রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নিবন্ধ

নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরদার সিরাজ

বাংলাদেশ আদিকাল থেকেই কৃষি নির্ভর দেশ, বর্তমানেও। দেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনো সংশ্লিষ্ট এই খাতে। ভবিষ্যতেও থাকবে। কারণ, দেশে শিল্পোন্নয়ন আশানুরূপ হয়নি। ভবিষ্যতেও সম্ভবনা কম। এই অবস্থায় দেশের কাক্সিক্ষত উন্নতি এবং বেকারত্ব হ্রাস করার জন্য দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্থায়ীভাবে স্বয়ংভর করা আবশ্যক এবং তা শুধুমাত্র ধান-চালে নয়, বরং গম, শাক-সব্জি, ফল, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ তথা সুষম খাদ্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই। উপরন্তু পিঁয়াজ, রসুন, আদাসহ সব মসলারও। দেশে বর্তমানে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে বলে ‘বিশ্বে খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি-২০১৭’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। স¤প্রতি প্রকাশিত এডিবি’র প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টির ধারাবাহিক উন্নতি হয়নি। কখনও কখনও এই পরিস্থিতি পেছনের দিকেও হেঁটেছে। খাদ্যের মূল্য খুব বেশি উঠানামা করে। দেশে এখনও শিশুদের পুষ্টি, খর্বাকায় পরিস্থিতি এবং পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের কম ওজন সমস্যা উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। ২০১৪ পর্যন্ত খাদ্য উৎপাদনের তথ্য মোতাবেক, বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংস্পূর্ণ (৯৯%)। কিন্তু অন্যান্য খাদ্য উৎপাদনে পিছিয়ে রয়েছে। যেমন: দেশের চাহিদার তুলনায় গম ২৭%, ভুট্টা ৬৮% ও সয়াবিন ৪৬% উৎপাদিত হয়। এসব আমদানি নির্ভর। মাছ, মাংস, দুধ, ডিম এবং ডাল হলো আমিষের মূল উৎস। ২০১৫ সালের বিশ্ব খাদ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী বছরে মাথাপিছু মাত্র দশমিক ২৫ মেট্রিক টন ডাল উৎপাদন হয়। বাকীটা আমদানি করতে হয়। দেশে প্রাণীজ আমিষ গ্রহণের হারও অনেক কম। গর্ভবতী নারীদের রক্ত স্বল্পতার হার ২০১০ সালে ৪৮% ছিল যা ১০১৫ সালেও কোন পরিবর্তন হয়নি। ৫ বছরের নিচে শিশুদের এ সমস্যা প্রায় ৫৬%। উক্ত প্রতিবেদনে এশিয়ার তুলনামূলক তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তার মান এখনও নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। গত দুই বছরে এর তেমন পরিবর্তন হয়নি। কৃষির এই অবস্থা দেশের উন্নতির চরম অন্তরায়। তাই প্রতিটি খাদ্য উৎপাদনেই স্বযংভর হওয়া এবং তা সকলের খাওয়ার ব্যবস্থা করা আবশ্যক। উৎপাদিত খাদ্যের মূল্য ও মান বিশ্ব পর্যায়ের হওয়া প্রয়োজন। নতুবা বিশ্বায়নের যুগে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন। আর টিকে থাকতে না পারলে দেশ আমদানি নির্ভর হয়ে পড়বে। সেক্ষেত্রে বিপদ চরম। ১৬ কোটির অধিক মানুষের খাদ্য যদি আমদানি করতে হয়, তাহলে উন্নতির প্রায় সব অর্থই ব্যয় হয়ে যাবে আমদানি করতেই। তার প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে। এ বছর হাওর, চলনবিল ও উত্তরবঙ্গে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় যে ফসল হানি হয়েছে, তার পরিমাণ মোট খাদ্য উৎপাদনের ৩০% ও মূল্য ১৫ হাজার কোটি টাকা বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত, যা আমদানি করে পূরণ করতে হচ্ছে এবং তা উন্নয়ন ব্যয় হতেই। ফলে উন্নতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপরন্তু খাদ্য দ্রব্যের মূল্য বেড়ে সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। তাই দেশে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার বিকল্প নেই। অবশ্য, এ ক্ষেত্রে অনেক বাধাও রয়ছে। যেমন: প্রতিবছরই কৃষি জমি হ্রাস পাচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ ও নদী ভাঙ্গনে। এছাড়া, প্রাকৃতিক দুযোর্গ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি, কৃষি শ্রমিকের প্রচÐ অভাব রয়েছে ও কৃষি উপকরণের মূল্য অত্যধিক। এছাড়া, দেশে ক্রমান্বয়েই লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে।
এই অবস্থায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য চাষ ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন, অধিক উৎপাদনশীল বীজ ব্যবহার, শস্য বহুমুখীকরণ করা আবশ্যক। সে লক্ষ্যে সমস্ত কৃষি জমিকে চাষের ও সেচের আওয়তায় আনা, সব সেচ মেশিনে সৌরবিদ্যুৎ সংযুক্ত করা, সর্বত্রই কম্বাইন হারেভেস্টার মেশিন ব্যবহার করা দরকার। চাষ কাজে গরুর পরিবর্তে পাওয়ার টিলার ব্যবহৃত হচ্ছে অনেকদিন যাবত। কিন্তু কম্বাইন হারেভেস্টার মেশিনের ব্যবহার নতুন। এই মেশিন সম্পর্কে একটি দৈনিকে প্রকাশ, স্বল্প সময়ে কম শ্রমিক ব্যবহারের মাধ্যমে একইসঙ্গে ধান কাটা, মাড়াই, পরিষ্কার ও প্যাকেটজাত করা যায়। তাই কৃষি শ্রমিক সঙ্কটের কারণে এই মেশিনের দিকে ঝুঁকছে কৃষকরা। তবে মেশিনের দাম বেশি হওয়ায় তা কিনতে পারছেন না কৃষকরা। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সহায়তা করা গেলে এক্ষেত্রে আরো ভালো ফল পাওয়া সম্ভব। যাহোক, বর্ণিত এসব ব্যবহৃত হলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, শ্রমিকের সংকট দূর হবে এবং উৎপাদন ব্যয় অনেক হ্রাস পাবে। তাই এসব উপকরণ কৃষকের দোর গোড়ায় স্বল্পমূল্যে পৌঁছে দেওয়া দরকার। দেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের প্রাণান্ত চেষ্টায় এ পর্যন্ত অনেকগুলো অধিক উৎপাদনশীল ধানের বীজ উদ্ভাবন হয়েছে। তন্মধ্যে বেশি খরা সহিঞ্চু, বন্যা সহিঞ্চু, লবণাক্ততা সহিঞ্চু, অগ্রীম উৎপাদন ইত্যাদি জাত রয়েছে। এছাড়া, বিজ্ঞানীরা অন্য সব ফসল, মাছ, পশু ইত্যাদিরও উন্নতর জাত আবিষ্কার করেছেন এবং তা ব্যবহারও হচ্ছে। এমনকি পোকামুক্ত গম বীজও উদ্ভাবন করেছেন তারা। এ ব্যাপারে একটি দৈনিকে প্রকাশ, দেশে প্রথম বøাস্ট রোগ প্রতিরোধী গমের জাত উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা। সরকারী গম গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা জাতটি উদ্ভাবন করে তা জাতীয় বীজ বোর্ডের সভায় ‘বারি গম-৩৩’ নামে অবমুক্ত করা হয়েছে চাষের জন্য। জাতটির জীবনকাল ১১০-১১৫ দিন। শীষ লম্বা এবং প্রতি শীষে দানার সংখ্যা ৪২-৪৭টি। দানার রং সাদা, চকচকে ও আকারে মাঝারি। গমের বøাস্ট রোগ ছাড়াও জাতটি পাতার দাগ রোগ সহনশীল এবং মরিচা রোগ প্রতিরোধী। একদিকে যেমন রোগ প্রতিরোধী অন্যদিকে জিংক সমৃদ্ধ। এর দানায় জিংকের মাত্রা ৫০-৫৫ পিপিএম। জাতটি তাপসহিষ্ণু এবং এর কাÐ শক্ত হওয়ায় গাছটি সহজে হেলে পড়ে না। উপযুক্ত পরিবেশে হেক্টর প্রতি ফলন হবে ৪-৫ হাজার কেজি, যা অন্য জাতের দ্বিগুণ। নতুন এই জাতের গম সারাদেশে চাষ হলে চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। দেশে দ্বিতীয় প্রজন্মের সোলার সেল আবিষ্কার হয়েছে। যা বাজারজাতকরণের সাথে সাথেই সর্বত্রইসহ সব সেচ মেশিনে ব্যবহার করা দরকার। তাহলে সেচের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। সর্বপরি পাওয়ার টিলার ও কম্বাইন হারেভেস্টারেও এটা ব্যবহার করা দরকার। তাহলেই কৃষি উৎপাদন ব্যয় আরো হ্রাস পাবে। এছাড়া, কারখানার পর ফসল তোলার কাজেও রোবট ব্যবহারের উদ্যোগ চলছে। মিউনিখ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্রে গবেষকরা সবজি চাষে বিপ্লব আনতে চান। এক রোবটকে দিয়ে ক্যাপসিকাম ফসল তোলানো হচ্ছে। এই অবস্থায় দেশের কৃষি কাজে রোবট ব্যবহারের বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। কালীগঞ্জের কৃষক মকবুল হোসেন এক ধান থেকে দুই চালের জাত উদ্ভাবন করে চমক সৃষ্টি করেছেন। তিনি এ ধানের নাম দিয়েছেন ‘মকবুল ধান’। এমনিতে জৈব সার ও বালাইনাশক উৎপাদন, ঔষধি গাছ রোপণ ও উন্নত মানের ধানের জাত উদ্ভাবন করে দিন বদল করেছেন তিনি। এখন তিনি মকবুল ধান থেকে একসঙ্গে দুটি চাল পাওয়ার উপায় বের করেছেন। তার এই উদ্ভাবিত ধান সারাদেশে ব্যবহৃত হলে চালের উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে, স¤প্রতি দেশে টার্কি মুরগির চাষ শুরু হয়েছে। ৬ মাসের মধ্যেই টার্কি মুরগীর মাংস ১২ কেজির বেশি হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে দেশি মুরগির ১-১.৫ কেজি আর ফার্মের মুরগির ২.৫-৩ কেজি মাংস হয়। উপরন্তু টার্কি মুরগি দেশি খাবার খায় এবং এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। উপরন্তু মাংস খুব টেষ্টফুল ও চর্বি কম। তাই টার্কি মুরগির চাষ খুব লাভজনক। ফলে এর চাষ ক্রমান্বয়েই বৃদ্ধিপাচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের নদীর পানিতে ভাসমান খাঁচায় মাছের চাষ লাভজনক হওয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই পদ্ধতি। উপরন্তু আত্রাই নদীতে এখন বছরজুড়েই খাঁচায় মাছচাষ হচ্ছে। কম সুদে সরকারি ঋণ পেলে এক্ষেত্রে আরও লাভবান হওয়ার আশা করছেন চাষিরা। কুমিল্লায় মেঘনা নদীতেও খাঁচায় মাছ চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। বিশেষ করে মেঘনা উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে এ মাছ চাষ করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে কম খাবারেই দ্রæত বৃদ্ধি পায় বলে তেলাপিয়া মাছ বেশি চাষ করা হচ্ছে। পুকুর ও খামারে চাষ করা তেলাপিয়া থেকে নদীতে চাষ করা মাছের স্বাদ ব্যতিক্রম। তাই এই মাছের চাহিদাও বেশি। এসব প্রকল্পে কর্মসংস্থান হচ্ছে স্থানীয় যুবকদের, এতে এলাকায় বেকারত্বও কমছে। নদীতে চার কোণের বাঁশ বা এঙ্গেলে জাল লাগিয়ে খাঁচা বানানো হয়। সেই খাঁচা ড্রামে ভাসিয়ে রাখা হয়। পানি বাড়লে খাঁচা উপরে ওঠে-কমলে নিচে যায়। সেই খাঁচায় মাছের পোনা ফেলে ভাসমান খাবার দেওয়া হয়। নদী ও সাগরে খাঁচায় মাছ চাষ করা দেশের জন্য খুব কল্যাণকর। কারণ, দেশের সমুদ্র এলাকা বিশাল। এছাড়া অসংখ্য নদী, খাল বিল ও হাওড় রয়েছে এ দেশে। এসবের খোলা পানিতে খাঁচায় মাছ চাষ করতে পারলে মাছের উৎপাদন ব্যাপক বদ্ধি পাবে। মাছ চাষের জন্য ফসলের জমি কেটে পুকুর বানাতে হবে না। তাই এই পদ্ধতি সারাদেশেই ব্যাপকতর করা আবশ্যক। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির আর একটি চমকপ্রদ খবর হচ্ছে, স¤প্রতি জার্মানে অনুষ্ঠিত এক মেলায় মিষ্টি কুমড়ার উৎপাদনকারী প্রথম হয়েছেন বেলজিয়ামের কৃষক মাথিয়াস উইলেমিনস। তার ফলানো একটি কুমড়ার ওজন এক টনেরও বেশি। এরূপ আরো খবর রয়েছে। এসব উন্নত জাতের ফসলের বীজ দেশে এনে চাষ করার ব্যবস্থা করতে পারলে কম জমিতেই অধিক ফসল উৎপাদিত হবে।অ ন্যদিকে, বিচিমুক্ত পেয়ারার জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের একদল গবেষক। এর নামকরণ করা হয়েছে ‘বারি পেয়ারা-৪’। এর অনুমোদনও পাওয়া গেছে। উক্ত সংস্থার এক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার অভিমত, ‘বারি পেয়ারা-৪’ সম্পূর্ণ বিচিমুক্ত হওয়ায় এটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
যাহোক, দেশে কৃষি খাতে জমির পরিমাণ কম। উপরন্তু যা আছে, তাও ক্রমান্বয়েই কমছে। তাই একই জমিতে একসঙ্গে একাধিক ফসল ফলানো তথা ‘শস্য বহুমুখীকরণ’ করা প্রয়োজন। যেমন: পুকুর বা দীঘিতে মাছ চাষের সাথে হাঁস চাষ এবং পাড়ে সব্জি ও ফলের চাষ করা সম্ভব। তেমনি আখ, পাট ইত্যাদি ফসলের সময় জমির আইলে হলুদ, মরিচ, আদা ইত্যাদি চাষ করাযায়। এছাড়া, বিভিন্ন দেশে অরগ্যানিক খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এর চাষও বাড়ছে। এমনকি এ দেশেও। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে খাদ্য উৎপাদন করাকেই অরগ্যানিক খাদ্য বলে। অরগ্যানিক খাদ্যের কারণে মানুষের যেমন স্বাস্থ্যহানি হয়না, তেমনি জমির উর্বরতা শক্তিও হ্রাস পায় না। সর্বপরি এই ব্যবস্থা সম্পূর্ণ দেশীয়। তাই ফসলের উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায়। তাই এসব করা দরকার। প্রতিবছর দেশের বিপুল পরিমাণ শস্য পচে, অপচয় হয়ে ও সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। যার পরিমাণ মোট শস্যের বিরাট অংশ। উপরন্তু সময় ভেদে মূল্যের অনেক তারতম্য হয়। যেমন: ফসল ওঠার সময় মূল্য অনেক কম থাকে। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অফ সিজনে মূল্য অনেক বৃদ্ধি পায়। এতে ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটা নিরসন করা দরকার। সে জন্য প্রতিটি শস্য, ফল, সব্জি, মাছ ইত্যাদি সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ (যেগুলো হয়) ও বাজারজাতকরণ করাদরকার। তথা কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলা আবশ্যক এবং তা প্রয়োজন মোতাবেক। তাহলে সারা বছরই পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য দ্রব্য পাওয়া যাবে, মূল্যের কোন তারতম্য হবে না। এছাড়া বিপুল পরিমাণে রফতানিও হবে। উপরন্তু এসব শিল্পে অসংখ্য প্রান্তিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কৃষক ও ক্রেতারা লাভবান হবে। সব শেষে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে; প্রতি বছরই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার সময় বাঁধ ভেঙ্গে ব্যাপক ফসলহানি ও বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যায়। তাই সব বাঁধগুলো খুবই শক্তিশালী করা এবং কৃষি জমিতে কোন স্থাপনা না করার আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা দরকার। এছাড়া, নদী, খাল বিলসহ সব পানিস্থল প্রতিনিয়তই সংস্কার করা দরকার। তাহলে সেচের জন্য সব সময় পানি পাওয়া যাবে। উপরন্তু মাছচাষও বৃদ্ধি পাবে ও পরিবেশের কল্যাণ হবে। এমআইটি’র গবেষণা মতে, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা সহনীয় মাত্রার চেয়ে ১০-১০০ গুণ বেশি। ফলে ধান উৎপাদন কমছে ৭-২৬% পর্যন্ত। ব্রিটেনের এমআইটি’র সিইই বিভাগের অধ্যাপক চার্লস হার্ভে ও তার গবেষণা টিম ফরিদপুরে দু’বছর গবেষণা করে এমন তথ্য পেয়েছেন যা ‘এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ জার্নালে অক্টোবর ’১৭ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। এই অবস্থায় কৃষি খাত রক্ষার স্বার্থে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বন্ধ করে দিয়ে সারফেস ওয়াটার ব্যবহার করা দরকার। কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট ৩০টির মতো প্রতিষ্ঠান আছে দেশে। কিন্তু এসবের মধ্যে কোন সমন্বয় না থাকায় কৃষি উৎপাদনে খুব ক্ষতি হচ্ছে। তাই দেশের কৃষি খাতের উন্নতির স্বার্থে এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় হওয়া আবশ্যক বলে ঢাবি’র শিক্ষক ও দেশের প্রথম জাতিসংঘের আর্থ পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. আতিকুর রহমান জানিয়েছেন।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন