সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবলে বাংলাদেশের মেয়েরাই দক্ষিণ এশিয়ার সেরা। ক’দিন আগে রাজধানীর কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ভারতকে এক গোলে হারিয়ে তারা অপরাজিত চ্যাম্পিয়নের মর্যাদা লাভ করেছে। শুধু অপরাজিতই নয়, টুর্নামেন্টের চার ম্যাচে তারা প্রতিপক্ষের নেটে ১৩টি গোল করলেও নিজেরা একটি গোলও হজম করেনি। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে র্যাংকিংয়ে ভারত ও বাংলাদেশের পার্থক্য ছিল আকাশসম। ভারত যেখানে র্যাংকিংয়ে ৫৬ সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০। কিন্তু সেই ভারতকে বাংলাদেশের মেয়েরা লিগ পর্বে হারিয়েছে ৩-০ গোলে। ফাইনালে ১-০ গোলে হারিয়ে ছিনিয়ে নিয়েছে শিরোপার সম্মান। নেপাল ও ভুটানকে তারা যথাক্রমে ৬-০ ও ৩-০ গোলে হারানোর কৃতিত্ব দেখিয়েছে।
পুরুষদের ফুটবল দলের অবস্থান যখন বিশ্বপরিসরে তলানির দিকে তখন কিশোরী ফুটবলারদের সাফ শিরোপা জয় জাতির জন্য গৌরব বয়ে এনেছে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলে উন্নতি করতে হলে নিবিড় প্রশিক্ষণ ও পরিচর্যার যে বিকল্প নেই আমাদের কিশোরীরা তা প্রমাণ করেছে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে তারা জাতির জন্য এনে দিয়েছে এক অনন্য বিজয়। সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবলে কাগজে-কলমে ভারতই ছিল ফেবারিট। গোলাম রব্বানী ছোটনের সুদক্ষ কোচিংয়ে দারুণ একটি দল হিসেবে বাংলাদেশের যে আত্মপ্রকাশ ঘটে তা শেষ পর্যন্ত অপরাজেয় থাকার কৃতিত্ব দেখায়। লিগ পর্বে টানা তিন জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে কমলাপুরের অ্যাস্ট্রোটার্ফে খেলতে নামে ছোটনের শিষ্যরা। লিগ পর্বে তারা যে ধারায় ফুটবল খেলেছে ফাইনালে সেই নৈপুণ্য ধরে রাখে শামসুন্নাহার, তহুরা, মারিয়া, মনিকারা। শুরুর বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুধার্ত বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে ভারতের ওপর। আক্রমণাত্মক ফুটবলের পসরা সাজিয়ে ৬ মিনিটে প্রথম গোলের সুযোগ সৃষ্টি করে বাংলাদেশ। ডান প্রান্ত থেকে উড়ে আসা বলে আনুচিং মগিনি হেড করলেও বলটি বারপোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়। ৩ মিনিট পর ভারতের পবিত্রা মুরগেসানের ফ্রি-কিক সোজা গোলরক্ষক মাহমুদা আক্তারের গøাভসে জমা পড়ে। এর পর থেকেই মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ছোটনের শিষ্যরা।
আমরা আশা করব অনূর্ধ্ব-১৫ কিশোরীদের এ জয় বাংলাদেশের ফুটবলকে জেগে উঠতে সাহায্য করবে। দেশ ও জাতির জন্য সম্মান বয়ে আনতে পুরুষ ফুটবলাররাও অদম্য সাহসে উদ্দীপ্ত হবে এমনটিই কাম্য।
আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশের আবহাওয়া প্রাকৃতিক ভাবেই আমাদেরকে অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে রেখেছে। একজন বয়সকালের তরুণ যখন ফুটবলার হচ্ছে- তখন দেখা যায়, হয়তো তাঁর উচ্চতার ঘাটতি, দমের ঘাটতি, স্কিলের ঘাটতিসহ নানা দুর্বলতায় সে কেবল দেশীয় স্ট্যান্ডার্ডের খেলোয়াড় হয়ে পড়ছে। সঙ্গত কারণে আজকের বাফুফে সভাপতি কাজী সালাহউদ্দীন, মোনেম মুন্না, রুমিসহ দুই একজন বাদ দিলে কেউই বিদেশি লীগের স্ট্যান্ডার্ডের খেলোয়াড় হতে পারছে না।
এ থেকে উত্তরণে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে। আজকের শাসক দল যেমন ২০২১ সালে দেশ মধ্য আয়ের দেশ কিংবা ২০৪১ সালের মধ্যে ধনী রাষ্ট্র হওয়ার ভিশন এবং মিশনে নেমেছে। ঠিক তদ্রæপ ২০৩০ এবং ২০৩৪ সালের বিশ্বকাপে যাওয়ার জন্য প্রথম দুই বছরে ২৪ ও ২৪ করে ৪৮ জন দেশ থেকে ৫ হতে ৬ বছরের শিশু ফুটবলারদের কেবলমাত্র জার্মানিতে পাঠিয়ে নিজস্ব একমাত্র বিদেশি একাডেমি পরিচালনার উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা যদি ২০১৮ সালে এমন করতে পারি তবে ২০৩০ সালে ওই খেলোয়াড়দের গড় বয়স হবে ২০ এবং ১৮। এতে করে জার্মানির আবহাওয়ায় তাঁদের উচ্চতা কারো ৬ ফুটের নীচে হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো, এই সকল শিশুর পিতার উচ্চতা অন্তত ৫ ফুট ১০ এবং মাতার ৫ ফুট ৪ হওয়া প্রাথমিক যোগ্যতা। এই একাডেমি পরিচালনায় সরকার, বহুজাতিক দেশীয় সংস্থা, পৃষ্ঠপোষক- এমন কি দেশের প্রত্যেক আয় করা ব্যক্তির ১০ টাকা চাঁদা দিয়েও বিদেশি একাডেমি পরিচালনা করা সম্ভব। এর জন্য দেশের প্রচার ও প্রকাশ মাধ্যমকেই সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে।
লেখক: পরিচালক, এফবিসিসিআই
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন