পঞ্চায়েত হাবিব : আকার বাড়ছে মন্ত্রিসভার। অন্তত ৩ জন নতুন মুখ মন্ত্রিসভায় যোগ হচ্ছেন। আর একজন প্রতিমন্ত্রী পদোন্নতি পেয়ে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী হচ্ছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তারা বঙ্গভবনে শপথগ্রহণ করবেন। বিতর্কিত কর্মকান্ড এবং বয়সের ভারের কারণে কয়েকজন মন্ত্রী বাদ পড়ছেন মন্ত্রিসভা থেকে। পদোন্নতি পেয়ে প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন একজন এবং যোগ হবে কিছু নতুন মুখ। ইতোমধ্যে বঙ্গভবনে ডাক পেয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ও ল²ীপুরের সরকার দলীয় এমপি এ কে এম শাহজাহান কামাল, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য কাজী কেরামত আলী এবং দেশের সফটওয়্যার ও তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর সেবা খাতের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সভাপতি মোস্তাফা জব্বার। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে শপথ ছাড়াও মন্ত্রিসভায় আরও কিছু মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী রদবদল হতে পারে বলে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্রে তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম তাদের ফোন করেন বলে জানা গেছে। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তাদের বঙ্গভবনে থাকতে বলা হয়েছে। তবে কেন তাদের বঙ্গভবনে থাকতে বলা হয়েছে সে ব্যাপারে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে কিছু জানানো হয়নি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম ইনকিলাবকে বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক মারা যাওয়ায় পদটি খালি রয়েছে। তাই তার স্থলে প্রতিমন্ত্রীকে (নারায়ণ চন্দ্র চন্দ) পূর্ণমন্ত্রী করার চিন্তাভাবনা সরকারের রয়েছে। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান প্রেসিডেন্ট বঙ্গভবনে থাকতে বলা হয়েছে। নারায়ণ চন্দ্র ও শাহজাহান কামাল দু’জনেই ইনকিলাবকে বলেছেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব তাদের ফোনে করে বঙ্গভবনে থাকার কথা বলেছেন। এর বেশি কিছু বলতে পারেন না বলে জানান তারা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মুহাম্মদ ছায়েদুল হক মারা যাওয়ার পর গত ডিসেম্বর মাসে মাঝামাঝি সময় থেকে তার পদটি শূন্যই রয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কেরামত আলী প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন বলে আভাস দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা। তবে তাকে ঠিক কোন দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, মঙ্গলবার শপথের পরই তা স্পষ্ট হবে। টানা দুইবার ক্ষমতায় আসার পর এবারই প্রথম আওয়ামী লীগ থেকে মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে যাচ্ছেন লক্ষীপুরের এই এমপি। তাকে বঙ্গভবনে যেতে বলা হয়েছে। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ নেয়ার পরে কোন মন্ত্রণালয় দিচ্ছে তা বলা যাবে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠন করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়ন চন্দ্র চন্দকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। সৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেতে চলেছেন। এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছায়েদুল হকের মৃত্যুতে তিনি এই দায়িত্ব পেতে চলেছেন।
বেশ কয়েক মাস ধরেই মন্ত্রিসভায় পরিবর্তনের যে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল তা বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে আজে। চালের মূল্যবৃদ্ধি, পচা গম আমদানিসহ বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত টানা দুই মেয়াদের মন্ত্রিসভার সদস্য খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বাদ পড়তে পারেন। পাবনার সংসদ সদস্য ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ ডিলু বাদ পড়তে পারেন নির্বাচনী এলাকায় আত্মীয়করণের রাজনীতির কারণে। স¤প্রতি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিবাদের কারণে জেলে গিয়েছেন ভূমিমন্ত্রীর ছেলে। খাদ্যমন্ত্রী ও ভূমিমন্ত্রীর ওপর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন অসন্তুষ্ট। বয়সের কারণে বাদ পড়তে পারেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এমাজউদ্দীন প্রামাণিক এবং ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। বার্ধক্যজনিত কারণে শারীরিক সমস্যায় নিয়মিত চলাফেরায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না এই দুই মন্ত্রী। যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় বহু বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য পরিচিত। মন্ত্রণালয় এবং নিজ নির্বাচনী এলাকায় বিতর্কিত কর্মকান্ডের অভিযোগে মন্ত্রিসভা থেকে ছিটকে পড়তে পারেন সাবেক এই ফুটবলার। এমনকি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নও হারাতে পারেন উপমন্ত্রী জয়। পদোন্নতির তালিকায় রয়েছে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের নাম। বিরোধী দলের আমলে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা মির্জা আজমের পদোন্নতির সম্ভাবনা জোরালো। সেই সঙ্গে পদোন্নতি পেতে যাচ্ছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী শিকদার। পদোন্নতির কারণ হিসেবে জানা গেছে, বর্তমান মন্ত্রিসভায় সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের কোনো পূর্ণমন্ত্রী নেই। এ ছাড়া তিনি কয়েক দিন ধরে দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় চালাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি আবার ফিরে পেতে পারেন মন্ত্রিত্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুগত নারীনেত্রী হিসেবে দীপু মনি। নতুনদের মধ্যে মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসতে পারেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়পুরহাটের এমপি আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনেরও নাম রয়েছে আলোচনায়। জেলা পর্যায়ে রাজনীতি করেন এমন কয়েক নেতা আবার আসতে পারেন মন্ত্রিসভায়। আসন্ন রদবদলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আসতে পারেন বেশ কিছু নতুন মুখ।
মন্ত্রিসভায় রদবদলের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের পর দলের সভাপতিমন্ডলীর প্রথম সভার পরই বলেন, শিগগিরই মন্ত্রিসভায় রদবদল আনা হচ্ছে। বর্তমান মন্ত্রিসভায় ৩০ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী এবং দু’জন উপমন্ত্রী রয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন