যতা ও সঠিকতা সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। যদি সত্য হয় কিংবা এর আংশিকও সঠিক হয় তবে বলতেই হবে, এর চেয়ে দু:খজনক ও উদ্বেগজনক আর কিছু হতে পারে না। বলার অপেক্ষা রাখেনা, ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে আসেনি বা আসে না যাদের শিক্ষার মান বলতে কিছু নেই। বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল যখন প্রকাশিত হয় তখন দেখা যায়, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাসের হার শূন্য। এই শূন্য পাসের অধিকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কেউই ভর্তি হওয়ার আগ্রহ দেখাতে পারেনা। প্রতিবেদনে উল্লেখ হয়েছে করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এমপিওভুক্ত ও এমপিওভুক্ত নয়-উভয় ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই রয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি অর্ধেকও হয়, তাহলে তাদের জন্য সরকারের দেয়া অর্থ কোনো কাজে আসছে না, এটা সম্পূর্ণ অপচয় হয়ে যাচ্ছে। এই অপচয় হয়ে যাওয়া অর্থের পরিমাণ শতাধিক কোটি টাকা। জনগণের ট্যাক্সের টাকা সরকার এভাবে অপচয় করতে পারেনা। অন্যদিকে এ বাস্তবতাও অস্বীকার করা যাবে না মানসম্পন্ন অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বাইরে রয়েছে। সমস্ত শর্ত পূরণ করেও তারা এমপিওভুক্ত হতে পারছেনা। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা কার্যত বেগার খাটছেন। উচ্চ জীবনযাত্রার ব্যয়ের এই দিনে তাদের দুর্ভোগ ও যাতনার কোনো শেষ নেই।
যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত মান নেই, শিক্ষার্থী নেই, সেসব প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারের যে ব্যয় হচ্ছে তা অপ্রয়োজনীয়। অথচ যাদের যথাযথ মান আছে, শিক্ষার্থী আছে তাদের শিক্ষক-কর্মচারীরারা এমপিওভুক্তির বাইরে থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন। এই বৈপরীত্য চলতে পারে না। শিক্ষাক্ষেত্রে এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় আরো নানা পর্যায়ে হয়ে থাকে। উদ্ভট ও তুগলোকী সিদ্ধান্ত বা প্রকল্প নিতেও কখনো কখনো দেখা যায়। সম্প্রতি সরকারী মাধ্যমিক স্কুলে এসকেলেটর স্থাপনে এমনই এক তুগলোকী প্রকল্প নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর। এই প্রকল্পের জন্য ১১১৬ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। প্রশ্ন হলো, সরকারী মাধ্যমিক স্কুলে এসকেলেটর স্থাপন কি শিক্ষা সংক্রান্ত ও শিক্ষাসহায়ক কোনো উপকরণ? যেখানে শত শত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভবনসহ অবকাঠামো সমস্যায় ভুগছে সেখানে এই অপ্রয়োজনীয় এসকেলেটর স্থাপন কেন? অধিদফতরটিতে সকল ক্ষেত্রে টাকার খেলা হয় বলে জোর অভিযোগ রয়েছে। এই প্রকল্পটিও সেই খেলার অংশ কিনা সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা নানাভাবে বখরা আদায় করে। তাদের পকেট ভরার জন্য আজগুবী প্রকল্প নেয়া হবে, এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে এমন কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ‘বিশেষ বিবেচনায়’ অনুমোদন পেয়েছে। সাধারণত একটি কলেজকে স্বীকৃতি ও এমপিও পেতে হলে ন্যুনতম ২৫ জন শিক্ষার্থী থাকতে হয়। পাশাপাশি দুই কলেজের মধ্যে দূরত্ব থাকতে হয় কমপক্ষে ৬ কিলোমিটার। তবে জনসংখ্যার ঘনত্বসহ বিশেষ বিবেচনায় অনেক সময় এ শর্ত শিথিল করা হয়ে থাকে, যা মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত। জানা গেছে, অনেক কলেজ বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে অনুমোদন পেয়েছে। বিনিময়ে তারা মোটা অংকের অর্থ পেয়েছে। এসব কলেজের শিক্ষার মান যেমন নেই তেমনি নেই উপযুক্ত অবকাঠামো ও সুযোগ সুবিধা। ফলে এরা সরকারী অর্থের অপচয়ের কলে পরিণত হয়েছে।
এ ব্যাপারে একটি ব্যাপকভিত্তিক প্রতিষ্ঠানিক বা নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। পত্রিকার রিপোর্টির ওপর ভিত্তি করে নয়, একে সূত্র হিসাবে ধরে এই তদন্ত চালানো এখন অত্যন্ত জরুরি। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান নেই, শিক্ষার্থী নেই সে সব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখে সরকারী অর্থের অপচয় করার কোনো যুক্তি ও মানে নেই। এদের ব্যাপারে একটাই সিদ্ধান্ত এবং তাহলো, বন্ধ করে দেয়া। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো: সোহরাব হোসাইনের এটাই অভিমত। আমরা তার অভিমতের সঙ্গে সহমত পোষণ করি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, শূন্য ভর্তি ও পাস প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় কঠোর অবস্থান নিয়েছে। গত বছরও এ ধরনের ৭৯টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, এই অবস্থানে অনড় থাকতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষে শূন্য ভর্তি ও পাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনুরূপ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে তয়তদবিরে প্রভাবিত হলে চলবে না। অবশ্যই অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ও অপচয় রোধ করতে হবে। আর সেই অর্থ ভালোমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যয় করতে হবে। তাদের এমপিওভুক্ত করতে হবে। তদন্তে অনিয়ম-দুর্নীতি প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নিতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য তত্ত¡াবধান ও মনিটারিং জোরদার করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন