শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

অন্যের হয়ে পরীক্ষা দেবার শাস্তি

মো. জুবায়ের হুসাইন | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নাদিম (ছদ্মনাম) একজন মেধাবী ছাত্র। পড়া লেখা শেষ করে (বিসিএস) পরীক্ষার প্রস্তুতির পাশাপাশি টিউশনি করে সময় পার করে। তার একটা অনৈতিক অভ্যাস আছে। সে অন্যের হয়ে উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের পাবলিক পরীক্ষায় প্রক্সি দিয়ে মোটা অংকের টাকা কামাই করে। এভাবে তার দিন ভালোই চলছিলো। তার খুব কাছের এক বন্ধু পরীক্ষায় প্রক্সি দেবার জন্য নাদিমের সাথে চুক্তি করে। চুক্তি হয় ভালো ফলাফল করে দিতে পারলে এক লক্ষ টাকা পাবে। নাদিম চুক্তি অনুযায়ী পরীক্ষা দিতে গিয়ে ধরা পড়ে এখন জেলে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাসমূহ সুষ্ঠু শৃঙ্খলাপূর্ণ অবস্থায় সম্পন্ন করতে এবং পরীক্ষা বিষয়ক অপরাধের শাস্তির বিধান করতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার পাবলিক পরীক্ষা অপরাধ আইন ১৯৮০ পাস করে। স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় এবং বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়গুলোর কোন না কোন একটিতে প্রতিদিন পরীক্ষা লেগেই থাকে। পরীক্ষা হলো পরীক্ষার্থীদের মেধা মূল্যায়নের একমাত্র মাধ্যম। তাই পরীক্ষা কেন্দ্রে উচ্ছৃঙ্খল ও অবাধ্য পরীক্ষার্থীদের এবং পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িতদের অপরাধ প্রবণতা প্রতিরোধ করতে পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে।
অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে যাবার শাস্তি: যদি কোন ব্যক্তি সরকারি কোন পরীক্ষায় অন্যের হয়ে পরীক্ষা দিতে পরীক্ষার হলে যায় তাহলে সে ব্যক্তি সরকারি পরীক্ষা (অপরাধ) আইন, ১৯৮০ এর ৩ ধারার বিধান মতে পাঁচ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন যা এক বছরের কম হবে না।
প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বিতরণ করার শাস্তি: যদি কোন ব্যক্তি দফা (ক) অনুযায়ী : উক্ত পরীক্ষার জন্য সন্নিবেশিত প্রশ্নযুক্ত যেকোনো প্রকার কাগজ বা দফা (খ) অনুযায়ী: এইরূপ পরীক্ষায় প্রশ্ন আছে বলে মিথ্যাভাবে বুঝাবার অথবা পরীক্ষার প্রশ্নের সাথে হুবহু মিল আছে বলে বিবেচনা করার মত কোন প্রশ্নযুক্ত কাগজ যেকোন প্রকারে প্রকাশ করেন বা বিলি করেন, তাহলে তিনি উক্ত আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী ১০ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন যা তিন বছরের কম হবে না এবং সাথে অর্থদন্ডে ও দন্ডিত হবেন।
পরীক্ষার্থীদের সাহায্য করার শাস্তি: যদি কোন ব্যক্তি কোন পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষার হলে- (ক) লিখিত কোনো উত্তর বা কোনো বই বা বইয়ের কোন পৃষ্ঠা বা এর উদ্ধৃতাংশ অথবা লিখিত কাগজ সরবরাহের দ্বারা; অথবা (খ) মৌখিকভাবে বা যান্ত্রিক উপায়ে উত্তর বলার দ্বারা অথবা (গ) অন্য যে কোন উপায়ে সাহায্য করেন, তাহলে এই আইনের ৯ ধারার বিধান অনুযায়ী তিনি পাঁচ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের কারাদন্ডে দন্ডিত হবেন যা দুই বছরের কম হবে না এবং সাথে অর্থদন্ডেও দন্ডিত হবেন।
পরীক্ষার হলে বিঘœ সৃষ্টি করার শাস্তি: যদি কোন ব্যক্তি উদ্দেশ্যমূলকভাবে যেকোন উপায়ে- (ক) সরকারি পরীক্ষায় কর্মরত কোনো ব্যক্তির কাজে বাধা প্রদান করেন; অথবা খ) সরকারি পরীক্ষা গ্রহণে বাধা প্রদান করেন; অথবা (গ) পরীক্ষার হলে বিঘœ সৃষ্টি করেন, তাহলে এই আইনের ১১ ধারার বিধান অনুযায়ী তিনি এক বছরের মেয়াদ পর্যন্ত কারাদন্ডে বা অর্থদন্ডে অথবা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন।
আমাদের ভবিষ্যৎ আমাদেরই হাতে। ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল আলোর দিকে ধাবিত করতে একমাত্র আমরাই পারি। আমার এই লেখা তখনই সার্থকতা খুঁজে পাবে যখন, নাদিমের মতো আরো অনেকে এমন অনৈতিক পথ থেকে ঘুরে দাঁড়াবে। আসুন, আমরা সবাই আইন জানি ও শাস্তি এড়াতে আইন মেনে প্রতিটা কাজ করি।
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
ফাহিম ২৫ মার্চ, ২০২০, ৮:০৫ পিএম says : 0
পাবলিক পরীক্ষা আইনে শাস্তি হলে ঐ ব্যাক্তি কি সরকারি চাকরি করতে পারবে বা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হবে কি???
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন