জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃতি দানের প্রেক্ষিতে বিশ^জুড়ে যখন নিন্দা-বিক্ষোভ চলছে সে সময় ইসরাইলের গোয়েন্দা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটয সউদী ক্ষমতাশালী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ইসরাইল সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
ইসরাইলি মন্ত্রীর মুখপাত্র বৃহস্পতিবার বলেন, সউদী মালিকানাধীন আরবি ভাষী সংবাদ ওয়েবসাইট এলাফের সাথে এক সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন। তবে অজ্ঞাত কারণে প্রকাশিত সাক্ষাতকারে এ সফরের আহবান নেই। প্রতিনিধি আরি শালিকার বলেন, তিনি (মন্ত্রী) বলেন, বাদশাহ সালমান প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে সরকারীভাবে রিয়াদ সফরের আমন্ত্রণের আহবান জানান এবং ইসরাইলি মন্ত্রী বাদশাহর পুত্র এমবিএস বা মোহাম্মদ বিন সালমানকে ইসরাইল সফরের আমন্ত্রণ জানান।
কাটযের অফিস জানায়, আঞ্চলিক শান্তির জন্য তিনি এ আমন্ত্রণ জানান।
সউদী আরব ও ইসরাইলের মধ্যে কোনো ক‚টনৈতিক সম্পর্ক নেই। অভিন্ন শত্রæ ইরানের কারণে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক উষ্ণ হয়ে উঠছে বলে মনে হচ্ছে।
ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরুর ক্ষেত্রে রিয়াদ এক গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী।
গতমাসে সাবেক ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াকভ নাগাল দাবি করেন যে সউদী আরব যে কোনো ধরনের ইসরাইল-ফিলিস্তিন চুক্তি মেনে নিতে আগ্রহী এবং ইরানের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট না করা পর্যন্ত তারা ফিলিস্তিন স্বার্থের ব্যাপারে অপ্রীতিকর কিছু করা বন্ধ রেখেছে।
জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতি প্রদানের পর আরব-ইসরাইল বিরোধের কোনো সম্ভাব্য অগ্রগতি এখনো টেবিলের বাইরে।
গাজার জঙ্গি হামাসসহ বিভিন্ন ফিলিস্তিনি গ্রæপের আহূত ক্রোধ দিবসের দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার ফিলিস্তিন জুড়ে বিক্ষোভকারীরা ইসরাইলি বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে ২ ্জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়।
রামাল্লাহয় এক ফিলিস্তিনি এক ইসরাইলি পুলিশকে ছুরি নিয়ে হামলা করার পর সে গুলিতে আহত হয়। সে একটি সুইসাইড ভেস্ট পরিহিত ছিল।
পশ্চিম তীর ও গাজার বিভিন্ন স্থানে ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলি সৈন্যদের লক্ষ করে পাথর ছোঁড়ে ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরাইলি পুলিশের গুলিতে ৫ জন আহত হয়েছে।
ট্রাম্পের ঘোষণার পর থেকে ফিলিস্তিনে নিহতের সংখ্যা ৬-এ পৌঁছেছে।
১৯৬৭ সালের ৬ দিনের যুদ্ধে ইসরাইল পূর্ব জেরুজালেম অধিকার করে তার অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ভাবে তা স্বীকৃত হয়নি। জেরুজালেম নিয়ন্ত্রণ সমস্যাটি ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি চুক্তির ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা।
পূর্ববর্তী আরো প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের মত ট্রাম্পও জেরজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দান ও সেখানে দূতাবাস স্থানান্তরের অঙ্গীকার করেন।
৬ ডিসেম্বর ট্রাম্পের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক দশকের নীতির পরিবর্তন। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী নীতি ছিল ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তি অনুযায়ী চ‚ড়ান্ত শান্তি চুক্তিতে জেরুজালেমের মর্যাদা সুস্পষ্ট করা হবে।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত মুসলিম বিশ^ ও পশ্চিমা মিত্রদের নিন্দার সম্মুখীন হয়েছে। এমনকি সউদী বাদশাহও এর নিন্দা করেছেন যা এক বিরল ঘটনা। তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী করার অধিকার আছে।
ফিলিস্তিনিরা ঘোষণা করেছে যে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র আর কোনো পক্ষপাতহীন উদ্যোক্তা নয় তাই তারা ইসরাইল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাখ্যান করছে।
সম্প্রতিক মাসগুলোতে অনুক‚ল নয় এমন শর্তে শান্তি চুক্তি মেনে নিতে ফিলিস্তিনের উপর রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে চাপ বাড়ছিল। নীল নকশায় দু’রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানের বিষয় রয়েছে, কিন্তু ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বা পূর্ণ সার্বভৌমত্বের বিষয় নেই।
মার্কিন সিদ্ধান্তকে ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাখ্যানের প্রেক্ষিতে ইরানের বিরুদ্ধে সউদী আরব ও অন্য আরব দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সাথে ঐক্যবদ্ধ করার ওয়াশিংটনের উদ্যোগকে জটিল করে তুলেছে।
বহু দেশই ফিলিস্তিন সমস্যার কোনো অগ্রগতি ছাড়া ইসরাইলের সাথে ঘনিষ্ঠ হতে অনাগ্রহী ছিল। এখন তাদের রাজি করানো আরো কঠিন হবে।
ট্রাম্প বলেছেন, ইতোমধ্যেই জেরুজালেম ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার বাস্তবতার ভিত্তিতেই তিনি জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। শহরটিকে নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য বিষয় দু’পক্ষের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন