শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চলে গেলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী

শফিউল আলম ও রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১০:৫২ এএম | আপডেট : ১১:২৩ এএম, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭

সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। বীরমুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন চট্টগ্রামের গণমানুষের নেতা। আজীবন সংগ্রামী এই প্রবীণনেতা জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত চট্টগ্রামের স্বার্থে ছিলেন আপসহীন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি কারাবরণ করেছেন, ফেরারি হয়েছেন অনেকবার। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পর পর তিন দফায় নির্বাচিত হয়ে ১৭ বছর দায়িত্বে থাকা সাবেক সিটি মেয়র। মেয়র থাকাকালে চট্টগ্রামের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। বিশেষ করে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে তার যে সাফল্য তা নজিরবিহীন। তাকে হারিয়ে এখন শোকের সাগরে ভাসছে চট্টগ্রাম।
আলাদা করে পরিচয় ও বিশেষণে ভূষিত না করলেও সমগ্র দেশের মানুষের কাছে পরিচিত একটি নাম আলহাজ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রামবাসীর তাকে দেওয়া উপাধিটি হচ্ছে ‘চট্টলবীর’। বিগত ১১ নভেম্বর তিনি বাসায় হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং রাতেই তাকে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার তেমন উন্নতি না হওয়ায় পরদিন ১২ নভেম্বর তাকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে কিছুটা উন্নতি হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ১৫ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন দীর্ঘদিন যাবত। সিঙ্গাপুরে তাকে অস্ত্রোপচার করার পর অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরমধ্যে তিনি চট্টগ্রাম ফিরে আসতে ব্যাকুল হয়ে পড়েন। তিনদিন আগে একটি মাইক্রেবাসে করে ঢাকা থেকে সড়কপথে চট্টগ্রাম চলে আসেন তিনি। মাত্র দুই দিনের মাথায় তার অবস্থার অবনতি হয়। শুক্রবার ভোরে তিনি ইন্তেকাল করেন। তার ইন্তেকালের খবরে চশমাহীলের বাসায় হাজারে মানুষের ঢল নামে। শোকার্ত নেতাকর্মীদের কান্না আর আহাজারি চলছে সেখানে। আওয়ামী লীগসহ সব দলের নেতারা ছুটে যান তাকে দেখতে। সেখানে সবাই তার স্মৃতিচারণ করছেন। নেতারা বলছেন মহিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন গণমানুষের নেতা। সবদলের কাছে ছিল তার গ্রহণযোগ্যতা। তার ইন্তেকালে চট্টগ্রাম অভিভাবক হারিয়েছে বলেও মন্তব্য অনেকের।
বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে রাজনীতিতে যে সৌজন্য ও সৌন্দর্য অতীত থেকেই রেওয়াজি ধারার মতোই চলে আসছে তার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। দল-মত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিপদে-আপদে, জানাযায়, নিজ হাতে লাশের কাফন-দাফন এবং বিয়ে-শাদিতেও সবার আগেই তাকে ছুটে যেতে দেখা যায়। তিনি গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পরও চট্টগ্রামের রাজনীতির সৌন্দর্যবোধ ফুটে উঠেছে পুনরায়। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার সময়ে এবং দেখার জন্য এ পর্যন্ত ছুটে গেছেন চট্টগ্রামের নেতা অনেকেই। সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে তাকে দেখতে গেছেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসি। ঢাকায় ও চট্টগ্রামের হাসপাতালে দেখতে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি মেয়র নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ অনেকেই। শুধুই তাই নয়; মহিউদ্দিন চৌধুরী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে এ যাবত চাটগাঁর সর্বস্তরের মানুষ তার শারীরিক অবস্থার প্রতিনিয়তই খোঁজ-খবর নিয়েছেন, দোয়া করেছেন আশু সুস্থতার জন্য। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, সমর্থক ছাড়াও বিপরীত মেরুর বিএনপির কর্মীরাও তার সুস্থতা কামনা করছেন। তার হঠাৎ গুরুতর অসুস্থতায় প্রকাশ করে চলে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা। তবে চিকিৎসা শেষে ফিরে আসায় সকলে আশাবাদী ছিলেন, তিনি ফের গণমানুষের পাশে আসবেন। তবে তা আর হলো না। তাকে চলে যেতেই হলো। তার ইন্তেকালের পর বাসভবনে হাজারে মানুষের ঢল প্রমাণ করে তিনি সকলের কত আপন ছিলেন। এর মধ্যদিয়েই মহিউদ্দিন চৌধুরীর পাহাড়সম জনপ্রিয়তার দিকটি সুস্পষ্টভাবেই ফুটে উঠেছে। চাটগাঁর একজন ‘পপুলার লীডার’ বা জনপ্রিয় নেতা হিসেবে তার আসনটি তিনি তিলে তিলে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। চট্টগ্রামবাসী আপনজন হারানোর বেদনায় এখন শোকার্ত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন